ইসলামি শিষ্টাচার হোক ফ্যাশন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ—

কারো সাথে দেখা হলে, কথার শুরুতে, অনুমতি নেবার সময়, বিদায় নিতে সময়ে বলুন এটা। অর্থ হচ্ছে আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ হতে রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হাই না বলে, সালাম দিন। এতে আপনার অনেক সাওয়াবও হবে। সালাম দেবার সময় হাত উত্তোলন করবেন না এবং পা ছুঁয়েও সালাম করবেন না। এগুলো বিদয়াত। তবে হ্যাঁ, যাকে সালাম দিচ্ছেন সে যদি বধির হয় অথবা লোকটা দূরে থাকে, তাহলে তাকে ইশারার জন্য হাত উত্তোলন করা যেতে পারে।

ওয়ালাইকুমুস্সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্—

সালামের শব্দের চেয়ে জবাবের শব্দ একটু বাড়িয়ে দিবেন। আসসালামু আলাইকুম বললে আপনি জবাবের সময় ওয়া রাহমাতুল্লাহ পর্যন্ত বাড়িয়ে বলুন। ওয়া রাহমাতুল্লাহ পর্যন্ত বললে আপনি ওয়া বারাকাতুহ পর্যন্ত বাড়িয়ে বলুন। সালামদাতাকে শুনিয়ে জবাব দিন। হ্যালো না বলে, সালাম ও জাওয়াব দিন। এতে আপনার সাওয়াবও হবে। অর্থ হচ্ছে— আপনার উপরেও আল্লাহর পক্ষ হতে বরকত, রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
সালাম ও জাওয়াবের শব্দ ওয়া বারাকাতুহু পর্যন্তই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বাকি ওয়া মাগফিরাতুহু ওয়া জান্নাতুহু এই ধরনের যে কথাগুলো বৃদ্ধি করা হয়, সেগুলো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে দুয়াবাক্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

আহলান সাহলান—

আরবী ভাষার মাধুর্য সত্যি তুলনাহীন। কোনো মেহমানের আগমন হলে, তাকে সাদর সম্ভাষণ জানাতে স্বাগত বা ওয়েলকাম ইত্যাদি না বলে আহলান সাহলান বলুন। মোবারকবাদ বা খোশ আমদেদও বলা যেতে পারে। আহলান সাহলান অর্থ হচ্ছে— আপনি আপনার পরিবারের কাছে এসেছেন এবং আপনি তাদেরকে আপন করে নিয়েছেন। কত সুন্দর অর্থ!

আলহামদুলিল্লাহ—

কেমন আছেন? ভালো। এভাবে না বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বলুন। সবসময়ই আল্লাহ পাক যে অবস্থায় রেখেছেন তার জন্য প্রশংসা করুন। আপনি হয়তো আপনার অবস্থাকে খারাপ বলে জানছেন, কিন্তু হয়তো সেটাই আল্লাহ পাক আপনার জন্য ভালো হিসেবে নির্ধারণ করে রেখেছেন। কৃতজ্ঞ বান্দা সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে।
মাশা-আল্লাহ

কোনো একটা সুন্দর বস্তু বা ব্যক্তিকে দেখে এটা বলুন। অর্থ হচ্ছে আল্লাহ পাক যেমন চেয়েছেন। এতে নজরও লাগে না। বস্তুত আল্লাহর প্রত্যেকটা সৃষ্টিই সুন্দর। অনুধাবনের শুধু পার্থক্য। কিছু সৌন্দর্য আমাদের বোধগম্য। আর কিছু আমাদের বোধের জগতের বাইরে। সমস্ত সুন্দরের প্রশংসা শুধু আল্লাহরই।

ইন শা আল্লাহ—

ভালো কাজ করবার জন্য, কিংবা কারো কাছে ওয়াদা দেবার সময় বলুন— ইন শা আল্লাহ! অর্থ হচ্ছে যদি আল্লাহ চান তবেই। আল্লাহ পাক চাইলেই সম্ভব। বান্দার ইচ্ছায় কিছুই হয় না। তাই কৃতজ্ঞ বান্দা আল্লাহর কাছেই হাওয়ালা করে নিজেকে।

জাযাকাল্লাহু খায়রান—

কারো থেকে সামান্য উপকৃত হলেও, তার প্রতিদান দিতে চেষ্টা করুন। আর তার জন্য উত্তম দুয়া হচ্ছে এটাই— জাযাকাল্লাহু খায়রান। অর্থ হচ্ছে আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। ওয়া আহসানাল জাযা, ফিদ দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ, এগুলোও বৃদ্ধি করে বলা যায়। শোকরান বা শোকরিয়াও বলা যায়। তবে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে জাযাকাল্লাহ। থ্যাংকস বা ধন্যবাদ না বলে জাযাকাল্লাহ বলুন।

আফওয়ান—

ভুল হয়ে গেলে কিংবা ছোট থেকে ছোট অসঙ্গতি হলেও আফওয়ান বলুন। আপনার থেকে কেউ যেন সামান্যতম কষ্টও না পায়। অর্থ হচ্ছে আপনার থেকে আমি ক্ষমা আশা করছি। হাসিমুখে কথা বলুন। হাসিমুখে কথা বলাটাও পুণ্য। আর স্যরি বা দুঃখিত না বলে আফওয়ান বলুন।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন—

কোনো দুঃসংবাদ শুনলে অথবা কারো মৃত্যুর খবর শুনলে বলুন এটা। অর্থ হচ্ছে আমরা আল্লাহর জন্য আর আল্লাহর কাছেই আমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আল্লাহর হুকুমেই সবকিছু হয়। তাই হা-হুতাশ না করে, আল্লাহর কাছেই সোপর্দ করুন নিজেকে। কৃতজ্ঞ বান্দা তো এমনই হয়। কেউ অসুস্থ হলে বলুন— শাফাকাল্লাহ। আল্লাহ আপনায় সুস্থ করুন। লা বা’সা তুহরুন ইন শা আল্লাহ। চিন্তা করো না, সুস্থ ও নিরাপদ হয়ে যাবে।

ফি আমানিল্লাহ—

কেউ দোয়া চাইলে অবশ্যই তার জন্য দুয়া করবেন। সেজন্য ফি আমানিল্লাহ এতটুকু অন্তত লোকটাকে শুনিয়ে বলুন। পরবর্তী সময়ে মুনাজাতে তাকে স্মরণ করতে যদিও ভুলে যান, ওই যে দুয়া করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সে দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকবেন আপনি। এবং বিদায়ের সময় আল্লাহর হাওয়ালা করে দিয়ে বলুন— আল্লাহ হাফীয। আল্লাহর চেয়ে কে আছে উত্তম রক্ষাকর্তা!

গুডবাই। বাই বাই। টা টা। এসব না বলে ফি আমানিল্লাহ এবং আল্লাহ হাফীয বলুন। ফি আমানিল্লাহ অর্থ আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলাম এবং আল্লাহ হাফীয অর্থ আল্লাহই রক্ষাকর্তা।

লিখেছেন

লেপে দাও ভালোবাসা মনের মাঝে
আঘাত না পাক কেউ কথায় কাজে

Exit mobile version