Writing

সম্পর্কের চোরাবালি

উত্তম-সুচিত্রা জুটির কথা এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। লোকজন বলাবলি করেন, এমন অসাধারণ জুটি বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসে আর দেখা যায় নি। উত্তম কুমার চলচ্চিত্রে আসার আগেই ছোটবেলার বান্ধবী গৌরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। আর সুচিত্রা সেনকে চলচ্চিত্রে আসতে রাজী করিয়েছিলেন স্বয়ং তার স্বামী দিবানাথ। দিবানাথ তখনও জানতেন না, নিজের পায়ে কত জোরে কুড়াল মারলেন! উত্তম-সুচিত্রা জুটির সিনেমার সংখ্যা ২৯। সংখ্যার হিসেবে কম নয়।

এতোগুলো সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে মানব প্রবৃত্তির স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরী হয়। ব্যাপারটা বেশ চাউর হবার পর উত্তমের সাংসারিক জীবনে সৃষ্টি হয় টানাপোড়েন। উত্তমের স্ত্রী গৌরী মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। অন্য দিকে, স্বামী দিবানাথের সঙ্গে মন কষাকষি শুরু হয় সুচিত্রা সেনের। উত্তম-সুচিত্রার সম্পর্ক এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে, সুচিত্রার স্বামী উত্তম কুমারকে একবার ছুরি নিয়ে তাড়া পর্যন্ত করেছিলেন। এরপর সুচিত্রা বাড়ি ছেড়ে নিউ আলিপুরে আলাদা থাকতে শুরু করেন।

নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে দিনেশ কার্তিকের শেষ বলে মারা সেই ছয়টির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই?
এই ছয়টি বাংলাদেশের কোটি কোটি দর্শকের মন ভেঙে দিয়েছিলো। সেই কার্তিকের ব্যক্তিগত জীবনে রয়েছে একটি দুঃসহ অভিজ্ঞতা। দিনেশ কার্তিক এবং তার স্ত্রী নিকিতা ছিলেন ছোটবেলার বন্ধু। শুধু তারাই নন, তাদের বাবা-মায়েদের মধ্যেও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিলো। ২০০৭ সালে দিনেশ-নিকিতার বিয়ে হয়। ২১ বছর বয়সী দিনেশ তখন ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য।

বেশ সুখেই কাটছিলো সংসার। বিয়ের পর কার্তিকের বদৌলতে ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গনের অনেকের সঙ্গেই পরিচিত হন নিকিতা। একদিন কার্তিক নিজেই আরেক ভারতীয় ক্রিকেটার, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুরালি বিজয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন স্ত্রী নিকিতার। কিন্তু তিনি জানতেও পারলেন না, নিজের জন্য কত বড় গর্ত খুঁড়ে ফেললেন! বিজয়ের সঙ্গে নিকিতার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে এবং তা প্রেমে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে কার্তিকের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নিকিতার পেটে তখন কার্তিকের সন্তান। সে অবস্থাতেই বিয়ে করেন বিজয়কে।

হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সঙ্গে ড. আসিফ নজরুলের ঘনিষ্ঠতা সেই আশির দশকের শেষভাগ থেকে। হুমায়ূন আহমেদকে আসিফ নজরুল ডাকতেন ‘হুমায়ূন ভাই’ আর গুলতেকিন খানকে ‘গুলতেকিন ভাবী’। নোভা, শীলা, বিপাশাদের সঙ্গেও গড়ে ওঠে সখ্যতা। নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন তাঁদের বাসায়। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দাবা খেলতে বসতেন আর শীলা, বিপাশা হৈ হুল্লোড় করে বলতো- “বাবা, আসিফ নজরুলকে হারিয়ে ভর্তা বানিয়ে দাও!”

ঘন ঘন আসা-যাওয়ার সুবাদে শীলা আহমেদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আসিফ নজরুল। কোনো কারণে তাঁদের সে সম্পর্ক পরিণতি পায় নি। ২০০৪ সালে রোকেয়া প্রাচীকে বিয়ে করেন আইনের এ অধ্যাপক। আর শীলা আহমেদ বিয়ে করেন তাঁরই ব্যাচমেট অপুকে। অপু-শীলার সংসারে আসে দুই সন্তান। পেরিয়ে যায় অনেক বছর। হঠাৎ জেগে ওঠে পুরোনো প্রেম। ২০১৩ সালে রোকেয়া প্রাচীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে আসিফ নজরুলের। একই বছরে অপুকে ডিভোর্স দেন শীলা। সে বছরের ডিসেম্বরে দুই সন্তানসহ আসিফ নজরুলকে বিয়ে করেন শীলা আহমেদ।

উপরের তিনটি ঘটনা পরম্পরা লক্ষ্য করুন। আল্লাহর দেয়া বিধান পর্দার লঙ্ঘনে প্রত্যেকটিতে একই পরিণতি ঘটেছে। মুসলিম-অমুসলিম ভেদে ফলাফল আলাদা হয় নি। ইসলাম নারীদের শরীরের পর্দা তো বটেই, এমনকি কণ্ঠের উপরও পর্দা আরোপ করেছে। এর কারণ কি?

মানুষের প্রবৃত্তি সম্পর্কে আল্লাহ জানেন। নারী আর পুরুষের সম্পর্কটা মোম আর আগুনের মতো। পাশাপাশি রাখলে নির্ঘাত বিপর্যয় ঘটবে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের অনেক ইসলামিস্ট ভাই-বোনও ফ্রি মিক্সিংকে সহজভাবে দেখতে চেষ্টা করেন। উপরের ঘটনা তিনটি তাদের হৃদয়ে জ্বালিয়ে যাক আলোকমশাল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture