খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী

আজ, খাদিজা (রাঃ) কে নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইসলামের ইতিহাসে তিনি অনেক দিক থেকেই প্রথম ছিলেন, বিশেষ করে নয়টি দিক থেকে। রাসুল (সাঃ) এর সাথে পরিচয় ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনার আগে, তাঁকে সমর্থনের আগে (যা আমাদের নবীর জীবনে নিদারুন ভাবে প্রয়োজন ছিল) জাইদ ইবনে আউয়াম ও তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ও তাঁদের ভূমিকার দিকটাও কিছুটা আলোচনা করা হবে। খাদিজা (রাঃ) এর জীবন সংক্রান্ত কিছু খুঁটিনাটি বিষয় এই আলোচনায় আসবে।

রাসুল (সাঃ) বলেন, “মারিয়াম (আঃ) ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মহিলা, আর খাদিজা (রাঃ) ও ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মহিলা।” যারা বিশ্বাসে ও চরিত্রে পূর্ণতা এনেছিলেন, খাদিজা (রাঃ) তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

যিনি আল্লাহর নির্বাচিত নবী নন, তাঁর পক্ষে বিশ্বাসে পরিপূর্ণতা আনা কিন্তু সহজ কথা নয়। পরবর্তী পর্ব গুলোতে তাঁর বংশ পরিচয়, রাসুল (সাঃ) এর সাথে পরিচয় হওয়ার আগের জীবন, রাসুল (সাঃ) এর সাথে পরিচয় ও বিয়ের পর তাঁকে একনিষ্ঠ ভাবে সমর্থন, রাসুল (সাঃ) এর সাথে তাঁর জীবন সংগ্রাম, তাঁর মৃত্যুমৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর স্মৃতিচারণ, এই ব্যাপার গুলো আলোকপাত করা হবে।

বংশ পরিচয়:

তাঁর বংশ পরিচয় হলো, তিনি খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ ইবনু আসাদ ইবনু আব্দুল উজ্জা ইবনু কুসাই ইবনু কিলাব। কুসাই ইবনু কিলাব থেকে উপরের দিকে তাঁর এবং রাসুল (সাঃ) এর বংশ পরম্পরা এক ছিল, তারপর তাঁরা পৃথক হয়ে যান কুসাই থেকে আব্দুল উজ্জার মাধ‍্যমে। আর সেই বংশেই জন্ম নেন খাদিজা (রাঃ)।

তাঁর বাবা খুয়াইলিদ ছিলেন আসাদের ছোট ছেলে, আর আসাদের বড় ছেলের নাম ছিল নাওফল। ওয়ারাকা হলেন নাওফলের বড় ছেলে, আর খাদিজা হলেন খুয়াইলিদের ছোট মেয়ে। কাজেই বুঝা যাচ্ছে ওয়ারাকার সাথে খাদিজা (রাঃ) এর বয়সের পার্থক্য ছিল অনেক। তাঁদের বয়সের ব্যাবধান ছিল প্রায় বিশ/পঁচিশ বছর। ওয়ারাকা তাঁর চাচাতো ভাই হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জীবনে মুরুব্বির ভূমিকা পালন করেছিলেন, ঠিক যেন চাচার মতো। খুয়াইলিদ ছিলেন বানু আসাদের প্রধান।

সূরা ফীল এ কাবাকে রক্ষা প্রসঙ্গে যে কাহিনী রয়েছে, সেই রক্ষাকারীদের মধ্যে আব্দুল মুত্তালিবের সাথে তিনিও ছিলেন। আব্রাহা ইয়ামেন থেকে এসেছিল কাবা ধ্বংস করার জন্য। আব্রাহার মৃত্যুর পর যখন সাইফ ইবনে দিয়াযান শাসক হলেন, তিনিও আব্দুল মুত্তালিবের সাথে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন তাকে অভিনন্দন জানাতে। খাদিজা (রাঃ) এর বাবা খুয়াইলিদ ও রাসুল (সাঃ) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন ঘনিষ্টজন। রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পর তাঁর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কারণ তাঁর বাবা তাঁর জন্মের আগেই মারা গিয়েছিলেন।

খুয়াইলিদ এবং আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন সমসাময়িক। দুই জনই বলতে গেলে অল্প বয়সেই মারা গেছেন। খুয়াইলিদ আল ফিজাল যুদ্ধের শেষ সপ্তাহে মৃত্যু বরণ করেন। খাদিজা (রাঃ) এর মায়ের নাম ছিল ফাতিমা বিন জায়েদা। খাদিজা (রাঃ) ও রাসুল (সাঃ) এর এক মেয়ের নামও তাঁর নাম অনুসারে রাখা হয়েছিল। রাসুল (সাঃ) এর দাদীর নাম ও ছিল ফাতিমা।

তার এক বিখ্যাত ভাই হলেন আউয়াম, যিনি আজ জুবাইরের বাবা ছিলেন। যে দশ জন লোককে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, আজ জুবাইর তাদের একজন। তিনি ছিলেন খাদিজা (রাঃ) এর ভাগিনা। তাঁর আরেক বিখ্যাত ভাই হিজাম, যিনি হাকিম ইবনে হিজামের বাবা ছিলেন। তিনি রাসুল (সাঃ) এর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মক্কার জীবনের অনেক সীরাতে তাঁর নাম উল্ল‍্যেখ আছে।

খাদিজা (রাঃ) এর এক বোন হলেন হালা বিনতে খুয়াইলিদ, যার ছেলে আল আস এর সাথে বিয়ে হয়েছিল খাদিজা (রাঃ) ও রাসুল (সাঃ) মেয়ে জয়নাবের।

(চলবে, ইন শা আল্লাহ্ )

ডঃ ওমর সুলাইমান

Exit mobile version