Writing

আপনি বিনয়ী নাকি অহংকারী

নম্রতা হলো মুমিনের আখলাকের অন্যতম উপাদান। কেউ কেউ বলেন এটা হলো ‘আখলাকের রাণী’। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:

“রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।”
[সূরা ফুরকান: ৬৩]

এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর ইবাদাত করা ও বিনয়, নম্রতাকে একসাথে উল্লেখ করেছেন। এজন্য আমাদের আলেমগণ বলেন- ‘ঈমানের বৈশিষ্ট্য হলো নম্রতা’। আপনার যদি ঈমান থাকে, আপনি বিনয়ী হবেন। আপনার যদি ঈমান থাকে, আপনি অহংকারী হবেন না।
আজকে আমরা জানবো নম্রতা কাকে বলে, নম্রতার বৈশিষ্ট্য কী, কিভাবে নম্রতা অর্জন করতে হয়।

নম্রতার আরবি হলো ‘তাওয়াদু’। ওয়াদওয়াহ মানে হলো- নিজেকে ছোটো হিশেবে উপস্থাপন করা, নিচে নেমে পড়া। আপনি যখন নিজের ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, নিজেকে অন্যের চেয়ে ছোটো হিশেবে উপস্থাপন করবেন, তখন এই গুণ অর্জন করতে পারবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই গুণ অর্জন করতে বলেন। আল্লাহ বলেন:

“আপনি মুমিনদের জন্য আপনার বাহু অবনত করুন।”
[সূরা আল-হিজর: ৮৮]

আল্লাহ রূপক অর্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুমিনদের জন্য নম্র হতে বলেন। বাহু নত করা নম্র হওয়ার নামান্তর। আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নম্র হতে বলেন, আমাদেরকেও সেই গুণ অর্জন করতে হবে সেটা এই আয়াতে পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিলেন।
আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সরাসরি জানিয়ে দিতে বলেন-

“তোমরা বিনয়ী হও, যতোক্ষণ না একে অপরের ওপর যুলুম এবং অহংকার করে।”
[সহীহ মুসলিম: ২৮৬৫, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৫]

কে বিনয়ী এবং কে বিনয়ী নয় এটা চেনার কিছু উপায় আছে। আমাদের আলেমগণ এরকম কিছু লক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন।

১। সামনে আসার ইচ্ছে প্রকাশ না করা
আপনি যখন অনেকের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন, তখন যদি মনে করেন সবাই আপনাকে নিয়ে কথা বলুক, আপনাকে কেন্দ্র করে তাদের আলোচনা চলুক, তাহলে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে বিনয়ের গুণটি নেই। আপনি যদি আশা করেন, আপনাকে সবাই মান্য করুক, গুরুত্ব দিক; গুরুত্ব না দিলে আপনার রাগ হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে এই গুণটি অনুপস্থিত। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যারা নেতৃত্ব চায়, তাদেরকে আমরা নেতা বানাই না। ইসলামের এটা রুল অব থাম্ব।

২। মানুষ যখন আপনার প্রশংসা করবে, আপনি অস্বস্তিভোগ করবেন
আপনি যদি আশা করেন মানুষ আপনার প্রশংসা করবে, প্রশংসা না করলে আপনি যদি রাগ করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে নম্রতা নেই। হ্যাঁ, আপনার কোনো গুণের জন্য মানুষ আপনাকে প্রশংসা করতে পারে; আপনি তখন আল্লাহর প্রশংসা করে সেটার কৃতিত্ব আল্লাহকে দিবেন। কিন্তু, মনে মনে এটা ভাবতে হবে- আপনি এমন প্রশংসা লাভের যোগ্য নন।

৩। ভুল হলে সংশোধনের মানসিকতা রাখা
আপনি বিনয়ী নাকি অহংকারী সেটা বুঝতে পারবেন যখন কেউ আপনাকে ভুল ধরিয়ে দিবে। ইবাদাতের ক্ষেত্রে ভুল হলে আপনি তাওবা করবেন, মানুষের সাথে কোনো ভুল করলে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। যদি এমন হয়, আপনি একটি ভুল করেছেন, একজন ভুল ধরিয়ে দিলো, আপনি জানেন আপনারটা ভুল ছিলো; কিন্তু আপনি ভুল স্বীকার করলেন না, তাহলে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে অহংকার জন্ম নিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহংকারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন-

“প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।”
[সহীহ মুসলিম: ১৬৬]

