শবে কদর ও রামাদানের শেষ ১০টি রাত কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ
শবে কদর ও রামাদানের শেষ ১০টি রাত কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ?
এই রাতগুলোকে আমাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা উচিত?
রামাদানের শেষ দশটি রাতের কোনো একটি রাতে কদর সংঘটিত হয়।
Table of Contents
শেষ দশকে নবিজির ব্যস্ততা
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমাদানের) শেষ দশকে (ইবাদতের জন্য) যে চেষ্টা-সাধনা করতেন, অন্য কোনো সময়ে সে পরিমাণ সচেষ্ট হতেন না।’1
পরিবারকেও ইবাদতে শামিল রাখা
আয়িশা (রা.) আরো বলেন, ‘যখন রামাদানের শেষ দশক আসতো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিধেয় বস্ত্রকে শক্ত করে বাঁধতেন, রাত জাগতেন (ইবাদত করতেন) এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’2
তাই, শেষ দশকে শুধু নিজে ইবাদতে মশগুল না হয়ে পরিবারের সদস্যদেরও শামিল রাখা উচিত। তাদেরকে জাগিয়ে দিলে, তারাও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বেন এবং অন্যান্য ইবাদত করবেন।
ইতিকাফ: কদরের রাতপ্রাপ্তির মহাসুযোগ
রামাদানের শেষ দশকে ইতিকাফের অন্যতম একটি কারণ হলো, লাইলাতুল কদর তালাশ করা। কারণ, যে ব্যক্তি রামাদানের শেষ দশটি দিন ও দশটি রাত উত্তমভাবে মসজিদের নির্জন পরিবেশে আল্লাহর ইবাদতে কাটাবে, সে ইনশাআল্লাহ্ সহজেই মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য হাসিল করে ধন্য হতে পারবে।
এই প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে—
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি (রমাদানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করে এ মহান রাতটি খুঁজলাম, এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। অতঃপর আমার কাছে (ফেরেশতা) আসলেন। আমাকে বলা হলো, এ রাতটি শেষ দশকে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই (শেষ দশকে) ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন ইতিকাফ করে।’’3
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মৃত্যু দেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি রামাদানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর (ইন্তিকালের) পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন।’4
যাদের পক্ষে সম্ভব, তাদের অবশ্যই ইতিকাফ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। কারণ ইতিকাফ করলে লাইলাতুল কদর নসিব হওয়ার প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। আর, জীবনে যদি কদরের একটি রাতও সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে এটি নিজের আমলনামার জন্য মহাসৌভাগ্যের সোপান হবে, ইনশাআল্লাহ। যারা ১০ দিনের সুন্নাত ইতিকাফ করতে পারবেন না, তারা শুধু রাতের বেলায় (মাগরিব থেকে ফজর) নফল ইতিকাফ করতে পারেন।
ভাগ্যরজনী: লাইলাতুল কদর
প্রতি কদরের রাতে আগামী এক বছরের যাবতীয় সিদ্ধান্ত হয়। তাই, এটিকে ‘ভাগ্যরজনী’ বলা হয়। যদিও সমাজে ভুল প্রচলন রয়েছে যে, শবে বরাত ভাগ্যরজনী। এটি সঠিক নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘
‘লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ এবং রুহ (জিবরাইল) তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে সকল বিষয় (সিদ্ধান্ত) নিয়ে অবতরণ করেন। শান্তিময় সে রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’’5
কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ্ বলেছেন,
‘‘এতে (এই রাতে) প্রত্যেক বিষয় স্থিরকৃত (সিদ্ধান্ত) হয়।’’6
কদরের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া
আনাস (রা.) বলেন, রামাদান শুরু হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘রামাদান মাস তোমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ (রাত) থেকে বঞ্চিত হলো, সে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। শুধু বঞ্চিতরাই এর কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকে।’’7
মিনহাজুল কাসিদিন (১/৩৪৩) কিতাবে এসেছে,
‘মর্যাদাপূর্ণ দিন ও রাতগুলো থেকে উদাসীন থাকা উচিত নয়, কেননা ব্যবসায়ী যদি লাভের মৌসুমেই উদাসীন থাকে, তাহলে সে কখন লাভবান হবে?’
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৭৮ ↩︎
- ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২০২৪ ↩︎
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৬১ ↩︎
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৭৪ ↩︎
- সুরা ক্বাদর, আয়াত: ৩-৫ ↩︎
- সুরা দুখান, আয়াত: ০৪ ↩︎
- ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৬৪৪; হাদিসটি হাসান সহিহ ↩︎