টাকা – পয়সার ব্যাপার

কোনো একটি ব্যবসায় বিনিয়োগ করার আগে আমরা জানতে চাই, এটা থেকে কতো মুনাফা আসবে, কতোজন লভ্যাংশ পাবে ইত্যাদি। কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হয়তো আমাদের মাথায় আসে না। সেটা হলো- ব্যাবসাটা কি হালাল নাকি হারাম?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরকম একটি সময়ের ভবিষ্যতবাণী করেন। তিনি বলেন:

“শীঘ্রই মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন কেউ এই কথার পরওয়া করবে না যে, সে কোন পথে সম্পদ সংগ্রহ করলো- হালাল পথে নাকি হারাম পথে।”
[সুনানে আন-নাসাঈ: ৪৪৫৪]

আপনি হয়তো ভাবছেন, এই টপিকটি রামাদ্বানের আলোচনার সাথে কিভাবে প্রাসঙ্গিক?
রামাদ্বানের সাথে এটার প্রাসঙ্গিকতা এতোটাই বেশি যে, আমরা হয়তো সেটা কল্পনাও করতে পারছি না। আমরা যদি হারাম সম্পদকে আমাদের ঘরে ঢুকাই, তারমানে আমরা এমন এক শত্রুকে আমাদের ঘরে স্বাগত জানালাম, যে শত্রু আমাদের ধ্বংস ডেকে আনবে। হারাম সম্পদ এমন এক জিনিস, যা থেকে কোনো রকম দুর্গন্ধ ছড়াবে না, কিন্তু আস্তে আস্তে সবকিছুই ধ্বংস করে দিবে, আমরা বুঝতেই পারবো না!

রামাদ্বানে নিশ্চয়ই আপনি অনেক দু’আ করবেন, তাই না? কিন্তু, আপনার উপার্জন হারাম হলে আপনার দু’আ কবুল হবে কিভাবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন একজন লোকের উদাহরণ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন:

“এক লোক দীর্ঘ সফরে বের হলো। তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, কাপড়ে ধুলোবালি মিশে আছে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে দু’আ শুরু করলো- ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, সে হারামভাবে লালিত-পালিত হয়েছে; এ অবস্থায় তার দু’আ কিভাবে কবুল হবে?”
[সহীহ মুসলিম: ১০১৫]

এই হাদীসে দেখুন, দু’আ কবুলের অনেকগুলো শর্ত লোকটি পূরণ করেছে। সে একজন মুসাফির, মুসাফিরের দু’আ কবুল হয়, সে হাত তুলে আল্লাহর কাছে কাকুতি করছে, এটাও দু’আ কবুলের শর্ত; তবুও তার দু’আ কবুল হচ্ছে না! কারণ, তার উপার্জন হারাম।


রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সাহাবী ছিলেন সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। আল্লাহ তাঁর দু’আ সবসময় কবুল করতেন। তাঁর এমন গুণের পেছনে সিক্রেট কী ছিলো? তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন:
“আমি এমন কোনো খাবার কখনো খাইনি, যেটার উৎস সম্পর্কে আমার জানা নেই।”
অর্থাৎ, তিনি কখনো কোনো হারাম খাবার খাননি, যেটা দু’আ কবুলের অন্যতম শর্ত। আপনার উপার্জন যদি হারাম হয়, আপনার ইবাদাত কবুলের অন্যতম অন্তরায় হিশেবে এটাই যথেষ্ট।

ইমাম গাজ্জালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
“হারাম কিছু খেয়ে ইবাদাত করার মানে হলো একটি বিল্ডিংয়ের ভিত্তি স্থাপন না করে শুধু একতলা-একতলা করে বিল্ডিং বানানোর মতো!”

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন:
“আল্লাহ সেই ব্যক্তির দু’আ কবুল করেন না, যার শরীরের হারামে পুষ্ট।”

আপনার উপার্জনের উৎস যদি হারাম হয়, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে সেটা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করা আপনার প্রায়োরিটি লিস্টের প্রথমে থাকা উচিত।

পরিবর্তনের রামাদ্বান (১১তম পর্ব)

আরিফুল ইসলাম

Exit mobile version