অহংকার করে সত্য অস্বীকার করা হলো শয়তানের কাজ। শয়তানের এই কাজকে আল্লাহ ‘কুফর’ হিশেবে আখ্যায়িত করে বলেন:

“সে অস্বীকার করলো এবং অহংকার করলো। আর সে হলো কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।”
[সূরা বাকারা:৩৪]

আল্লাহর কাছে বিনয়ের বিপরীত হলো কুফর। আল্লাহকে স্বীকার করা কিংবা অহংকারবশত অস্বীকার করা।
আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিনয়ের মূর্ত প্রতীক। তাঁর পুরো জীবনী পড়লে আমরা দেখতে পাই তিনি বিনয়ের শতো শতো উদাহরণ রেখে গেছেন। তিনি এমনভাবে জীবনযাপন করতেন যে, বাইরে থেকে কেউ আসলে জিজ্ঞেস করতো, ‘তোমাদের মধ্যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে?’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইতেন না যে মানুষজন তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়াক।

আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
“সাহাবীদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাইতে প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাঁকে দেখে দাঁড়াতেন না। কেননা, তারা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না।”
[জামে আত-তিরমিজি: ২৭৫৪]

তিনি খুব সাধারণ পোশাক পরতেন, ঘরের কাজ করতেন, নিজের জুতো নিজে সেলাই করতেন, গাধা-খচ্চরের ওপর আরোহণ করতেন। কেউ কেউ তাঁকে ‘আবুল কাসিম’ বলে ডাকতো, তিনি কিছু মনে করতেন না।

এখন কেউ জিজ্ঞেস করতে পারেন, বিনয়ী হলে লাভ কী হবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জবাব দেন।
তিনি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেন, “আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবো না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তির জন্য হারাম?” সাহাবীরা জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দেন-
“যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি, সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।”
[জামে আত-তিরমিজি: ২৪৮৮]

তবে একটি জিনিস বলে রাখা ভালো, নম্রতা মানে এই না যে আপনি মনে করবেন আল্লাহ আপনাকে কিছুই দেননি। বিনয় বা নম্রতার মানে হলো আপনি নিজেকে অন্যের চেয়ে বড়ো ভাববেন না, অন্যকে অবজ্ঞা করবেন না। আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন সেটার শুকরিয়া আদায় করবেন, একইসাথে নিজেকে ‘মহান’ ভাববেন না।
আপনি নিজেকে ছোটো মনে করলে কী হবে? আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে অন্যের চেয়ে খাটো ভাবলে কী হবে?

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দেন। সেই খুতবায় তিনি বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এক স্তর বিনয়ী হবে (এই বলে তিনি একটি হাত নিচে নিলেন), আল্লাহ তাঁর মর্যাদা এক স্তর উঁচু করবেন (এই বলে তিনি একটি হাত উপরে নিলেন)। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে এক স্তর অহংকার করবে, আল্লাহ তার মর্যাদা এক স্তর নিচু করে দিবেন; শেষ পর্যন্ত তিনি তাকে হীনগ্রস্তদের মধ্যে হীনতমে পরিণত করবেন।”
[মুসনাদে আহমাদ: ২৭৩২৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৭৬]

এটা সত্য যে, আপনি যদি বিনয়ী হোন, সবাই আপনাকে পছন্দ করবে। আর আপনি যদি জোর করে সবার ভালোবাসা, সম্মান আদায় করতে চান, আপনি ব্যর্থ হবেন। আপনার ক্ষমতার জন্য আপাতত কেউ কেউ আপনাকে সম্মান দেখাতে পারে। কিন্তু, মনে মনে তারা আপনাকে সম্মান করবে না; বরং ঘৃণা করবে।
মজার ব্যাপার হলো- যে বিনয়ী, সে নিজেকে ছোটো ভাবলেও মানুষজন তাকে বড়ো ভাবে। অন্যদিকে, যে অহংকারী, সে নিজেকে বড়ো ভাবলেও মানুষজন তাকে নিচু মন মানসিকতার ভাবে!

প্রত্যেক নবী-রাসূল বিনয়ী ছিলেন। বিনয় ছিলো তাঁদের ভূষণ। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা সেই গুণ কিভাবে অর্জন করবো?

