Writing

বাচ্চাদের মসজিদে আগমন

“বাচ্চাদের মসজিদে আনবেন না” কথাটি খু্বই পরিচিত আমাদের দেশের মসজিদ গুলোতে। শুধু তাই না কখন কখন বাচ্চাদের মসজিদ থেকে বেরও করে দেওয়া হয় “আস্তাগফিরুল্লাহ”!
কিন্তু এটা কতটুকু সঠিক কথা কিংবা কখন এই কথাটা প্রযোজ্য?
সেটা না জেনেই আমাদের দেশে এমন করা হয়।

জ্বি, মসজিদে বাচ্চাদের নিয়ে আসা যাবে না সম্পর্কে হাদিস পাওয়া যায়,
ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী [ ﷺ ] বলেন, তোমরা তোমাদের মসজিদসমূহকে শিশু, পাগল, ক্রয়-বিক্রয়, ঝগড়া-বিবাদ, হৈ-চৈ, হদ্দ কার্যকরকরণ ও উন্মুক্ত অস্ত্র বহন থেকে হেফাযত করো। তোমরা তার দরজাসমূহের কাছে শৌচকর্মের জন্য ঢিলা রাখো এবং জুমুআহ্‌র দিন তাকে সুগন্ধময় করো। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৭৫০.(দুর্বল হাদিস) নাই তাহক্বীক্ব আলবানী: যঈফ। তাখরীজ আলবানী: যঈফ তারগীব ১৮৬ যঈফ জিদ্দান, তালাকুর রগীব ১২০-১২১, ইরওয়াহ ৩৬২। উক্ত হাদিসের রাবী
১. হাদিস বিন নহাবান সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তার থেকে হাদিস লিখা হয় না। আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তিনি দুর্বল। আহমাদ বিন হাম্বল ও ইমাম বুখারী বলেন, মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ বলেন, তার হাদিস প্রত্যাখ্যানযোগ্য। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, কোন সমস্যা নেই।
২. উতবাহ বিন ইয়াকযান সম্পর্কে ইমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ নন।
৩. আবু সাঈদ সম্পর্কে ইমামগন বলেন, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত।]

কিন্তু এই হাদিসটিতে কোন বাচ্চাদের কথা বলা হয়ে তা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। হাদিসটিতে অবুঝ বাচ্চা যাদের বোঝালে বোঝার মতো ক্ষমতা হয়নি কিংবা মসজিদে মল-মূত্র ত্যাগ করতে পারে এমন বাচ্চার কথা বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ, বুঝ হয়েছে এমন নাবালেগ আর তাছাড়াও রেফারেন্স দিলে বোঝা যাবে, ইন শা আল্লাহ!

কিন্তু কেউ যদি বলেন এখানে তো স্পষ্ট করে লেখা নেই এবং এ ব্যাখ্যাও তো দেওয়া নেই,তবে কেনো মানব? তাহলে নিচের হাদিসগুলো থেকে বুঝ পারবেন, ইন শা আল্লাহ!

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রসূল [ ﷺ ] ‘ইশার সালাত আদায় করতে বিলম্ব করলেন। এ হলো ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রসারের পূর্বের কথা। (সালাতের জন্য) তিনি বেরিয়ে আসেননি, এমন কি ‘উমর (রাঃ) বললেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং মসজিদের লোকদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “তোমরা ব্যতীত যমীনের অধিবাসীদের কেউ ‘ইশার সালাতের জন্য অপেক্ষায় নেই।”
[সহিহ বুখারী-৫৬৬.]

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী [ ﷺ ] বলেছেনঃ আমি দীর্ঘ করার ইচ্ছা নিয়ে সালাত শুরু করি। কিন্তু পরে শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষেপ করে ফেলি। কেননা, শিশু কাঁদলে মায়ের মন যে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তা আমি জানি।
[সহিহ বুখারী-৭০৯.]

আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্‌র রসূল [ ﷺ ] তাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইব্‌নু রাবী’আ ইব্‌নু আবদ শামস (রহঃ) এর ঔরসজাত কন্যা উমামা (রাঃ) কে কাঁধে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন।
[সহিহ বুখারী-৫১৬]

