কোরআন মজিদে বর্ণিত সাতটি পাপ

ইসলামে পাপ হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক ইসলামবিরুদ্ধ কাজ। আল্লাহর কোনো আদেশ না মানা ও কোন নিষেধ থেকে নিজেকে বিরত না রাখাই মূলত পাপ। কোরআন মাজিদে সাতটি পাপের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
হাদিসের ভাষায়:

أنه قال: اجتنبوا السبع الموبقات -يعني: المهلكات- قلنا: وما هن يا رسول الله؟ قال: الشرك بالله، والسحر، وقتل النفس التي حرم الله إلا بالحق، وأكل الربا، وأكل مال اليتيم، والتولي يوم الزحف، وقذف المحصنات الغافلات المؤمنات.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বেঁচে থাক। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কি?

তিনি বললেন-

১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা,
২. জাদু করা,
৩. বিনা কারণে কাউকে হত্যা করা,
৪. সুদ খাওয়া,
৫. ইয়াতিমের মাল খাওয়া,
৬. জেহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা,
৭. সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া। (বুখারি শরীফ হাদীছ নং ৬৮৫৭)

আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা

শিরক খুবই ভয়াবহ গুনাহ। এই শিরকের অপরাধকে কখনো ক্ষমা করবেন না আল্লাহ মহান। যত কবিরা গুনাহ রয়েছে শিরক সবচেয়ে মারাত্মক কবিরা গুনাহ

শিরক দুই প্রকার: الشرك الأكبر বা বড় শিরক। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোন প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী জবেহ করা ইত্যাদি।যদি কোন ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরিক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শিরক।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।
[সূরা নিসা : ৪৮]

দ্বিতীয়তঃ. الشرك الأصغر বা ছোট শিরক। রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ .
অতএব দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।
[সূরা মাউন : ৫-৬]

রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন :

أٍنا أغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا اشرك معي فيه غيري تركته وشركه
আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরিক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শিরকে ছেড়ে দেই।
[মুসলিম শরীফ : ৫৩০০]

জাদু করা

জাদু মারাত্মক পাপ। জাদু একটি কুফরি ও ধ্বংসের কাজ। জাদু কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। গোপন অদৃশ্য উপকরণকে কাজে লাগিয়ে অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে কারিশমা দেখানোকে জাদু বলে। জাদুবিদ্যা অর্জনের জন্য অদৃশ্য উপকরণ বলতে গ্রহ-নক্ষত্র, জিন-শয়তানের সহায়তা লাভ করতে কুফরি, শিরকি ও পাপাচারকে অবলম্বন করা। যার মাধ্যমে অদৃশ্যভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করা হয়।

জাদুর কারণে মানুষের নেক আমলগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। জাদুকরদের জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই বলে কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। এটি কবিরা গোনাহ।
আর তা কুফরি কাজের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে জাদুকর এবং জাদু করা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেছেন-

وَاتَّبَعُواْ مَا تَتْلُواْ الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُواْ لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْاْ بِهِ أَنفُسَهُمْ لَوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ
‘তারা ওই শাস্ত্র বা বিদ্যার অনুসরণ করল, যা সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলাইমান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শেখাত।

তবে তারা (হারুত-মারুত) উভয়ই একথা না বলে কাউকে (জাদু) শেখাত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হইও না।অতপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তাদ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না, যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালোরূপে জানে- যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্মবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।’
[সূরা বাকারা : ১০২]

বিনা বিচারে হত্যা

«إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِآيَاتِ اللهِ، وَيَقْتُلُوْنَ النَّبِيِّيْنَ بِغَيْرِ حَقٍّ، وَيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ، أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ أَعْمَالُـهُمْ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَا لَـهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ»
‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াত ও নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করে, অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা ন্যায় ও ইন্সাফের আদেশ করে তাদেরকেও। (হে নবী) তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। এদেরই আমলসমূহ ইহকাল ও পরকালে নষ্ট হয়ে যাবে এবং এদেরই জন্য তখন আর কেউ সাহায্যকারী হবে না’’।
[সূরা আ’লি ’ইমরা’ন : ২১-২২]

হত্যা ইসলামে জঘন্য অপরাধ। কেননা মানুষ হত্যা মানবতা হত্যার শামিল। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘একজন মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে যে পর্যন্ত না সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়।
[বুখারি ও মুসলিম শরীফ]

আনাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ: الْإِشْرَاكُ بِاللهِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَوْلُ الزُّوْرِ، أَوْ قَالَ: وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ.
*‘‘সর্ববৃহৎ কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে চারটি: আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন: হয়তো বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মিথ্যা সাক্ষী দেয়া’’।
[বুখারী শরীফ হাদীছ নং ৬৮৭১; মুসলিম শরীফ হাদীছ নং ৮৮]

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَنْ يَزَالَ الْـمُؤْمِنُ فِيْ فُسْحَةٍ مِّنْ دِيْنِهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا.
‘*‘মু’মিন ব্যক্তি সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে যতক্ষণ না সে কোন অবৈধ রক্তপাত করে’’।
[বুখারী শরীফ হাদীছ নং ৬৮৬২]

