Writing

কখন “ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলা শিরক আর কখন জায়েজ

ইয়া রাসুলুল্লাহ’ (হে আল্লাহর রাসূল) বলা জায়েজ কি?
ইয়া রাসুলুল্লাহ অর্থ: হে আল্লাহর রাসূল! এটি উপস্থিত কাউকে উদ্দেশ্য করে সম্বোধন সূচক বাক্য।
যেমন: মানুষ জীবিত উপস্থিত কোনও ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে অথবা যাকে ডাxকলে কথা শুনতে পায় এবং কথার উত্তর দেয় এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলা হয়-ইয়া ফুলান (হে অমুক।)।

রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’কে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা জায়েজ হবে কি?
এ বাক্যটি কখনো কখনো বলা শিরক আর কখনো জায়েজ। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল:

যখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা শিরক

কেউ যদি এ বিশ্বাস থেকে ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ (হে আল্লাহর রাসুল) বলে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহ্বান করলে তিনি কবরে থেকেও তা শুনেন এবং বিপদাপদে সাহায্য করেন। তিনি সর্বত্র হাজির-নাজির, সর্ব শ্রোতা ও সর্ব দ্রষ্টা তাহলে তা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ এগুলো একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। আর আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনও বৈশিষ্ট্য তার মাখলুকের জন্য ব্যবহার করা হলে তাকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করার শামিল-যা শিরকে আকবর (বড় শিরক)।
বরং আমাদের বলা উচিৎ, ইয়া আল্লাহ, ইয়া রাহমান, ইয়া গাফুর, ইয়া কুদ্দুস ইত্যাদি। কারণ একমাত্র আল্লাহই সাত আসমানের উপর থেকে প্রতিটি মাখলুকের ডাক শুনেন এবং তাদেরকে সাহায্য করেন। এটি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর শান। কোনও মাখলুক সৃষ্টি জীবকে আল্লাহ এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেন নি।

ডাকতে হবে কেবল আল্লাহকে; কোনও নবী-রাসূল, ওলি-আউলিয়া, পীর-বুজুর্গ, জিন বা ফেরেশতাকে নয়:
আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ
“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক।”
[সূরা আরাফ: ১৮০]

তিনি আরও বলেন,

ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।”
[সূরা গাফির/মুমিনুন: ৬০]

তিনি আরও বলেন,

وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
“(এবং এই প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে), মসজিদসমূহ আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।”
[সূরা জিন: ১৮]

তিনি আরও বলেন,

وَلَا تَدْعُ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ۖ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ
“আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভালো করবে না-মন্দও করবে না। বস্তুত: তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।”
[সূরা ইউনুস: ১০৬]

তিনি আরও বলেন,

وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ ‎﴿١٣﴾‏ إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَة
“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না।”
[সূরা ফাতির: ১৩ ও ১৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إذَا سَأَلْت فَاسْأَلْ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْت فَاسْتَعِنْ بِاَللَّهِ
“যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে।”
[তিরমিযী: ২৫১৬, হাদিসটি সহীহ (হাসান) বলেছেন।]

এ সকল আয়াও হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, বিপদাপদে সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকতে হবে। কোনও মৃত ব্যক্তি, নবী, ওলি, ফেরেশতা, জিন বা কোনও অদৃশ্য শক্তি ইত্যাদিকে ডাকা যাবে না। অন্যথায় তা বড় শিরকে পরিণত হবে। আর শিরক হল, আল্লাহর নিকট ক্ষমাহীন ইমান বিধ্বংসী সবচেয়ে বড় অপরাধ। কেউ জেনে বুঝে তাতে লিপ্ত হলে, তার জীবনের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত এবং জান্নাত চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যাবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করার পর কোনও বিপদাপদে বা সমস্যা-সংকটে সাহাবি বা তাবেয়িগন কখনও “ইয়া রাসূলাল্লাহ” (হে আল্লাহর রাসূল) বা “ইয়া নাবিয়াল্লাহ”(হে আল্লাহর নবী) বলে সম্বোধন করে তার নিকট সাহায্যের আবেদন করেছেন বলে প্রমাণিত হয় নি।

কখন কখন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলা জায়েজ?

নিম্নোক্ত ক্ষেত্র সমূহে “ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলা দূষণীয় নয়। যেমন:

ক. হাদিসে বর্ণিত কোনও দুআর মধ্যে যদি এ বাক্যটি আসে তাহলে তা পাঠ করতে কোনও সমস্যা নাই। যেমন:
তাশাহুদের দুআয় আমরা বলি, “আসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু” (হে আল্লাহর নবী, আপনার উপর সালাম বর্ষিত হোক)।
হাদিসে যেহেতু এভাবেই বর্ণিত হয়েছে সেহেতু তাতে কোনও আপত্তি নাই।

খ. হাদিসের ইবারতে এ বাক্যটি থাকলে তা পাঠ করতে কোনও আপত্তি নাই। কারণ বহু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সাহাবিগণ ইয়া রাসূলাল্লাহ (হে আল্লাহর রাসূল) বলে সম্বোধন করতেন।
গ. মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের সন্নিকটে উপস্থিতি হয়ে তার উপর প্রতি সালাত-সালাম পেশ করার সময়।

যেমন:
মদিনা জিয়ারাত কারীগণ, তাঁর কবরের সন্নিকটে উপস্থিত হয়ে তাঁকে এবং তার পার্শ্বে শায়িত তার দুই সহচর প্রথম খলিফা আবু বকর রা. এবং ২য় খলিফা উমর রা. এর কবরের উদ্দেশ্য বলে থাকেন,

“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ”,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকর রা.”,
“আস সালাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া উমার রা.।”

এটা অবশ্যই জায়েজ। কারণ এখনে তারা তাদের কবরের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে সালাত ও সালাম পেশ করছেন।

মোটকথা, অন্তরের বিশ্বাস এবং পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলার বিধান বর্তাবে। কখনো তা শিরক হবে আর কখনো জায়েজ।
আল্লাহু আলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture