Writing

সালাতের অস্ত্রে সজ্জিত হও

জীবনের টানাপোড়েনে বিধ্বস্ত আপনি। ক্রমাগত হতাশায় ছেয়ে যাচ্ছে আপনার চারিপাশ। আশার আর কোন আলো ই দেখতে পাচ্ছেন না এই বিপদ থেকে উদ্ধারের। এখন কি হবে তাহলে উপায়?
কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে, মিলতে পারে সহজ সমাধান- ভেবে কোন ভাবেই কূল পাচ্ছেন না।
মুসলিম উম্মাহ আজ চরম নিষ্পেষিত। তীব্র চাপা কষ্ট বুকের এক কোণে জমে আছে। কিন্তু আমাদের যেনো কিছুই করার নেই। হাত পা শৃঙ্খলিত।
একটু থামুন…

লা তাহযান!
হতাশ হবেন না। নিশ্চয়ই প্রত্যেকে সমস্যার জন্যেই সমাধান রয়েছে। সমাধান আছে কোরআনে, আছে রাসূলের(সাঃ) সীরাতে.. আসুন, সাড়ে ১৪০০ বছর পিছিয়ে যাই। শেকড়ে ফিরে আঁতিপাঁতি করে খুঁজে দেখি, কোথায় মেলে সমাধান!

সময়টা হিজরী ২য় সন এর রমাদ্বান মাস। ১৭ই রমাদ্বান। স্থান বদরের ময়দান, যা অপেক্ষমান ছিলো একটি ঐতিহাসিক, তাৎপর্যপূর্ণ যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী হবার জন্য। মুখোমুখি দু’পক্ষ দন্ডায়মান। একদিকে আল্লাহর উপর প্রগাঢ় বিশ্বাস ও ভরসা নিয়ে ৩১৩ জনের সমন্বয়ে গঠিত মুসলিম বাহিনী। অন্যদিকে, বাহ্যিক আস্ফালনে উৎফুল্লতা প্রকাশ করতে থাকা প্রায় ১০০০জনের কুরাইশ বাহিনী। কিছুক্ষণ আগে হয়ে গেছে মল্লযুদ্ধ। এবার আক্রমণের পালা। সেনাপতির একটি অংগুলি হেলনে ই শুরু হয়ে যাবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কিন্তু মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি কই?
কোথায় আছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম?

তিনি তাঁর রব্বের সাথে একান্ত কথোপকথনে ব্যস্ত। নামাজে দাঁড়িয়ে গেছেন প্রিয় নবী(সাঃ)। তিনি আল্লাহর কাছে দু’আ করছেন,
“ হে আল্লাহ! তুমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছো তা পূর্ণ করো। হে আল্লাহ। আমি তোমার ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা কামনা করছি।”

যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবার পর যখন তা তুমুল আকার ধারণ করলো, তিনি দু’আ করলেন,
“ হে আল্লাহ! আজ যদি তুমি ঈমানদারদের এ দলটিকে ধ্বংস করে দাও তবে এ জমিনে আর তোমার ইবাদত করার কেউ থাকবে না। হে প্রভু! তুমি কি এটা চাও যে এ জমিনে আর তোমার ইবাদত করা হবে না।”

প্রবল আকুতি নিয়ে আল্লাহর কাছে চাইছেন তিনি। নিমগ্ন হয়ে গেলেন নামাজের মাঝে। যেনো আর কিছুর প্রতি তার কোন খেয়াল নেই।
প্রিয় হাবীবে পাক(সাঃ) এর এ দু’আর জবাব দিতে আল্লাহ বেশি বিলম্ব করলেন না। তিনি আয়াত নাজিল করলেন,

اَنِّیْ مُمِدُّكُمْ بِاَلْفٍ مِّنَ الْمَلٰٓئِكَةِ مُرْدِفِیْنَ
অর্থঃ ‘আমি তোমাদেরকে এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করবো, যারা পর পর আসবে।’
[ সূরা আনফাল, আয়াতঃ৯ ]

সুবহানাল্লাহ! এভাবেই আল্লাহর সাহায্য চলে আসলো এবং মুসলমানেরা মাত্র ৩১৩ জন নিয়েও বিজয় কেতন ওড়ালো। আল্লাহর দ্বীনকে আল্লাহ বিজয়ী করবেন ই।
আমাদের উম্মাহর বর্তমান অবস্থার একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো, আল্লাহর নিকটবর্তী হতে আমরা ভুলে গিয়েছি। রাসূল(সাঃ), তার সাহাবীগণ কতো বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে পরিত্রাণ পেয়েছেন।

অথচ আমরা সেই মহান ক্ষমতাধর স্রষ্টা কে ভুলে গিয়ে নিজেদের অসহায় ভেবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকি..! আমরা এটা ভুলে যাই যে- দুনিয়ার সবার দুয়ার যখন বন্ধ হয়ে যায়, আমার মহান রব্ব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার দরোজা তখনো আমার জন্য থাকে উন্মুক্ত।

বদরের যুদ্ধের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি থেকে কিছু বিষয়ে শিক্ষা পাওয়া যায়।

এক যতো কঠিন পরিস্থিতি ই আসুক না কেনো, সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করতে হবে।
দুই যেকোন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জায়নামাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। আল্লাহকে জানান আপনার সমস্ত অভাবের কথা। ইনশা আল্লাহ, আল্লাহ কল্যাণকর সমাধানের দিকে আপনাকে নির্দেশিত করবেন। আল্লাহ স্বয়ং পবিত্র কোরআনে বলেছেন,

وَ اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِؕ
অর্থঃ “সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও।”
[সূরা বাকারাহ: ৪৫]

মুমিনের সালাতের মাঝে আছে প্রশান্তি। আছে এমন শক্তি, যা দ্বারা অর্জন করা যায় বিজয়। আজ আমরা সেই শক্তিকে ভুলে গিয়েছি। তাই দুর্দশা নেমে এসেছে আমাদের উপর। অতীতের সেই শার্দূল বাহিনী খ্যাত মুসলিমেরা আজ বিশ্বজুড়ে অবহেলিত, নির্যাতিত। জনমনে নেই শান্তির লেশমাত্র। এই ব্যক্তিগত, সামষ্টিক জীবনের সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পেতে হলে সালাতের অস্ত্রকে কাজে লাগাতে হবে।

ইসলামের প্রথম যুদ্ধ! ‘গাজওয়াতুল বদর’! এর মাঝে রয়েছে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা, অনেক নিদর্শন। আল্লাহ বদরের যুদ্ধের ঘটনা গুলো পরিপূর্ণ রূপে জেনে নিজস্ব জীবনে এর শিক্ষাগুলো ধারণ করার তাওফিক দান করুন।
আমীন।

“সালাতের অস্ত্রে সজ্জিত হও”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button