Q/AAbdullahil Hadi

ইসলামের দৃষ্টিতে পাকা চুলের মর্যাদা

ইসলামের দৃষ্টিতে পাকা চুলের মর্যাদা এবং এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা
পাকা চুল হল, মুমিন ব্যক্তির জীবনে গৌরব, সৌন্দর্য এবং বিশেষ মর্যাদার প্রতীক। এই শুভ্রতা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এক বিশেষ নিয়ামত যা একজন মুসলিমের জীবনে এনে দেয় স্থিরতা ও গাম্ভীর্য। এটি মানুষের জীবনের পরিণত বয়সে উপনীত হওয়ার আলামত। এছাড়া সামাজিকভাবেও বয়স্ক মানুষ আমাদের মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র।

আর ইসলামেও এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিসের আলোকে কোনও মুসলিম যদি ইসলামের উপর জীবন পরিচালিত করে এবং এ অবস্থায় তার চুল পেকে যায় অর্থাৎ পরিণত বয়সে উপনীত হয় তাহলে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। আর তা হল, প্রতিটি পাকা চুলের বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি করে নেকি লেখা হয়, একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি করে গুনাহ মোচন করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহ শীল, পরম দয়ালু ও ক্ষমাপরায়ন।

নিম্নে পাকা চুলের মর্যাদা প্রসঙ্গে দুটি হাদিস উল্লেখ করা হল:

প্রথম হাদিস:

আমর ইবনে শুআইব রা. তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

الشَّيْبُ نُورُ المُؤْمِنِ، لاَ يَشِيبُ رَجُلٌ شَيْبَةً فِي الإِسْلاَمِ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ بِكُلِّ شَيْبَةٍ حَسَنَةٌ، ورُفِعَ بِهَا دَرَجَةً
“পাকা চুল (বা বার্ধক্যের শুভ্রতা) হল, মুমিনের নূর (জ্যোতি)। ইসলামের মধ্যে থেকে কোনও ব্যক্তি যে একটিও চুল পাকায় তার প্রতিটি পাকা চুলের বিনিময়ে তার জন্য একটি করে নেকি লেখা হয় এবং এর দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।”
[সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং ৩১১]

দ্বিতীয় হাদিস:

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

: لاَ تَنْتِفُوا الشَّيْبَ، فَإِنَّهُ نُورٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ شَابَ شَيْبَةً فِي الْإِسْلاَمِ كُتِبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةٌ، وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةٌ، وَرُفِعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ
“তোমরা পাকা চুল উপড়ে ফেলো না। কারণ এটি কিয়ামতের দিন নূর (জ্যোতি)। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে থেকে একটিও চুল পাকায়, তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি লেখা হয়, একটি গুনাহ মোচন করা হয় এবং এর দ্বারা তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নীত করা হয়।”
[বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, ৫/২০৫, হাদিস নং ৬৩৮৭, এবং ইমাম আলবানি এটিকে হাসান বলেছেন, সিলসিলা সাহীহা, হাদিস নং ১২৪৩। আবু দাউদও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, কিতাবুত তারাজ্জুল, বাব ফী নাতিফিশ শাইব, ৪/৮৫, হাদিস নং ৪২০২]

উক্ত হাদিস থেকে আমরা আরেকটি বিষয় পাই্। তা হল, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সম্মানিত প্রতীককে সম্মান করতে শিখিয়েছেন। তিনি উক্ত মাথা বা দাড়ি থেকে পাকা চুল তুলে ফেলতে নিষেধ করেছেন।

অন্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই শুভ্রতাকে লুকিয়ে না রেখে বরং সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে এর প্রতি যত্ন নিতে উৎসাহিত করেছেন:। তিনি হেনা (মেহেদি) এবং কাতাম (এক ধরনের প্রাকৃতিক হলুদ রং) এর মতো উপাদান ব্যবহার করে পাকা চুল পরিবর্তন বা রং করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি কালো রং ব্যবহার করে চুল রং করতে নিষেধ করেছেন। এর মূল কারণ হল, কালো রং বার্ধক্যকে সম্পূর্ণরূপে গোপন করে ফেলে যা অন্যকে ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণার শামিল।

হাদিসের এসব নির্দেশনার মাধ্যমে মূলত বার্ধক্যকে যথাযোগ্য সম্মান জানাতে এবং যারা ইসলামের পথে অবিচল থেকে পরিণত বয়সে পৌঁছেছেন তাদের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

আল্লাহ আমাদেরকে মৃত্যু অবধি ইসলামের উপর জীবন পরিচালনার তওফিক দান করুন। আমিন।

আল্লাহু আলাম।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button