১। আমরা অহংকারের পরিণতি নিয়ে ভাববো
যখন আমরা অহংকারের পরিণতি নিয়ে ভাববো, তখন আমরা বিনয়ী হতে পারবো। আমরা যখন জানবো ইবলিশ, ফেরাউন, আবু লাহাবের পরিণতির কারণ ছিলো তাদের অহংকার, তখন আমরা সেই বদ-গুণ থেকে দূরে থাকতে পারবো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তির অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
[সহীহ মুসলিম: ১৬৭]

অহংকারের ভয়াবহ পরিণতি আমাদেরকে নিরহংকারী বানাতে উৎসাহ জুগাতে পারে।

২। অন্তরকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা
আপনি কখনো যদি মনে করেন আপনার অন্তর অহংকারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তখন তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আপনি সবসময় ভাববেন, আপনি যে জিনিস নিয়ে অহংকার করছেন, সেটা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন, তখন আর অহংকার করতে পারবেন না। আপনি তখন মনে করবেন- আমি এটার যোগ্য না, তারপর আল্লাহ দয়া করে আপনাকে দান করেছেন।

৩। গোপন আমল করা
যখন কেউ আপনাকে দেখছে না, তখন আপনি আমল করুন। এমন গোপন আমল বাড়িয়ে দিন। তাহাজ্জুদ পড়ুন এবং লুকিয়ে সাদকা করুন; ডানহাতে দিলে যেনো বামহাত বুঝতে না পারে।

৪। কোনো হালাল কাজকে অবজ্ঞা করবেন না
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের জুতো সেলাই করতেন। তিনি চাইলে তাঁর কোনো সাহাবীকে বলতে পারতেন, তারা সেই কাজ করে দিতো। কিন্তু, তিনি নিজে সেই কাজ করেন। এটা থেকে আমরা শিখতে পারি, আমরা নিজের জন্য যেমন কোনো হালাল কাজকে ছোটো করে দেখবো না, তেমনি কাউকে সেটা করতে দেখলে তাকেও খাটো করবো না।

উমর উবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন খলিফা। একবার উমর ইবনুল খাত্তাব পানির কলসি বহন করছিলেন। উরওয়া ইবনে যুবাইর রাহিমাহুল্লাহ খলিফাকে এই অবস্থায় দেখে বললেন, “হে আমিরুল মুমিনীন! আপনার জন্য এটা শোভা পায় না।”

উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু জবাব দিলেন:
“প্রতিনিধি দল যখন আনুগত্যের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে আমার কাছে আসে, তখন আমার মনে একধরণের বড়ত্ব অনুভব হয়। তাই এই বড়ত্বকে ভেঙ্গে ফেলা আমি জরুরি মনে করছি।”
[ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, মাদারিজুস সালিকিন: ২/৩৩০]

গতো শতাব্দীর একজন বড়ো আলেম ছিলেন। তিনি ছিলেন আমার শিক্ষক। একবার সবাই দেখলো সেই আলেম মসজিদের টয়লেট পরিষ্কার করছেন। সবাই অবাক হলো। তাঁর ছেলে বললো, “আব্বা, এসব কী করছেন? এসব করার জন্য তো লোক আছে।”

জবাবে তিনি সেই একই কথা বললেন, যে কথা উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন-
“আমি আমার মনে একধরণের বড়ত্ব অনুভব করেছি। তাই এই বড়ত্বকে ভেঙ্গে ফেলা আমি জরুরি মনে করছি।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবী এবং বড়ো বড়ো আলেমগণ এমন ছোটোখাটো কাজকে তুচ্ছজ্ঞান করতেন না।

৪। গরীব, দুর্বলদের সাথে সময় কাটানো
আপনি যদি অসহায়, গরীব, দুর্বলদের সাথে সময় কাটান, তাহলে দেখবেন বিনয়ী হতে পারবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“আমাকে খোঁজ করো তোমাদের মধ্যে যারা নিঃস্ব-দুর্বল তাদের মাঝে। কেননা, তোমরা রিযিক এবং সাহায্য-সহযোগিতাপ্রাপ্ত হয়ে থাকো অসহায়-দুর্বল লোকদের ওয়াসিলায়।”
[জামে আত-তিরমিজি: ১৭০২]

আপনি সারাক্ষণ শুধু ধনীদের সাথে, বিখ্যাত মানুষদের সাথে ঘুরবেন না। মাঝেমধ্যে গরীবদের সাথেও সময় কাটান। তাদের কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করুন। সমাজের মানুষজন যাদেরকে মূল্যায়ন করেনা, তাদেরকে কাছে টেনে নিন। মাঝমধ্যে এতিমখানায় ঘুরে আসুন। দেখবেন, নম্রতা, বিনয় আপনার মধ্যে চলে আসবে।

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture