Writing

ঘুম ভেঙে গেল, অতঃপর…

ধরুন রাতে আপনি ঘুমোতে গেলেন কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনি আপনার বিছানায় নেই, নেই আপনার ঘরে। আপনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন ভিন্ন এক পরিবেশে যেখানে সবকিছুই আপনার অপরিচিত। নিঃশব্দ, নিস্তব্দ, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা পরিবেশ আর আপনি সম্পূর্ণ একা। এরকম অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই আপনার সহজাত প্রবৃত্তি আপনার মনে অনেক অনেক প্রশ্নের জন্ম দিবে।আপনি ভাববেন- কোথায় এলাম, কিভাবে এলাম,বাকি সবাই কোথায়,এত নীরবতা কেন,স্বপ্ন না কি বাস্তব ইত্যাদি।

নানাবিধ জিজ্ঞাসা নিয়ে যখন আপনি অস্থির তখন আপনাকে যদি অচেনা কন্ঠের কেউ প্রশ্ন করে তখন স্বাভাবিকভাবেই ভয় আপনাকে পেয়ে বসবে। প্রশ্নকারীর পরিচয় না জেনে, আপনার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা না পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই আপনি প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইবেন না।এভাবে সময় যতোই গড়াবে আপনার অস্থিরতা বাড়বে, মনের ভিতর শংকা বাড়বে।

চিন্তা করুন তো এরকম অবস্থায় স্থিরচিত্তে কারো পক্ষে কি প্রশ্নকারীর সাথে কথোপকথন সম্ভব! তবে হ্যা প্রশ্নকারী যদি তাকে আশ্বস্ত করে আপনি নিরাপদ অবস্থানে আছেন কিংবা আপনার কোনো ক্ষতি করবো না তবে ভিন্ন কথা, কিন্তু আমাদের প্রশ্নকারী কিন্তু এরকম কোনো নিশ্চয়তা দেননি। বরং তিনি একের পর এক ইন্টারোগেশন করেই চলেছেন।

এখন কল্পনা করুন এই ইন্টারোগেশন রুম আপনার আমার বাসস্থান নয়,নয় কোনো পুলিশ স্টেশন বা পরিত্যাক্ত ভবন বরং এটা মাটির সেই ঘর যেখান থেকে আপনি এসেছেন আর যেখানেই আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আপনি কবরে আছেন আর আপনার ঘুম ভেঙেছে। আপনি নিজেকে পৃথিবীর সব দায়িত্ব,সব বন্ধন থেকে মুক্ত আবিষ্কার করলেন এবং সেই এক‌ই একাকীত্ব আপনাকে ঘিরে ধরলো।তার‌ই কিছুক্ষণ পর দুইজনকে আপনি দেখতে পেলেন যারা সেই অচেনা ব্যক্তিদের মতোই কিন্তু দেখতে ভয়ংকর।

এরকম অবস্থায় কি আর মুখ দিয়ে কথা বের হতে চাইবে।যেই আপনি কিছুক্ষণ আগে কল্পিত দুনিয়ার একটি কল্পচিত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ও অস্থিরতায় ভুগেছেন সেখানে তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি ভয়াবহ ও বাস্তব পরিবেশে নিজেকে স্থির রাখতে পারবেন বলেন দেখি, কিভাবেই বা সাওয়াল জবাবের প্রশ্নগুলো সাবলীলভাবে উত্তর দিয়ে নিজেকে মুক্ত করবেন?

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এরকম ভয়ংকর এক পরিস্থিতিতে বেশ কিছু অন্তর আল্লাহর ইশারায় শান্ত হয়ে যাবে,তাদের মাথার নিকট তাদের সালাত এসে হাজির হয়।তাদের সিয়াম গুলো নিরাপত্তা দেয় ডান দিকে আর যাকাত এসে নিরাপত্তা দেয় বাম দিকে এবং সাদকা, আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রাখার নেকী, সৎকাজ, সৃষ্টির প্রতি দয়া-অনুগ্রহ ইত্যাদি এসে উপস্থিত হয় তার দু পায়ের নিকট। এভাবে চারিদিকে ঘিরে থাকায় তারা পরিপূর্ণ সুরক্ষিত অবস্থায় দুইজন ফেরেশতার সামনে উপস্থিত হবে,অত্যন্ত সাবলীলভাবে উত্তর দিবে প্রতিটি প্রশ্নের এবং সারাজীবন যেই সালাতকে সঙ্গী করেছিলো তাকে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠবে,সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে চাইবে।

কঠিন পরিস্থিতিতে ও কেবলমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহে ঈমানদারদের হৃদয় এতোটাই নিশ্চিন্ত থাকবে যেন পার্থিব ভয়ভীতি তার উপর কাজ করবে না,সাধারন রিফ্লেক্স এর বিপরীতেই সে পার হয়ে যাবে কবরের কঠিন জীবন।তবে এর একটাই শর্ত- ঈমান আনয়ন এবং আমল করন, তাহলেই না আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে আপন করে নিবেন,সহজ করে দিবেন সবকিছু।

তা না হলে বলুন কার পক্ষেই সম্ভব এই কঠিন একটি মুহূর্ত পারি দেওয়া যেখানে কোনো সুপারিশ নেই,কোনো প্রিয়জন নেই।তবে কতোই না সহ‌জ সেই পথ যদি থাকে সাথে আমার আপনার রব।

লিখেছেন

জেনারেল লাইনে পড়াশোনার ব্যস্ততায় দ্বীনি জ্ঞানার্জনের সুযোগ খুবই কম পেয়েছি তারপরও অনলাইন ভিত্তিক দাওয়াহ এবং ইসলামী ব‌ইয়ের সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামের সৌন্দর্যকে উম্মাহর সামনে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমার এই টুকটাক লেখালেখি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture