Writing

গুনাহ মাফের ট্রেন

ট্রেন মিস করার পর কেঁদেটেদে লাভ আছে? কান্নার ফলে মিস হওয়া ট্রেন কি ফিরে আসবে? বসে না থেকে বরং পরবর্তী ট্রেনের টিকিট কাটা ভালো। আর ‘ঐ’ লোকের মতো সৌভাগ্যবান হলে তো কথাই নেই!
এক লোক বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখলো সকালের প্রথম বাসটি সে মিস করেছে। প্রচণ্ড মন খারাপ হলো। দুপুর দুটোর আগে তাকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে হবে। এখন সে যাবে কিভাবে? বাস স্ট্যান্ড ছেড়ে একটা চায়ের দোকানে এসে সে এক কাপ চা খেলো। তখন একজন বললো, “আজ স্পেশাল সার্ভিস। প্রথম বাস ছাড়ার দশ মিনিট পর তো সকালের দ্বিতীয় বাস ছাড়বে। আপনি তাড়াতাড়ি যান।”

সে চায়ের কাপ অর্ধেক ফেলে রেখে দৌড়ে বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখলো, দ্বিতীয় বাসটিও চলে গেছে। “দূর, ব্যাড লাক!” বলে সে মাটিতে লাথি মারলো। তার বিরক্তিভাব দেখে আরেকজন এসে বললো, “ভাইজান, আমার চট্টগ্রাম যাবার কথা ছিলো। কিন্তু, আজ একটা কাজের জন্য যেতে পারবো না। বিশ মিনিট পর বাস।
আমার টিকেটটা নিবেন? অর্ধেক দামে?”

লোকটি মনে মনে বললো, এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি! সে তাড়াতাড়ি টিকেটটি কিনে বাসে গিয়ে বসলো। এই বাসটি আর মিস করা যাবে না।

প্রতিদিন আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করেন, প্রতি মাসে আল্লাহ তাঁর পাপী বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন। তারপরও রামাদ্বান মাস হলো স্পেশাল মাস। ঈদ উপলক্ষ্যে যেমন বাস-ট্রেনের বিশেষ সুবিধা চালু হয়, রামাদ্বান মাসেও আল্লাহ বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্য বিশেষ সুযোগ দেন।

রামাদ্বান মাসে অনেকগুলো ক্ষমার ‘ট্রেন’ চালু হয়। ঐ লোকটি যেমন যেকোনো একটা বাসে চড়লেই চট্টগ্রাম যেতে পারবে, তেমনি ক্ষমার ট্রেনের যেকোনো একটাতে চড়লে বান্দা ক্ষমা পেতে পারে (ইন শা আল্লাহ)।

রামাদ্বান মাসের ক্ষমার স্পেশাল সার্ভিসগুলো কি কি?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন তিনটি ‘সার্ভিস’ -এর কথা বলেন।

সার্ভিস নাম্বার ওয়ান

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদ্বান মাসের রোজাগুলো রাখে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”
[সহীহ বুখারী: ৩৮]

সার্ভিস নাম্বার টু

“যে ব্যক্তি শবে কদরের রাতে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পেছনের জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”
[সহীহ বুখারী: ১৯০১]

সার্ভিস নাম্বার থ্রি

“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রামাদ্বান মাসে রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পেছনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”
[সহীহ বুখারী: ৩৭]

গুনাহ মাফের ট্রেনগুলোর মধ্যে একটি ট্রেন হলো ফরজ-আবশ্যিক, বাকি দুটো সুন্নাত এবং নফল। যৌক্তিক কারণ ছাড়া রামাদ্বান মাসের রোজাগুলো রাখতেই হবে। তারমানে, পুরো মাস রোজা রাখাটা হলো আমাদের প্রথম ট্রেন/বাস। এই ট্রেন মিস দেওয়া যাবে না। আমাদের সবার লক্ষ্য থাকবে এই ট্রেনে চড়েই যেন আমাদের গুনাহগুলো ঝরে যায়।
সিকিউরিটির জন্য আমরা বাকি দুটো ট্রেনেরও টিকেট কেটে ফেলতে পারি। প্রথম ট্রেন যদি কোনো কারণে মিস হয়ে যায়, কোনো গাফিলতির কারণে গুনাহগুলো যদি মাফ না হয়, বাকি দুটোর একটিতে চড়েও যেন আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।

রামাদ্বান মাসের পুরো মাসটি রাতে তারাবীহ-তাহাজ্জুদ পড়ে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় যদি কাটানো যায়, তাহলে (ইন শা আল্লাহ) আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।

তৃতীয় ট্রেনটি হলো শবে কদরের রাতে ইবাদাত করা। এই ট্রেনকে টার্গেট করা হলো সবচেয়ে রিস্কি; যেমনটা তৃতীয় ট্রেনের আশায় প্রথম দুটো বাস/ট্রেনের টিকেট না কাটা।

শবে কদর কবে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না। রামাদ্বান মাসের শেষ দশ রাতের যেকোনো এক রাত শবে কদর। এই রাতে ইবাদাত করবো বলে বাকি দুটো ট্রেন মিস করা চলবে না। ভুলের মধ্যে এই রাতটি চলেও যেতে পারে, আমরা বুঝতে পারবো না।

তাহলে আমাদের টার্গেট থাকবে, প্রথম ট্রেনে চড়ে যেন আমাদের গুনাহগুলো ঝরে যায়। দ্বিতীয় আর তৃতীয় ট্রেনের টিকেট বুক দিয়ে রাখবো সিকিউরিটির জন্য। সুন্নাত-নফল বলে অবহেলা করলে হবে না। সবগুলোর গন্তব্য একই। গুরুত্ব দিতে হবে।

আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture