Abdullahil HadiWriting

ঝগড়া-বিবাদে ক্ষমা করা

১) আবু বকর রা. এর ঘটনা:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। এক লোক এসে আবু বকর রা.কে বকাবকি করতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানেই বসে ছিলেন। তিনি এ কাণ্ড দেখে আশ্চর্য হয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। লোকটি বেশি মাত্রায় বকাবকি শুরু করলে আবু বকর রা. তার দু-একটি কথার জবাব দিলেন। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগ করে সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন।

আবু বকর রা. পেছনে পেছনে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, লোকটি আমাকে বকাবকি করছিল আর আপনি সেখানে বসে ছিলেন। কিন্তু যখনই তার কিছু কথার জবাব দিলাম তখনই আপনি রেগে সেখান থেকে চলে আসলেন!!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমার সাথে একজন ফেরেশতা ছিল যে তোমার পক্ষ থেকে উত্তর দিচ্ছিল। আর যখনই তুমি উত্তর দিলে সেখানে শয়তান ডুকে পড়ল।

আর হে আবু বকর, তিনটি জিনিস খুবই সত্য:
يَا أَبَا بَكْرٍ ثَلَاثٌ كُلُّهُنَّ حَقٌّ: مَا مِنْ عَبْدٍ ظُلِمَ بِمَظْلَمَةٍ فَيُغْضِي عَنْهَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ ، إِلَّا أَعَزَّ اللهُ بِهَا نَصْرَهُ ، وَمَا فَتَحَ رَجُلٌ بَابَ عَطِيَّةٍ ، يُرِيدُ بِهَا صِلَةً ، إِلَّا زَادَهُ اللهُ بِهَا كَثْرَةً ، وَمَا فَتَحَ رَجُلٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ ، يُرِيدُ بِهَا كَثْرَةً ، إِلَّا زَادَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِهَا قِلَّةً

ক. কেউ কোন ব্যাপারে জুলুমের শিকার হওয়ার পর সে যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে তা ক্ষমা করে দেয় তবে এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে সম্মান জনক ভাবে সাহায্য করেন।
খ. কেউ যদি (কোন আত্মীয়ের সাথে বা সাধারণ মুসলমানের সাথে) সুসম্পর্ক তৈরির উদ্দেশ্যে দানের রাস্তা খুলে তবে আল্লাহর তার সম্পদ আরও বৃদ্ধি করে দেন।
গ. আর কেউ যদি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে ভিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করে তবে আল্লাহ তাআলা তার সম্পদ কমিয়ে দেন।
[মুসনাদে আহমদ,আলবানি বলেন, হাদিসটি হাসান। মিশকাত হাদিস নং ৫১০২]

২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
المستبَّانِ ما قالا ! فعلى البادي منهما ما لم يعتدِ المظلومُ
“দু জন লোক যদি পরস্পরকে গালাগালি করে তবে যাবতীয় গুনাহ তার উপর বর্তাবে যে আগে শুরু করেছে যদি অত্যাচারিত ব্যক্তি প্রতিদত্তরে অতিরিক্ত না বলে।”
[সহীহ মুসলিম]

এ হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি আগে কাউকে কষ্ট দেয় বা গালি দেয় তবে তার সমপরিমাণ প্রতিদত্তর দেয়া জায়েজ আছে আর তার যাবতীয় গুনাহ যে আগে শুরু করেছে তার উপর বর্তাবে। কারণ, সেই এর মূল কারণ। অবশ্য যদি প্রতিদত্তরে সে অতিরিক্ত গালমন্দ করে তবে যে পরিমাণ অতিরিক্ত গালমন্দ করেছে তার জন্য গুনাহগার হবে। কারণ,ইসলামে কেবল সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেয়ার অনুমোদন রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا ۖ فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّـهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ
“অন্যায়ের প্রাপ্য শুধু সমপরিমাণ অন্যায়। তবে যে ব্যক্তি ক্ষমা করে দেয় এবং সমঝোতা করে সে আল্লাহর নিকট পুরস্কার প্রাপ্ত হবে। তিনি তো অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন না।”
[সূরা শূরা: ৪০]

যদিও সমপরিমাণ প্রতিশোধ নেয়া জায়েজ আছে তবুও ধৈর্য ধারণ করা উত্তম। যেমনটি আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদিসটিতে বর্ণিত হয়েছে।

৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
أبغضُ الرجالِ إلى اللهِ الأَلَدُّ الخَصِمُ
“প্রচণ্ড ঝগড়াটে স্বভাবের লোক আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশী ঘৃণিত।”
[বুখারি ও মুসলিম]

উৎস গ্রন্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের অনুপ্রেরণা

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture