আরাফার দিনের দু’আ

আরাফাতের দিন

বছরের শ্রেষ্ঠ দিনটির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা। আল্লাহ সুবহানু ওয়াতায়ালার সম্মানিত মেহমানরা এখন মিনাতে অবস্থান করছেন। তারা আরাফার ময়দানে সমবেত হবেন। আরাফার ময়দানের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টা আগামীকাল বারোটার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আর বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। প্রতি বছরে এই একটা দিনের এই কয়েকটা ঘণ্টা প্রত্যেকটা মুসলিমের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সময়।

ইহুদীরা ওমর রাঃ কে বলল, তোমরা কুরআনের এমন একটা আয়াত তেলাওয়াত করো যদি সে আয়াতটা আমাদের মাঝে নাজিল হতো তাহলে আমরা সেদিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। ওমর রাঃ বলেন, নিশ্চয়ই আমি জানি সে আয়াতটি কোনটি , কখন কোথায় নাযিল হয়েছে। সেদিনটি ছিল আরাফাতের দিন। আল্লাহর শপথ আমরা তখন রসূল সাঃ এর সাথে আরাফাতে ছিলাম। সে আয়াটি হচ্ছে,

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
( সূরা মায়েদা : ৩)

আরাফার দিন নিয়ে সূরা বুরুজের তিন নাম্বার আয়াতে আল্লাহ এভাবে শপথ করেছেন।

এবং সেই দিবসের যে উপস্থিত হয় ও যাতে উপস্থিত হয়।

আরাফাতে অবস্থান করাই হলো হজ। (সুনান নাসাই,৩০৪৪ )। আরাফাত দিনটি মূলত হজের দিন।

আয়েশা রাঃ হতে বর্ণিত নবী সাঃ বলেছেন, আরাফাতের দিবসের চেয়ে আর কোন দিবসে আল্লাহ এত মানুষকে আগুন হতে মুক্তি দেন না। এদিন তিনি নিকটবর্তী হন এবং তাঁর ফেরেশতাদের গর্ব করে জিজ্ঞেস করতে থাকেন এই মানুষগুলো কি চায় ?
(মুসলিমঃ৩৩৫৪)

আরাফাতের দিন এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটা কিভাবে কাজে লাগাবো আমরা?

রসূল সাঃ বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তা বিগত এক বছর, আগত এক বছরের গুনাহ মিটিয়ে দেবে।
(মুসলিম :১১৬২)

আরাফাতের দিন ফজরের পর থেকে তাকবীর শুরু শেষ হবে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত।

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু , আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।

তোমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে।
(সূরা বাকারা :২০৩)

যে ব্যক্তি এদিন নিজের কান, চোখ এবং জিহ্বাকে হেফাজত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (মুসনাদে আহমদ)

সর্বোত্তম দোয়া হল আরাফার দিনের দোয়া। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীরা এ দিনে যে দোয়া করেছি তার মধ্যে সর্বোত্তম হল,

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির ।
(তিরমিযীঃ৩৫৮৫)

হজের খুতবা শোনা। এ বছর থেকে বাংলায়ও সেটা প্রচার করা হবে। বাংলাদেশ সময় আনুমানিক সাড়ে তিনটা।

বেশি বেশি সেজদা করা। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত ,ইস্তেগফার ,দরুদ পাঠ। আর মনের যত ভাল চাওয়া আছে সব দেওয়ার একমাত্র মালিকের কাছে চেয়ে নেওয়া। বেশি বেশি সেজদা করা।

পাপ করতে করতে আমাদের অন্তর পাথর হয়ে গেছে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আমি যে কত বড় পাপী সে বোধশক্তি মরে গেছে। চোখের কোনে এক ফোটা জল আমার সারা জীবনের সকল অপরাধ ক্ষমার কারণ হয়ে যেতে পারে, যদি আল্লাহ চান।

আবু কাতাদাহ রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরাফার দিনের রোজার ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তিঁনি বলেন, “আরাফার দিনের রোজা বিগত ও সামনের এক বছরের গুনাহ সমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬২)

তিঁনি আরও বলেন ‘‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আরাফার দিনে আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’’
[সহিহ মুসলিম: ৩৩৫৪, নাসাঈ: ৩০০৩]

এখন প্রশ্ন হলো,আরাফার রোযা কবে রাখবো?

এই বিষয়টি নিয়ে যেহেতু মতভেদ আছে, তাই আমরা ৮ এবং ৯ জিলহজ্জ এই দুই দিনেই রোযা রাখবো ইনশাআল্লাহ।
তাহলে, নিশ্চিত ভাবেই আমরা আরাফার রোযা পেয়ে যাবো। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি প্রথম নয় দিনেই রোযা রাখতেন।

আরাফার রোযার নিয়ত কিভাবে করবো?

নিয়ত মুখে বলা বা অন্তরে বলার বিষয় নয়, অন্তরের সুদৃঢ় ইচ্ছাই হলো নিয়ত।

আরাফার দিনের দোয়া

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “শ্রেষ্ঠ দো‘আ হচ্ছে আরাফাত দিবসের দো‘আ। আর আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছি তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

উচ্চারণঃ লা~ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।

অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

বি:দ্রঃ দু’আটা যেকোন সময় পড়তে পারবেন, বিশেষভাবে আরাফাহ্ দিবসে পড়ার কথা এসেছে।
[তিরমিযী নং ৩৫৮৫]

এছাড়াও আল্লাহর বড়ত্ত্ব ও মহত্ত্ব প্রকাশক যেকোন শব্দ, আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল আলহামদুলিল্লাহি কাছিরা, সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি, সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি- সুবহানাল্লাহিল আযিম, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা~ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়তে পারেন।

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدوَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

একমাত্র আল্লাহ্‌ ছাড়া কোনো হক্ক ইলাহ নেই, তার কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

‘আরাফার দিনের দু'আ
‘আরাফার দিনের দু’আ

আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) কর্তৃক পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরাফাতের দিনের দু’আই উত্তম দুআ। আমি ও আমার আগের নাবীগণ যা বলেছিলেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কথাঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”।
আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
হাদিস নম্বরঃ ৩৫৮৫

আমার প্রিয় রব, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, আমার সবচেয়ে বড় অভিভাবক, আমার মহান প্রতিপালকের সাথে নিরিবিলি অল্প সময় হলেও কথা বলবো, চেয়ে নেব আমার সবকিছু।
ইনশাআল্লাহ।

Exit mobile version