কেউ কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করলে গুনাহ্’র কিয়দংশ আদম আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম এর প্রথম সন্তান কাবিলের উপর বর্তাবে। কারণ, সেই সর্ব প্রথম মানব সমাজে হত্যাকান্ড চালু করে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا، إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لِأَنَّهُ اَوَّلُ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ.
‘‘কোন মানুষ অত্যাচার বশত: হত্যা হলে তার রক্তের কিয়দংশ আদম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম এর প্রথম সন্তানের উপর বর্তাবে। কারণ, সেই সর্ব প্রথম মানব সমাজে হত্যা কান্ড চালু করে’’।
[বুখারী শরীফ হাদীছ নং ৩৩৩৫,৭৩২১; মুসলিম শরীফ হাদীছ নং ১৬৭৭]

সুদ খাওয়া

ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদ সমাজের এক চরম ব্যাধি। সুদের ভয়াল থাবায় দরিদ্র মানুষ আরও দারিদ্র্যের চরমসীমায় নেমে যায়। সমাজে চলে আসে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অসমতা।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,

**اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ جَآءَهٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ فَانۡتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ ؕ وَ اَمۡرُهٗۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ **.
যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।
[সূরা বাকারা : ২৭৫]

হাদিসে বর্ণিত আছে,
জাবির রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহীতা, দাতা ও সুদি কারবারের লেখক এবং সুদি লেনদেনের সাক্ষী, সবার ওপর লানত করেছেন।
সুদের শাস্তির কঠোরতা বিচারে নিচের হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সুদের গুনার ৭০টি স্তর রয়েছে, তার মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে আপন মাকে বিয়ে (মায়ের সঙ্গে জেনা) করা।’
[সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীছ নং ২২৭৪]

ইয়াতিমের সম্পদ খাওয়া

মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করা বা আত্মসাৎ করাই নিষিদ্ধ। আর কেউ যদি এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে তবে তা আরো জঘন্য অপরাধ বিবেচিত হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
যারা ইয়াতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’
[সূরা নিসা : ১০]

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,

‘এতিম পরিণত বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না। তবে সদুপায়ে (সম্পদের উন্নতি করার লক্ষ্যে) তা ব্যবহার করা যাবে। আর প্রতিশ্রুতি পূরণ করো। কেননা (কিয়ামতের দিন) প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’
[সূরা বনি ইসরাঈল আয়াত নং ৩৪]

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন

ইসলামে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজ। ইসলামে বিশ্বাসঘাতকতা হারাম বা কবিরাহ গোনাহ। কুরআনুল কারিমে এ কাজের শাস্তি জাহান্নাম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُواْ زَحْفاً فَلاَ تُوَلُّوهُمُ الأَدْبَارَ – وَمَن يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلاَّ مُتَحَرِّفاً لِّقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزاً إِلَى فِئَةٍ فَقَدْ بَاء بِغَضَبٍ مِّنَ اللّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ.
‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখি হবে, তখন পশ্চাৎপসরণ (পলায়ন) করবে না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে পশ্চাৎপসরণ করবে (পালিয় যাবে), অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তনকল্পে কিংবা যে নিজ সৈন্যদের কাছে আশ্রয় নিতে আসে, সে ব্যতীত অন্যরা আল্লাহর গজব সঙ্গে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হলো জাহান্নাম। বস্তুত সেটা হলো নিকৃষ্ট অবস্থান।
[সূরা আনফাল : ১৫-১৬]

নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ

সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া ইসলামে হারাম বা কবিরা গোনাহ। দুনিয়াতে অপবাদের অপরাধ প্রমাণিত হলে রয়েছে কঠিন শাস্তির ঘোষণা। আর পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি।
আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ – إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতপর স্বপক্ষে চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদের আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও (কোনো বিষয়ে) তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই নাফারমান। কিন্তু যারা এরপর তওবা করে এবং সংশোধিত হয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।’
[সূরা নুর : ৪-৫]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
لَـمَّا نَزَلَ عُذْرِيْ ؛ قَامَ رَسُوْلُ اللهِ عَلَى الْـمِنْبَرِ، فَذَكَرَ ذَلِكَ، وَتَلَا الْـقُرْآنَ، فَلَمَّا نَزَلَ ؛ أَمَرَ بِرَجُلَيْنِ وَامْرَأَةٍ ؛ فَضُرِبُوْا حَدَّهُمْ.
‘‘যখন আমার পবিত্রতা সম্পর্কে কুর‘আন নাযিল হলো তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তা সাহাবাদেরকে তিলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। অতঃপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে দু’জন পুরুষ তথা হাস্সান বিন্ সাবিত আন্সারী ও মিস্ত্বাহ্ বিন্ উসাসাহ্ এবং একজন মহিলা তথা হা’ম্নাহ্ বিন্ত জা’হাশকে আশিটি করে বেত্রাঘাত করতে আদেশ করেন। অতএব তাদেরকে সে পরিমাণ বেত্রাঘাত করা হয়’’।
[আবূ দাউদ ৪৪৭৪; তিরমিযী ৩১৮১; ইবনু মাজাহ্ ২৬১৫]

কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা এ অপরাধের বিধান ও শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কুরআনের এসব বিধানই প্রমাণ করে যে, এ থেকে বিরত থাকা কতটা জরুরি।যারা সতী-সাধ্বী কোন মহিলাকে ব্যভিচারের অপবাদ দিলো; অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারেনি তাদের প্রত্যেককে আশিটি করে বেত্রাঘাত করা হবে, কারোর ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তখন থেকে তাদের পরিচয় হবে ফাসিক।

লিখেছেন

ক্ষণিকে চাওয়ার মাঝে তোমার জীবন,
রঙিনের মাঝে একো না
তুমি তোমার দেহ মন।

Exit mobile version