Writing

খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী 2 পর্ব

রাসুল (সাঃ) এর সাথে পরিচয়ের পূর্বের জীবন। খাদিজা (রাঃ), রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পঁনেরো বছর আগেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে খাদিজা (রাঃ) এর জন্ম, আর রাসুল (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময়ে যেই নাম গুলো প্রচলিত ছিল, সেই তুলনায় খাদিজা নামটি ছিল ব্যাতিক্রম। ঠিক তেমনি ভাবে, মুহাম্মদ (সাঃ) নামটিও ছিল অনন্য। খাদিজা নামের অর্থ অকালে বা সময়ের আগে জন্মগ্রহণ।

নির্ধারিত সময়ের আগেই তাঁর জন্ম হয়েছিল। আবার কোনো কোনো আলেম মনে করেন, তিনি তার যুগের তুলনায় অগ্রবর্তী ছিলেন। তিনি ছিলেন সুন্দরী, বিদুষী, শিক্ষিতা, মার্জিত পোষাকে সুসজ্জিতা, তীক্ষ্ণ, সুচরিত্রা, ভালো ব্যবহারের অধিকারী এবং মক্কার সবচেয়ে অভিজাত মহিলা

রাসুল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) এর মতো, তিনিও মূর্তি পূজা করেন নি। সম্ভবত, তাঁর চাচাতো ভাই নাওফাল বিন ওয়ারাকার কিছুটা প্রভাব তাঁর উপর ছিল। ইসলামের পূর্বে, তাঁর ডাকনাম ছিল তাহিরাহ, যার অর্থ পবিত্র এবং তা তাঁর চরিত্রের সাথে মানিয়ে যায়। তিনি কখনো গীবত করেন নি, মিথ্যা বলেন নি, কাউকে কষ্ট দেন নি। তাঁর উপস্থিতি ছিল মৃদু ও সৌহার্দ‍্যময়। আভিজাত্য, সৌন্দর্য, ও সম্পদ সব থাকা সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন বিনয়ী।

তাঁর প্রথম স্বামীর নাম ছিল আবু হালা ইবনে জুরারা আত তামিমী, যার ঘরে তাঁর দুই ছেলের জন্ম হয় – হালা এবং হিন্দ। সীরাতে হিন্দ নামে অনেককেই (মহিলা/পুরুষ) পাওয়া যায়। তাঁর বড় ছেলে হিন্দ ইবনু আবু হালা, রাসুল (সাঃ) এর দৈহিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট‍্যের সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে যারা বর্ণনা করেছেন, হালার বর্ণনা তাদের মধ্যে অন্যতম। হিজরতের পরেও তিনি ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি বেঁচে ছিলেন খাদিজা (রাঃ) ও রাসুল (সাঃ) এর মৃত্যুর পরও। খাদিজা (রাঃ) এর প্রথম স্বামী আবু হালার মৃত্যুর পর, আতিক ইবনে আইজ আল মাখজুমির সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয় এবং সেই ঘরে তাঁর এক মেয়ে, তার নামও হিন্দ এবং আব্দুল উজ্জাহ নামে এক ছেলের জন্ম হয়। মূর্তি পূজার কারণে নয়, বরং দাদার নাম অনুসারে তার এইরূপ রাখা হয়েছিল।

মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে খাদিজা (রাঃ) দুই বার বিধবা হলেন। দ্বিতীয় বার বিধবা হওয়ার পর, পরবর্তী পঁনেরো বছর তিনি বিয়ে করেন নি। বানু মাখযুম ধনাঢ্য গোত্র হিসাবে পরিচিলত ছিল। আবু জাহাল ও খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এই গোত্রেরই, তারা ছিল সমাজে ক্ষমতাশালী ও ধনী ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। পঁচিশ বছর বয়সে খাদিজা (রাঃ) যখন দুবার বিধবা হলেন, তিনি তাঁর বাবা, মা দুজনের সম্পত্তিই উত্তরাধিকার সূত্রে পেলেন, আরো পেলেন দুই স্বামীর সম্পত্তি, যারা দুজনেই ছিলেন ধনী। উপরন্ত তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিমতী ব্যাবসায়ী।

তিনি কুরাইশদের মধ্যে শুধু অন্যতম ধনীই ছিলেন না, তাঁর যত উটের কাফেলা ছিল, তা সমস্ত কুরাইশদের সমান ছিল। মাঝে মাঝে, বাণিজ্য পথে তিনি ৮০০ উটের কাফেলাকে মালামাল দিয়ে সিরিয়া ও ইয়েমেন পাঠাতেন। তিনি ছিলেন সম্পদশালী ও ধনাঢ্য মহিলা

তাঁর কয়েকটি ডাক নাম ছিল, ‘আমিরাতু কুরাইশ’ অর্থ কুরাইশদের রাজকন্যা, ‘সায়েদাতু নিসা আল কুরাইশ’ অর্থ কুরাইশ মহিলাদের নেত্রী, ‘খাদিজাতুল কুবরাহ’ অর্থ মহান খাদিজা। তাঁর আরো একটি বিশেষ ডাকনাম হলো তাহিরা, বেড়ে উঠার সময় তাঁকে প্রায়শই এই নামেই ডাকা হতো। তাঁর বাসার ছাদের উপর সবুজ সিল্কের কাপড়ের প্যাভিলিয়ান ছিল। এটা তাঁর সম্পত্তির নিদর্শন নয়, বরং গরিবরা অভাবে পড়লে তাঁর কাছে আসতে পারবে, এটা ছিল তাঁরই নিদর্শন। এর মাধ‍্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন, তিনি অকাতরে সম্পত্তি ব‍্যায় করেন দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও অসুস্থদের জন্য। তিনি দরিদ্রদের বিয়েতে মাহার দিয়ে সাহায্য করতেন। কিছু বর্ণনায় এসেছে, তাঁর ৪০০ ও বেশি ক্রীতদাশ ছিল।

তাঁর বিনয় ও দানশীলতার কারণে সমাজে তাঁর বিশেষ অবস্থান ছিল। তিনি ব্যাবসায়ীদের নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য পথে তাদের সিরিয়া ও ইয়েমেনে পাঠাতেন। অনেক সময় পণ্য কম পেলে, তিনি বুঝতে পারতেন, তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। তিনি নিজে কখনো সিরিয়া ও ইয়েমেনে যান নি। তাই তিনি একজন সৎ ব্যাবসায়ী খুঁজছিলেন, যাকে তিনি বাণিজ্য পথে বিশ্বাস করতে পারেন।
(চলবে, ইন শা আল্লাহ)

ডঃ ওমর সুলাইমান

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture