ইনশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ সুবহানাল্লাহ শব্দ সমুহের সঠিক উচ্চারণ
ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ—শব্দ সমুহের সঠিক উচ্চারণ, লেখ্যরীতি ও বিভ্রান্তি নিরসন। আমরা অনেকেই `Inshallah’ একত্রে লিখি যার অর্থ: “আল্লাহকে সৃষ্টি করা।” বরং লিখতে হবে এভাবে লিখতে হবে “In shaa allah”—এটা কি সঠিক?
এই ব্যাখ্যা সঠিক নয়। ইনশাল্লাহ/ Inshallah অর্থ: “আল্লাহকে সৃষ্টি করা”-এটা ভুল অর্থ।
প্রকৃতপক্ষে আরবিতে ‘ইনশাল্লাহ’ এর কোনও অর্থ নেই। বরং ইনশাউল্লাহ/ Inshaullah/ ِإِنْشَاءُ الله অর্থ: আল্লাহর সৃষ্টি, রচনা, লিখন, গঠন ইত্যাদি।
যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّا أَنشَأْنَاهُنَّ إِنشَاءً
“আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।”
[সূরা ওয়াকিয়া: ৩৫]
আর ইনশাইল্লাহ/Inshaillah/ َإنْشَئِ الله [এটি فعل الأمر বা অনুজ্ঞাসূচক ক্রিয়া] অর্থ: আল্লাহকে সৃষ্টি করো, গঠন করো ইত্যাদি।
এত:এব `Inshallah’ অর্থ: “আল্লাহকে সৃষ্টি করা”—এমন ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে সমস্যায় ফেলা সমীচীন নয়।
হ্যাঁ, লেখার ক্ষেত্রে বিশুদ্ধভাবে লেখার চেষ্টা করা কর্তব্য। আর তা এভাবে লেখা:
– ইনশাআল্লাহ/ InshaAllah/إِنْ شَاءَ اللهُ
– অথবা ইনশা-আল্লাহ/ Insha-Allah
– অথবা “In shaa-Allaah”
এর অর্থ: “আল্লাহ যদি চান।”
তবে কেউ যদি অজ্ঞতা বশত: ইনশাল্লাহ/ Inshallah লিখে ফেলে তাহলে তা অবশ্যই বানানগত ভুল। তবে এ কারণে ‘আল্লাহকে সৃষ্টি করা’র মত অর্থ প্রকাশিত হয় না।
সুতরাং এভাবে লিখলেও গুনাহ হবে না। তবে জেনে-বুঝে এভাবে লেখা উচিৎ নয় বরং তা বিশুদ্ধভাবে লেখার চেষ্টা করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, কুরআন ছাড়া সাধারণ কথাবার্তায় তাজবিদের সব নিয়ম-কানুন অনুসরণীয় নয়। সুতরাং আরবিতে إِنْ شَاءَ اللهُ বাক্যটিতে তিনটি শব্দ পৃথক পৃথক লেখা হলেও বাংলা বা ইংরেজিতে সেগুলো পৃথক পৃথক লেখা আবশ্যক নয়। অনুরূপভাবে এখানে মাদ্দে মুত্তাসিল (চার আলিফ টান) বা ইখফা (যেমন: ইং শাআল্লাহ) এর উচ্চারণ প্রকাশ করাও জরুরি নয়।
তবে মুখে উচ্চারণের সময় ‘শা’ এর পরে সর্ব নিম্ন এক আলিফ পরিমাণ টেনে পড়তে হবে। কারণ এটা আরবির ভাষাগত স্বাভাবিক উচ্চারণ।
আল্লাহু আলাম।
অনেকে `মাশাআল্লাহ’ কে `মাশাল্লাহ’ লেখে। তা কি সঠিক হবে?
সঠিক উচ্চারণ: ‘মাশাআল্লাহ’/MashaAllah/مَا شَاءَ اللَّهُ
অর্থ: “আল্লাহ যা চেয়েছেন।”
তাই এভাবেই লিখতে হবে। তবে কেউ সঠিক নিয়মটি না জানার কারণে ‘মাশাল্লাহ’ বা ‘মাশাল্লা’ বললে বা লিখলে তাতে গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। কারণ তা আরবি ভাষাগতভাবে অশুদ্ধ হলেও তাতে অর্থগত বিকৃতি সৃষ্টি হয় না।
জিকির করার সময় কী বলতে হয় ‘সুবাহান-আল্লাহ’ না কি ‘সুবাহানাল্লাহ’
সঠিক উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লা-হ বা সুবহানাল্লাহ/Subhanallah/سُبْحَانَ اللّهِ
অর্থ: “আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।”
তবে ‘সুবহান-আল্লাহ’ আরবি ভাষা রীতি অনুযায়ী অশুদ্ধ হলেও যেহেতু অর্থগত কোন বিকৃতি সৃষ্টি হয় না তাই তাতে গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, ‘ইনশা-আল্লাহ’, ‘সুবহা-নাল্লাহ’, ‘মাশা-আল্লাহ’ শব্দগুলো কুরআনের আয়াতের অংশ। তাই কুরআন তিলাওয়াতের সময় সেগুলো তাজবিদ ও মাখরাজের নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করে বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।