শাদ্দাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ইশার সালাতে রাসূলুল্লাহ্ [ ﷺ ]-কে আমাদের দিকে বেরিয়ে আসলেন। তখন তিনি হাসান অথবা হুসায়ন (রা)-কে বহণ করে আনছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ [ ﷺ ] সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁকে রেখে দিলেন। তারপর সালাতের জন্য তাকবীর বললেন ও সালাত আদায় করলেন। সালাতের মধ্যে একটি সিজদা লম্বা করলেন। (হাদীসের অন্যতম রাবী আবদুল্লাহ বলেন), আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেন, আমি আমার মাথা উঠালাম এবং দেখলাম, ঐ ছেলেটি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিঠের উপর রয়েছেন। আর তিনি সিজদারত। তারপর আমি আমার সিজদায় গেলাম। রাসূলুল্লাহ্ [ ﷺ ] সালাত শেষ করলে লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলু্ল্লাহ্! আপনি আপনার সালাতের মধ্যে একটি সিজদা এত লম্বা করলেন, যাতে আমরা ধারণা করলাম, হয়তো কোন ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। তিনি বললেন, এর কোনটাই ঘটেনি। বরং আমার এ সন্তান আমাকে সাওয়ারী বানিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যেন সে তার কাজ সমাধা করতে পারে।
[সুনানে আন-নাসায়ী-১১৪১.]

সুতরাং, উপরের হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় বাচারা মসজিদে আসত। মসজিদে আসার জন্য কোনো প্রকার বাধা বা সমস্যা হয়নি এবং প্রথম দেওয়া হাদিসটির ব্যাখ্যাও নিচের হাদিসগুলো সেটাও বলা যেতে পারে।

কিন্তু তবুও কারো কারো মনে হবে বাচ্চার কাতারের মাঝ দিয়ে দৌড়া-দৌড়ি বা হাটা-চলা করবে। কিন্তু দেখুন নিচের হাদিসটি কত সুন্দর আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেওয়া হয়েছে,

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি সাবালক হবার নিকটবর্তী বয়সে একদা একটি গাধীর উপর আরোহিত অবস্থায় এলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন মিনায় সালাত আদায় করছিলেন তাঁর সামনে কোন দেয়াল না রেখেই। তখন আমি কোন এক কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম এবং গাধীটিকে বিচরণের জন্য ছেড়ে দিলাম। আমি কাতারের ভেতর ঢুকে পড়লাম কিন্তু এতে কেউ আমাকে নিষেধ করেননি। [সহিহ বুখারী-৭৬]

এখন সবশেষে প্রশ্ন হলো বাচ্চারা কোথায় দাঁড়াবে?

বুঝ হয়েছে, এমন নাবালেগ শিশুদের ব্যাপারে বিধান হলো, যদি শিশু একজন হয়, তাহলে তাকে বড়দের কাতারেই সমানভাবে দাঁড় করাবে। এ ক্ষেত্রে বড়দের নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না। একাধিক শিশু হলে সাবালকদের পেছনে পৃথক কাতারে দাঁড় করানো সুন্নাত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা হলে, বড়দের কাতারেও দাঁড়াতে পারবে। [আলবাহরুর রায়েক : ১/৬১৮, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৭১.]

এখন প্রশ্ন হলো বুঝ হয়েছে কিন্তু নাবালেগ কারা?

আলহামদুলিল্লাহ, ৫-৬ বছরের বাচ্চাদের বুঝ হয়ে যায়। তাদের কিছু বোঝানো হলে তারা তা বুঝে এবং মল-মূত্র ত্যাগ সম্পর্কেও বুঝতে পারে।
[ ওয়াল্লাহু আ’ল্লাম ]

বাচ্চার তো একটু হৈচৈ করবে,এজন্য তাদেরকে সুন্দর ভাবে বোঝাতে হবে, কখনই কঠিন ভাবে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলা যাবে না! কেননা,
আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পযার্য়ক্রমে তার বাবা ও দাদার সূত্রে থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (দাদা) বলেন রাসূলুল্লাহ [ ﷺ ] বলেছেনঃ যে লোক আমাদের শিশুদের আদর করে না এবং আমাদের বড়দের সন্মানের প্রতি খেয়াল রাখে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
[জামে’ আত-তিরমিজি-১৯২০]

সুতরাং, বুঝ হয়েছে এমন মানে কোনো কিছু বোঝালে বুঝতে পারে এবং মল-মূত্র ত্যাগ সম্পর্কেও বুঝে এমন বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে আসবেন, প্রয়োজন তাদের জন্য চকলেটের ব্যবস্থা করবেন এবং মাসের শেষে / ৪০ দিন পরে কোনো সুন্দর উপহারের ব্যবস্থাও করতে পারেন সকলে মিলে,

ইন শা আল্লাহ!
ওয়াল্লাহু আ’ল্লাম
আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিন, সহীহ বুঝ দান করুন এবং আমাদের শিশুদেরসহ আমাদের দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন, আমিন

লিখেছেন
অনিক ইসলাম সোহান

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture