Writing

অসুস্থ অমুসলিম প্রতিবেশীকে দেখতে যাওয়া

বাংলাদেশে আমাদের আশেপাশের অমুসলিম প্রতিবেশী বলতে বুঝায় হিন্দু সম্প্রদায়। গ্রাম, শহর, পাড়া-মহল্লায় মুসলিমের পাশাপাশি অনেক হিন্দু বসবাস করেন। অনেকের সাথে আমাদের সামাজিক সম্পর্ক আছে।
যেমন: কেউ স্বর্ণকার, কেউ নাপিত, কেউ মুদি দোকানদার, কেউ ডাক্তার, কেউ শিক্ষক। বিভিন্ন পেশাজীবী অমুসলিমের সাথে মুসলিমরা সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখেই চলে।

এমন হলো যে, আমাদের স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক প্রদীপ পাল স্যার অসুস্থ, বা আমাদের পাশের বাড়ির ডাক্তার সুস্মিত ভট্টাচার্য অসুস্থ, বা আমরা যে সেলুনে চুল কাটি, সেই সেলুনের নাপিত মদন কুমার অসুস্থ, বা আমাদের ক্লাসমেট বাঁধন অসুস্থ; আমরা তখন কী করবো?
স্বাভাবিকভাবে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেও কিন্তু অসুস্থের পাশে দাঁড়াতে হয়, সেবা করার প্রয়োজন হলে সেবা করতে হয়। মানুষের বিপদের সময় তার পাশে দাঁড়ালে তার মধ্যে একধরণের কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত হয়।

ইসলাম কি এমন ‘সামাজিক দায়িত্ব’ পালনের প্রশ্নে একজন মুসলিমকে বাধা দেয়? নিরুৎসাহিত করে? আমরা দেখে নিই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী করেছেন।
এক ইহুদি বালক ছিলো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদেম। সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে তাকে দেখতে গেলেন তার বাড়িতে। অসুস্থ ইহুদি বালকের মাথার পাশে বসলেন, তার মাথায় হাত রাখলেন।

সে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেদমত করতো। যার ফলে, তার প্রতি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এধরণের মমতাবোধ ছিলো। তিনি বুঝতে পারলেন ছেলেটি মৃত্যুশয্যায়। বেশিক্ষণ হয়তো বাঁচবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, “তুমি ইসলাম গ্রহণ করো।” ইহুদি বালকের সাথে ছিলেন তার পিতা। সে সারাজীবন ইহুদি ছিলো, এখন মৃত্যুর আগে পিতার সামনে পিতৃধর্ম পরিবর্তন করবে?

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ব্যবহার দিয়ে কতো মানুষের মন জয় করেছিলেন। তিনি একজন ইহুদির ঘরে গিয়ে তার ছেলেকে ধর্ম পরিবর্তন করতে বলছেন, স্বাভাবিকভাবে ইহুদি তো তাকে তাড়িয়ে দেবার কথা! কিন্তু না।

সেই ইহুদি ব্যক্তিটি তার ছেলেকে বলছে, “আবুল কাসেমের (নবিজীর কুনিয়াত) কথা মেনে নাও।”
বাবার কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে ছেলে ইসলাম গ্রহণ করলো এবং পরবর্তীতে ইন্তেকাল করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহুদির ঘর থেকে বের হবার সময় বললেন:

“যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তাকে (বালকটিকে) জাহান্নাম হতে মুক্তি দিলেন।”
[সহীহ বুখারী: ১৩৫৬]

এরকমও ধর্ম আছে, সেই ধর্মের ভেতরকার একেক শ্রেণীর কেউ অসুস্থ হলে আরেক শ্রেণীর লোক তাকে দেখতে যায় না, তাকে স্পর্শ করতে চায় না। এতে ধরে নেয়া হয় জাত চলে যায়।
অথচ ইসলাম নিজ ধর্মের কোনো মুসলিম অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়াকে আরেক মুসলিমের কর্তব্য বলেছে, অন্য ধর্মের কাউকে দেখতে যাওয়াকেও অনুমোদন দিয়েছে।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture