ইসলামের দৃষ্টিতে পূজা উৎসবে টাকা দেওয়ার বিধান

বিভিন্ন এলাকায় ইদানিং পুজো উৎসবের জন্য সনাতন ধর্মীয় ভাইয়েরা মুসলিমদের থেকে চাঁদা কালেকশন করছেন বাজারের দোকানপাট ও ব্যক্তি বিশেষে। ব্যাপারটি সম্পর্কে উভয়পক্ষের স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণে হাজারো মুসলিম জাতি মনের অজান্তে ‘শিরক’ এর সাথে একাত্ম হয়ে পড়ছেন।

ইসলামে অন্য ধর্মাবলম্বী যে কাউকে অসহায়/ অভাবী হলে তার ভরণপোষণের জন্য দান/সদকা করা জায়েজ। অন্য ধর্মাবলম্বী বাস্তুহারাদের ঘরবাড়ি নির্মাণ বৈধ। তাদের সাথে সৌজন্যতা রক্ষার্থে চলাফেরা/লেনদেন করা সবকিছু বৈধ। তবে তাদের পুজো বা ধর্মীয় উৎসবে একটা পয়সা প্রদান করাও সম্পূর্ণ হারাম। এতে সর্বস্তরের সকল ফোকহায়ে কেরাম/মুহাক্কিক/মুফতি ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।
এবার দেখুন দলিল হিসেবে কুরআন কি বলে—

“وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ-
আর তোমরা গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সাহায্য করো না।”
[সুরা আল মায়িদা: ০২]

দারুল উলুম দেওবন্দের ১৫২৬৪ নং ফতোয়া কি বলে দেখুন-
“পূজা হিন্দুদের একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাদের প্রোগ্রামে চাঁদা দেয়া কুফর, শিরক এবং নাজায়েয কাজে সাহায্য করার নামান্তর। এটা কুরআনের আলোকে সম্পূর্ণ নাজায়েয।”
এছাড়াও ৬২৪৬৪ ও ৬৩৯৫০ নং ফতোয়ায় বলা হয়,
“হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাও হারাম। পরস্পর সম্পর্কের ভিত্তিতে হোক অথবা চাপে পড়ে; কোনো অবস্থাতেই যাওয়া জায়েয নয়। ঘুরেফিরে দেখার জন্যও যাওয়া যাবে না।”
উপরোক্ত ফতোয়াদ্বয়ের স্বপক্ষে উনারা কুরআনের এই আয়াতটি নিয়ে আসেন–

وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّار-
আর পাপিষ্ঠদের (কাফিরদের) প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে।”
[ সুরা হুদ: ১১৩]

এছাড়া হযরত উমর রাঃ এর বরাত দিয়ে একটি হাদিস রয়েছে এরকমই-
”لا تدخلوا عليهم في كنائسهم يوم عيدهم، فإن السخطة تنزل عليهم-
‘তোমরা কাফির-মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সেই সময় তাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে।”1

হানাফির প্রখ্যাত ইমাম আবু হাফস আল কাবির এর মতে–
“যদি কোনো ব্যক্তি পঞ্চাশ বছর আল্লাহর ইবাদত করে, অতঃপর সে যদি মুশরিকদের উৎসবের সময় সেই দিনকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কোন মুশরিককে অথবা তাদের উৎসবে কিছু উপহার/অর্থ দেয়, তবে সে কুফরি করেছে এবং নিজের সমস্ত আমল ধ্বংস করেছে।”2

সুতরাং, অমুসলিমদের ভাত-কাপড়, ঘরবাড়ি নির্মানের বা চিকিৎসার জন্য দান করা যাবে কিন্তু ধর্মীয় উৎসবের জন্য মোটেও না।
রাসুল সঃ একবার এক ইহুদি বালককে অসুস্থ হয়ে পড়ার দরুন দেখতে যাওয়ার কথা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৫৭]

সিদ্ধান্ত: যেখানে পূজোপার্বন বা অমুসলিমদের উপাসনালয়ে যাওয়াটাও বারণ করা হয়েছে হাদিসে সেখানে চাঁদা দেওয়াটা রীতিমত হারাম এবং শিরকি কাজে সহযোগিতার নামান্তর, গুনাহে কবীরা। এখানে অতি চালাকির সাথে ফাঁকফোকর বের করার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করছিনা।
আরেকটি ব্যাপার হলো–
অমুসলিমদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু না করতে স্বয়ং আল্লাহর বারণ রয়েছে। দেখুন—

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا۟-
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের ক্ষতি করতে দ্বিধা করবেনা।3

কুরআনের অন্যত্র রয়েছে–
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”4

“মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না।”5
“অমুসলিমদের সাথে কোনরুপ বন্ধুত্ব করা বা আপন করে নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম।”6

আপনি কাকে বন্ধু করবেন সেটাও মহান রব পষ্ট বলে দিয়েছেন–
“তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র।”7

সুতরাং,
একচুয়াল বা ভার্চুয়াল যে লাইফেই হোক না কেন, জেনেশুনে বন্ধু নির্বাচন করবেন। মনে রাখবেন, অমুসলিমদের সাথে আপনি সাধারণ চলাফেরা এবং সৌজন্যতা রক্ষা করতে পারবেন। (তবে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে মেনে নিতে পারবেন না।)

  1. মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক/ ১৬০৯, বায়হাকী, সুনানুল কুবরা/ ১৮২৮৮ ↩︎
  2. দুররুল মুখতার: ৬/৭৪৫- টিকা দ্রষ্টব্য ↩︎
  3. সুরা আলে ইমরান:১১৮ ↩︎
  4. সুরা আল-মায়েদা/আয়াত নং- ৫১ ↩︎
  5. সুরা মুমতাহিনা, আয়াত নং- ১৩ ↩︎
  6. ফাতহুল বারী ৩/২৬২, ফাতহুণ বারী ১০/১২৫, উমদাতুল কারী ২১/২১৮, আলবাহরুর রায়েক ৮/২০৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৮ ↩︎
  7. সূরা আল মায়িদাহ/আয়াত নং- ৫৫ ↩︎
Exit mobile version