Q/A

সফরে কসর নামাজের নিয়মাবলী ও বিধিবিধান

আমার প্রশ্ন হল, কসর নামায পড়ার নিয়ম। সময় থাকলে আমি কি জামাতে নামাজ পড়তে পারি?
ভ্রমণের সময় কসর করা কি জরুরী?
যদি কোন ব্যক্তি তার বাসস্থান থেকে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের বা ভ্রমনের নিয়তে বের হয় এবং তার এলাকা অতিক্রম করে তবে সে শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসাফির হয়ে যায়।
[জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ১/৪৩৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৫]

সফরের নিয়তে বের হয়ে নিজ এলাকা পেরুলে সফরের বিধান শুরু হয়। শহরের ক্ষেত্রে ওই শহরের করপোরেশনের নির্ধারিত সীমানা থেকে সফরের সীমা নির্ধারিত হবে। অনুরূপ সফর থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রেও নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের সঙ্গেই তার সফরের বিধান শেষ হয়ে যাবে-
[রদ্দুল মুহতার ২/১২৮]।

আকাশ পথে সফরের ক্ষেত্রেও দূরত্বের হিসাব স্থলভাগে সফরের দূরত্বের পরিমাপে হবে, অর্থাৎ স্থলভাগের ৭৮ কিলোমিটার পরিমাণ দূরত্বের সফর হলে আকাশপথে মুসাফির হবে-
[রদ্দুল মুহতার ১/৭৩৫]

অনুরূপ পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণের ক্ষেত্রে, এটি সমভূমিতে ভ্রমণের মতো হবে, অর্থাৎ পাহাড়ের উঁচু-নীচু ঢালুসহ দূরত্ব গণনা করা হবে-

মুসাফিরের নিয়মাবলী ও বিধিবিধান

মুসাফিরদের জন্য শরীয়ত বিধিমালায় কিছু শিথিলতা রয়েছে, যেমন চার রাকাত সালাত দুই রাকাত ফরজ সালাত আদায় করবে, সফরের সময় রোজা না রেখেও পরে কাযা আদায় করলেও চলবে। অনুরূপ মোজা মাসেহ করা ইত্যাদি বিধানেও সাধারণ অবস্থায় থেকে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

কোন মুসাফির ইচ্ছাকৃত সফরে চার রাকাত নামায পড়লে তা গুনাহ হবে। এমতাবস্থায় নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি সে ভুলবশত চার রাকাত পূর্ণ করে ফেলে, তাহলে সে যদি প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদাহ সাহু আদায় করলে ফরয নামায আদায় হয়ে যাবে, আর যদি সে প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরয সালাত আদায় হবে না। তাকে আবার সালাত আদায় করতে হবে।
[বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১]

মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে সে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে-
[আল মাবসূত, সারাখসী ১/২৪৩]।

মুকিম ব্যক্তি মুসাফির ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতগুলোতে মুসাফির ইমাম সাহেব দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরানোর পর মুকিম মুক্তাদি দাঁড়িয়ে সুরা পড়া ছাড়া বাকি দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিবে।

সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া সালাত মুকিম অবস্থায় কাযা করলে “কসর“ই আদায় করবে, আর মুকিম অবস্থার ছুটে যাওয়া সালাত সফরে কাযা করলে তা পূর্ণ আদায় করবে-
[হেদায়া ১/৮১]

স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাসের বিধান

যদি স্থায়ী বাসস্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়গায় মূল বাসস্থান স্থাপিত হয়, যদি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সেখানে যাওয়ার অভিপ্রায় না হয়, তবে পূর্বের আবাসস্থলটিকে মূল বাসস্থান হিসেবে গণ্য করা হবে না, যদিও সে সেখানে জমির মালিকানা থাকে বা ঘর-বাড়ী ও জায়গার মালিক থাকে, বরং সেখানেও সফরের সীমানা অতিক্রম করে গেলে মুসাফিরই থাকবে এবং কসর আদায় করবে।
[আল মাবসূত, সারাখসী ১/২৫২]

যদি সে কোনো স্থানে ১৫ দিন বা তার বেশি সময় অবস্থান করতে চায় বা নিয়ত করে তবে সে সেখানে মুকিম হয়ে যাবে। সেখান থেকে সামানা-পত্রসহ প্রস্থানের আগ পর্যন্ত সেখানে পূর্ণ নামাজ পড়বে এবং মুকিমের বিধান জারি থাকবে-
[বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪]

মেয়েরা বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী আবাস হিসেবে বাবার বাড়িতে মুকিম থাকবে।

কিন্তু বিয়ের পর যদি সে মেয়ে তার স্বামীর বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে এবং তার পিতার বাড়িতে বেড়াতে যায়, তাহলে তার স্বামীর বাড়ি হবে তার মৌলিক বাসস্থান এবং তার পিতার বাড়িতে মুসাফির থাকবে, এবং যদি সে প্রধানত তার পিতার বাড়িতে থাকে এবং সে তার স্বামীর বাড়িতে যায় তাহলে সে মেয়ে তার স্বামীর বাড়িতে মুসাফির হবে যদি তার পিতার বাড়িতে মৌলিকভাবে থাকে।
[আল বাহরুর রায়েক ২/১২৮, রদ্দুল মুহতার ২/১৩১]

এবং যদি পুরুষরা তার শ্বশুর বাড়িতে ১৫ দিনের কম থাকার ইচ্ছা করে তবে সে একজন মুসাফির থাকবে। হ্যাঁ, কোন পুরুষ যদি শুশুরবাড়িতে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে সেটা ভিন্ন কথা।

মুসাফিরের সুন্নাতের বিধান

কোন মুসাফির তার চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়ো থাকলে ফজরের সুন্নাত সালাত ছাড়া অন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায় করতে হবে বা পড়তে হবে।
[এ’লাউস্ সুনান ৭/১৯১, রদ্দুল মুহতার ১/৭৪২]

والله اعلم بالصواب

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture