Q/AAbdullahil Hadi

হোমিওপ্যাথি ঔষধ ব্যবহারের শরঈ বিধান

হোমিওপ্যাথি মেডিসিন কি হারাম?
কারণ এতে সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল মেশানো থাকে।
হোমিওপ্যাথি (homeopathy) ওষুধে প্রিজারভেটিভ তথা তার পচন রোধ ও কার্যকারিতা হ্রাস না হওয়ার জন্য খুবই সামান্য মাত্রায় অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়-যা ওষুধ সেবনকারীর মধ্যে কোন প্রভাব ফেলে না।

সুতরাং তা ব্যবহারে কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ। বিশেষ করে যখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নির্দেশনা ক্রমে রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য তা ব্যবহার করা জরুরি হয়ে পড়ে।

অ্যালকোহল তখনই হারাম হবে যখন তা মানুষের মস্তিষ্কের বিকৃতি সাধন করে। বিশেষজ্ঞগণ বলেন, সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহল (৫%) যদি পানি বা ঔষধে মেশানো হয় তাহলে তার কোনো প্রভাব অবশিষ্ট থাকে না। আর মদ হারাম হওয়ার মূল কারণ হলো, মস্তিষ্কের বিকৃতি সাধন। যখন এই কারণটিই অনুপস্থিত থাকবে তখন তার উপর মদের বিধান প্রযোজ্য হবে না।

তবে সংশয় থেকে বাঁচতে এর বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে তা ব্যবহার না করাই ভালো।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে অ্যালকোহলমুক্ত ওষুধ পাওয়া এক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রায় সব ওষুধেই অ্যালকোহল মেশানো হয়। কিন্তু বিষয়টি কেবল পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ওষুধের সঙ্গে অ্যালকোহল মেশানোর এ সমস্যা আজ প্রায় ইসলামি দুনিয়ার সব দেশেই বিদ্যমান।”

এ প্রসঙ্গে আল্লামা রমলি রহ. (তিনি জুনিয়র শাফেয়ী হিসেবে পরিচিত, মৃত্যু ১০০৪, মিশর) লিখেছেন: “এমন মাদকদ্রব্য, যা অন্য ওষুধের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে তার প্রকৃত অস্তিত্ব নিঃশেষ হয়ে গেছে, এজাতীয় ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করা বৈধ। যেমন—অন্যান্য নাপাক বস্তুর ক্ষেত্রেও একই বিধান রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, চিকিৎসাশাস্ত্রে ওই ওষুধের দ্বারা রোগ নিরাময় প্রমাণিত হতে হবে, কিংবা পরহেজগার কোনো ডাক্তারকে ওই ওষুধের উপকারিতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত করতে হবে। এরই সঙ্গে ওই ওষুধ ছাড়া রোগ নিরাময়ের আর কোনো বিকল্প পবিত্র ওষুধ না থাকতে হবে।” [নিহায়াতুল মুহতাজ : খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা : ১২] [উৎস: কালের কণ্ঠ-অনলাইন ভার্শন]

ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ (রাবেতা) কর্তৃক পরিচালিত ইসলামি ফিকহ কাউন্সিল সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফতোয়া বোর্ড পরিমিত পরিমাণে অ্যালকোহল যুক্ত ওষুধ ব্যবহারের বৈধতার পক্ষে ফতোয়া প্রদান করেছে। যেমন: ইসলামি ফিকহ কাউন্সিলের এই সংক্রান্ত কয়েকটি সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি হলো:

2- يجوز استعمال الأدوية المشتملة على الكحول بنسب مستهلكة تقتضيها الصناعة الدوائية التي لا بديل عنها ، بشرط أنب عدل ، كما يجوز استعمال الكحول مطهرًا خارجيًّا للجروح ، وقاتلاً للجراثيم ، وفي الكريمات والدهون الخارجية .
“২. ঔষধ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে অ্যালকোহল মেশানো হলে উক্ত ঔষধ ব্যবহার করা জায়েয যদি এ ছাড়া বিকল্প কিছু না থাকে। তবে শর্ত হলো, কোন বিশ্বস্ত ও ন্যায়-নীতিবান ডাক্তার কর্তৃক তা ব্যবহার করার নির্দেশনা (প্রেসক্রিপশন) থাকতে হবে। যেভাবে ক্ষত বা আহত স্থানের জন্য অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে, জীবাণু নাশক হিসেবে এবং ক্রিম ও মলমে অ্যালকোহল ব্যবহার করা বৈধ।”

[২৬-১০-১৪২২ হি. মোতাবেক ৫-১০-২০০২ খ্রিস্টাব্দ তারিখে মক্কা মুকাররামায় অনুষ্ঠিত ইসলামি ফিকহ কাউন্সিলের ১৬তম অধিবেশন]
[কৃতজ্ঞতা: IslamQA]
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture