Writing

রবের সাথে কথোপকথন

একদিন মসজিদে এশার নামাজের সময় সামনের কাতারে বসে ছিলাম। একটু আনমনা হয়ে ভাবনার মধ্যে কি জানি ভাবতে ছিলাম। হঠাৎ নম্র সূরে কে জানি সালাম দিয়ে মুসাফা করার জন্য হাত দুটো বাড়িয়ে দিলো। হাত দুটো দেখে চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এক টগবগে যুবক। অবশ্যই পূর্বের এতটা ঘনিষ্ঠ পরিচিত ছিল না, এমনে মুসল্লী হিসাবে দুয়েকবার সালাম দেওয়া নেওয়া হয়েছিল। আমি আবার একটা নেশায় আসক্ত কোন দ্বীনদার, সুন্দর নামাজীদের সাথে পরিচিত না হয়ে পারতাম না। একটা টার্গেট সবসময় রাখতাম কিভাবে পরিচিত হতে পারি! এই যুবকটাও এই লিষ্টে ছিল। খুশি লাগছিল এটা ভেবে সে নিজ থেকে এসেছে হয়তো পরিচিত হতে।

এরই মধ্যে মোয়াজ্জেম সাহেব ইকামাত দেওয়া শুরু করে দেন। সবাই নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। বলে রাখি আমি যে মসজিদে নামাজ পড়ি ওখানে এশার নামাজটা খুব একটু দীর্ঘ হয় আর তিলাওয়াত খুবই আন্তরিক। নামাজ শুরু হয়ে গেল। তেলাওয়াতে যেন হারিয়ে যেতে মন চাইছে। কিছুক্ষণ পর তিলাওয়াতের সাথে আরেকটা কিসের যেন সুর মিশ্রিত হতে লাগলো। কিসের সুর এটা?
যে সুর এতো মধুময় তিলাওয়াত থেকে মন গুড়িয়ে নিচ্ছে। এই সুর যেন খুব পরিচিত, তবে বহুদিন ধরে তার কাছে যাওয়া হয়নি। তিলাওয়াতের গভীরতা কেন জানি আরও বেড়ে গেল। কি এই অচেনা সুর?
কি করে ডুকে গেল অন্তরের গহীনে?

কিছুক্ষণ মনে হয় ডানপাশ থেকে আসছে এই সুর আবার মনে হয় না, এটা শিওর বামপাশ থেকে আসছে। এসব মাথা থেকে ছেড়ে চাইছি নামাজে মনোযোগ দিতে, তবুও পারছি না তাকে এড়িয়ে যেতে। এই অচেনা সুরে একটু মনোযোগ দিতে গিয়ে বুঝে আসছে, এতো কে জানি কেঁদে কেঁদে সব আকুতি গুলো বলছে রবের কাছে। এটা কান্না আওয়াজ বুঝে আমি পুরো হতভম্ব হয়ে আছি। কে এই রবের গোলাম?
যে সব চাওয়া গুলো কেঁদে কেঁদে ছেয়ে নিচ্ছে রবের কাছে। খুব ইচ্ছে করছে একটু তাকিয়ে দেখি কে এই ভাগ্যবান?
যার রবের ভয়ে অশ্রু ঝড়ে এই জন মজলিসে। যদি চিনতে পারি নামাজ শেষে একটু বলিব ভাই তোমার দোয়াই একটু কি আমায় রাখিবে?
একটু বলো না তোমার রবকে আমার অন্তরটাও একটু তোমার মতো নরম করে দিতে।

আমি বেখেয়াল হয়ে পড়েছি কিন্তু নামাজের জন্য পারছি না তাকে খুঁজতে। সিজ দাতে যখন লুটে পড়ি আল্লাহর কুদরতি পায়ে, আবেগী যারা তারা কি আর পারে কন্ট্রোল করতে! নিরবতার মধ্যে স্পষ্ট আওয়াজ এসে কানে কানে বলে গেছে পাশের তরুণ ভাইটি। আহ এই তরুণ ভাইয়ের কেমন মধুময় সম্পর্ক রবের সাথে। সে কিসের ভয়ে কাঁদছে এতো পাগল পারা হয়ে? সেটা কি নয় ভয়াবহ দিনের কথা ভেবে?

এখন অপেক্ষার পালা নামাজ শেষে তার সাথে একটু আলাপ করিব। সালাম ফেরানোর সাথে সাথে তাকালাম তাহার দিকে। দেখে আমি খুব অবাক হয়ে পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়িলাম। কারণ তার চেহারায় দেখিনি কোন কান্নার চাপ। যেন মনে হলো তার এই চোখ দিয়ে বিগত কয়েক বছর জল পড়েনি। ভাবতে লাগলাম মনে হয় এই কাঁদেনি। কিন্তু আমি তো স্পষ্ট শুনেছি। হঠাৎ টাইলসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কয়েক ফোটা জল পড়ে আছে টাইলসে। এবার খুব অবাক করিল সে আমায়, সে তার রবের সাথে কথোপকথন লোকাতে চাই সবার কাছে এটা ভেবে। ভাবলাম যেহেতু সে বুঝতে দিচ্ছে না কাউকে, তাহলে কি ঠিক হবে আমার চাওয়া তাকে বলতে?
নিরবে চুপসে গেলাম একতা ভেবে।

ভাইটি যখন চলে যায়, আমি তার স্থানে বসে টাইলসে পড়ে থাকা জলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম না জানি এই কয়টি চোখের পোঁটা জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তার উপর কত সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন।

লিখেছেন

হে আল্লাহ সেই সম্মানোত্তরে অন্তর্ভুক্ত করে দাও যে সম্মান তুমি দিয়েছ তোমার প্রিয় মুমিনদের

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture