দুনিয়াতে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া কি সম্ভব

ব্যক্তি বিশেষকে নিয়ে বাড়াবাড়ি এবং আমাদের সচেতনতা।
প্রিয় ভাইয়েরা, আবু ত্বহা আদনান খা রে জি মানহাজ লালনের পাশাপাশি কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা ও ভ্রান্ত কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে সুপরিচিত ব্যক্তি। তার ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমগণ সতর্ক করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি মদিনার ওহুদের প্রান্তরে তিনি জান্নাতের সুঘ্রাণ পাচ্ছেন বলে একটা ভিডিও ইতঃমধ্যে ভাইর‍াল হয়েছে। আমার ফ্রেন্ড লিস্টের প্রচুর মানুষ এটা নিয়ে ট্রল করছেন বা বিভিন্ন ধরণের তাচ্ছিল্য মূলক কথাবার্তা বলছেন। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের উচিৎ, কার কোন ধরণের কথার প্রতিবাদ করা উচিৎ আর কোনটা উচিৎ নয় সে বিষয়ে সচেতন হওয়া।

যাহোক, আমি যে বিষয়টি বলতে চাই তা হল, বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, বহু দূর থেকেই জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। কিন্তু দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া সম্ভব কি না তা একটি স্বতন্ত্র গবেষণার বিষয়।
এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদিসটি ছাড়া কোনও শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায় না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ওহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণের পূর্বে সাহাবি আনাস ইবনুন নযর সাদ বিন মুয়ায রা. কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
الْجَنَّةَ، وَرَبِّ النَّضْرِ إِنِّي أَجِدُ رِيحَهَا مِنْ دُونِ أُحُدٍ‏
“হে সাদ ইবনে মুয়ায, নযরের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি।”
[সহিহ বুখারি (তাওহীদ পাবলিকেশন) ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ৫৬/১২. আল্লাহ্ তাআলার বাণী:
‘‘মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে…’।’
(আল আহযাব ২৩)]

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহ. সহিহ বুখারির ভাষ্য গ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বলেন,
ريح الجنة دون أحد، يحتمل أن يكون ذلك على الحقيقة بأن يكون شم رائحة طيبة زائدة عما يعهد فعرف أنها ريح الجنة، ويحتمل أن يكون أطلق ذلك باعتبار ما عنده من اليقين، حتى كأن الغائب عنه صار محسوسا عنده، والمعنى أن الموضع الذي أقاتل فيه يؤول بصاحبه إلى الجنة..
“সম্ভাবনা আছে, প্রকৃত অর্থেই তা জান্নাতের সুঘ্রাণ ছিল। ফলে তিনি পরিচিত সাধারণ ঘ্রাণের থেকে অতিরিক্ত সুগন্ধি লাভ করায় বুঝতে পেরেছিলেন যে, তা জান্নাতের সুঘ্রাণ।
এও সম্ভাবনা আছে যে, তার হৃদয়ের একিন বা দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিতে তিনি এমন কথা বলেছেন। যার কারণে অদৃশ্য বিষয়টাও তার নিকট ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়ে উঠেছে। তার অর্থ হল, আমি যে স্থানে যুদ্ধ করব তা সেখানকার শহিদদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।”

ইবনে বাত্তাল প্রমুখ বলেছেন,
يحتمل أن يكون على الحقيقة وأنه وجد ريح الجنة حقيقة، أو وجد ريحا طيبة ذكَّره طيبها بطيب ريح الجنة،
“সম্ভাবনা আছে যে, তা সত্যিকার অর্থেই। তিনি প্রকৃতই জান্নাতের ঘ্রাণ লাভ করেছিলেন অথবা তিনি এমন সুগন্ধি পেয়েছেন যা, তাকে জান্নাতের সুগন্ধির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।” [সূত্র: islamweb]

উক্ত একটি হাদিস ছাড়া দুনিয়াতে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়ার ব্যাপারে আর কোনও হাদিস অথবা প্রমাণিত ঐতিহাসিক ঘটনা পাওয়া যায় না। আর যে সাহাবি এই সুগন্ধি পেয়েছিলেন তিনি জান্নাত লাভের অদম্য ব্যাকুলতায় ওহুদের প্রান্তরে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে শাহাদাতের অমিয় সুধা লাভ করেছেন।

এ বিষয়ে islamweb আরও লিখেছে,
وعلى كل حال فنحن لم نقف على دليل يثبت أو ينفي إمكانية شم رائحة الجنة في الدنيا وحصول ذلك لبعض عباد الله الصالحين كرامة لهم
“যাই হোক না কেন, আমরা এমন কোন প্রমাণ পাইনি যা এই দুনিয়াতে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনাকে প্রমাণ করে বা অস্বীকার করে। কিছু আল্লাহর নেককার বান্দাদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটা তাদের কারামত।”
আল্লাহু আলাম।

Exit mobile version