অতীতের পাপের জন্য কি আলাদা তওবা করা জরুরি
অতীত জীবনের প্রতিটি পাপের জন্য কি আলাদা আলাদা তওবা করা জরুরি না কি সকল পাপের জন্য একবার তওবা করাই যথেষ্ট?
কোনও ব্যক্তি যদি বুঝে না বুঝে জীবনে বহু কবিরা গুনাহ করে থাকে। এমতাবস্থায় সবগুলো গুনাহের কথা তাঁর স্মরণেও না থাকে তবে তওবা করার ক্ষেত্রে কি প্রতিটি গুনাহের জন্য আলাদা আলাদা তওবা করতে হবে নাকি সকল গুনাহ থেকে তওবা করছি বললেই যথেষ্ট হবে?
কোন ব্যক্তি যদি শয়তানের প্ররোচনা বা কু প্রবৃত্তির তাড়নায় অন্যায়-অপকর্ম ও আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়, কবিরা গুনাহ করে এবং পরে ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হৃদয়ে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করে, ভবিষ্যতে জেনে-বুঝে আর কখনো আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে না মর্মে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে-সেই সাথে বেশি বেশি নেকির কাজ করে তাহলে আশা করা যায়, দয়াময় আল্লাহ তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মোচন করে তাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا
“তবে যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্ তাদের গুনাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা আল ফুরকান: ৭০)
তিনি আরও বলেন,
قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
“(হে নবী) আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”
(সূরা যুমার: ৫২ ও ৫৩)
তিনি আরও বলেন,
قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا إِن يَنتَهُوا يُغْفَرْ لَهُم مَّا قَدْ سَلَفَ
“(হে নবী) আপনি কাফেরদেরকে বলে দিন যে, তারা যদি বিরত হয়ে যায়, তবে অতীতে যা কিছু ঘটে গেছে সেগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।”
(সূরা আরাফ: ৩৮)
এ ছাড়াও বহু হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, দয়াময় আল্লাহ তাআলা তওবার মাধ্যমে বান্দার অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে দেন।
যেমন: ৯৯ জন মানুষ খুনকারীকে তওবার মাধ্যমে ক্ষমা করার হাদিস।
উল্লেখ্য যে, নিম্নাক্ত হাদিসটি খুবই প্রসিদ্ধ এবং অনেক বড় বড় আলেম তাদের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
তা হল:
«ألم تعلم أن التوبة تجبُّ ما قبلها»
“তুমি কি জানো না যে, তওবা অতীতের সকল গুনাহকে ধ্বংস করে দেয়?।”
কিন্তু শাইখ আলবানী এটিকে “ভিত্তিহীন বা আমি এর কোন ভিত্তি সম্পর্কে জানি না” বলেছেন। (সিলসিলা যঈফা/১০৩৯)।
তবে যাই হোক, এর মমার্থে কোন ভুল নাই-যা উপরোক্ত আয়াত সমূহ ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়। (আল্লাহ ভালো জানেন)
আহলে ইলমগণ বলেন,
أن التوبة من جميع الذنوب على سبيل الإجمال كافية
“সকল গুনাহ থেকে একসাথে তওবা করাই যথেষ্ট।”
ইবনে কাসির রহ. কুরআনের তওবা সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত (সূরা তওবা এর ৩৮, সূরা শুরা এর ২৫ এবং সূরা যুমার এর ৫৩ নং আয়াত) উল্লেখ করার পর বলেন,
هذه الآية الكريمة دعوة لجميع العصاة من الكفرة وغيرهم إلى التوبة والإنابة، وإخبار بأن الله يغفر الذنوب جميعا لمن تاب منها، ورجع عنها، وإن كانت مهما كانت، وإن كثرت وكانت مثل زبد البحر. اهـ.
“এই আয়াতগুলো সকল কাফের ও অন্য পাপিষ্ঠদেরকে তওবা ও প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছে আর এ তথ্য দিচ্ছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সকল প্রকার পাপাচার থেকে তওবা করবে এবং সেগুলো থেকে ফিরে আসবে তিনি তার সকল পাপরাশী ক্ষমা করা দিবেন-যদিও তা প্রচুর পরিমাণ হয়- যদিও তা সাগরের ফেনার মত হয়।”
কুরআনের আয়াত, হাদিস ও আলেমদের বক্তব্যের আলোকে প্রমাণিত হল যে, মানুষ যদি তার অতীতের সকল গুনাহের জন্য অনুপ্ত হয়ে খাঁটি হৃদয়ে, সত্যিকার ভাবে এবং তওবার শর্তাবলী ঠিক রেখে আল্লাহর কাছে তওবা করে এবং তাঁর পথে ফিরে আসে তাহলে তিনি তার সকল পাপাচার মোচন করে তাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন।
পাপের পরিমাণ, সংখ্যা ও ভয়াবহতা যাই হোক না কেন। [অবশ্য মানুষের হক নষ্ট করা হলে মালিকের নিকট তা প্রত্যর্পণ করা বা তার নিকট ক্ষমা না নেয়া পর্যন্ত সাধারণ তওবা-ইস্তিগফার দ্বারা তা মোচন করা হবে না] প্রতিটি গুনাহের জন্য আলাদা আলাদা তওবা করা আবশ্যক নয়।
নিশ্চয় আল্লাহ পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু, ক্ষমাশীল এবং তিনি তওবা কারীদেরকে ভালবাসেন। আল্লাহু আলাম।
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
আমিন।