প্রকৃত বন্ধু পর্ব – ০৯

বাড়ির পাশের আম বাগানে বাঁশের তৈরি বানানো বৈঠক খানায় বসে গল্প করছিলাম আমি আর আদিব। টপিক হলো ‘ফিলিস্তিনে হামলা।’ তবে আদিব থেকে যে ইনফরমেশন পেলাম তাতে অনেকটা অবাক হয়েছি, আফসোসও করেছি। কেন মুসলিম জাতি আজ নির্যাতিত, নিপীড়িত, অপদস্ত! তো চলুন শুরু করি।

ফেসবুকে ক্রলিং করছিলাম। মসজিদে আক্বসার, গাজায় নিহতের ছবি, ফিলিস্তিনের পোস্ট ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছেনা। হতাশার দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে বললাম, আহ! আজ মুসলিম জাতি পদে পদে অপদস্ত! একসময় মুসলিম জাতির কথা শুনতেই বাতিলের অন্তর ছিলো ভয়ে প্রকম্পিত।

আমার কথা ঠিকই আদিব খেয়াল করলো। আদিব বলল, আজ মুসলমানদের দুরাবস্থার কারণ কী জানিস?
না।
এর একটি মাত্র কারণ হলো— আমরা আল্লাহর দেওয়া বিধান রাসুলের কৃত সুন্নাহ থেকে অনেক অনেক দূরে সরে গেছি।
সেটা কী?
সেটা হলো ‘জিহাদ’।
হুম ঠিক বলেছিস! আজ জিহাদ কী জিনিস আমরা ভুলেই গেছি।

জিহাদের সঠিক সংজ্ঞা অনেকেই জানেনা। কারণ, জিহাদ নামক কোন অধ্যায় আমাদের স্কুল কলেজে নেই। অথচ এটা মুসলিম রাষ্ট্র। এই জিহাদই হলো মোমিনের আত্মমর্যাদা, সম্মান। রাসূলের যুগে সবাই ছিলো জিহাদমুখী। একবার রাসূল সা. জিহাদের জন্য সাহাবী সিলেক্ট করছিলেন। সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাড় করালেন।

এমন সময় একছোট ছেলে জিহাদে যাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ালেন। ছেলেটি ছিলো সবার ছোট। জিহাদে যাওয়ার উপযুক্ত উচ্চতা হয়নি তাঁর। কিন্তু বুকে ছিল জিহাদের প্রখর তামান্না। যেন সে জিহাদ ছাড়া কিছুই বুঝেনা। ছেলেটি নিজেকে পায়ের আঙুলের উপর ভর করে নিজের উচ্চতা বাড়ানোর ব্যার্থ প্রয়াস চালান। সুবহানাল্লাহ! শুধু জিহাদে যোগ দিয়ে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কেমন আগ্রহ ছিল!

হুম। এখনো অনেক যুবকের মাঝে জিহাদের তামান্না আছে। শুধু জিহাদের পরিবেশ নেই।

একথা সম্পূর্ণ ভুল। জিহাদের পরিস্থিতি নিজেদেরই তৈরি করতে হবে। তবে তাঁর জন্য শর্ত হলো ব্যাক্তির গোলামী ছেড়ে আল্লাহর গোলামী করতে হবে। তুই একটা জিনিস দেখনা, এই ভুবনে ক্ষমতাবান মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে অনেক। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার যথার্থ সামর্থ্যবানও তাঁরা। কিন্তু তাঁরা জিহাদের ডাক দিচ্ছেনা। কেন জানিস?

একমাত্র আমেরিকার গোলামী করছে বলে। আর না হয় সৌদি আরবের মতো ক্ষমতাবান রাষ্ট্র থাকতে ফিলিস্তিনে হামলার স্বপ্ন কেউ ভুলেও দেখতে পারতোনা। কিন্তু আজ স্বপ্নকে তাঁরা বাস্তবায়নও করে ফেলেছে। যদি ক্ষমতাবান মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আমেরিকার গোলামী না করে এক আল্লাহর গোলামী করে, মুসলমানদের বিজয় নিশ্চিত।

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত— আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেনঃ), যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত অন্যকোন ছায়া থাকবে না, সে দিন আল্লাহ তা’আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। তন্মধ্যে একপ্রকার হলো, ন্যায়পরায়ণ শাসক।

আজ ব্যাক্তিদাসত্ব, লোভ আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। ইসলামের পতাকা উত্তোলনের চেয়ে নিজের ক্ষমতার গদির চিন্তা বেশি করছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ইসলাম বিরোধী কাজে তাঁদের অন্তরে কম্পন সৃষ্টি হচ্ছেনা। ক্ষমতার লোভকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। তাহলে মুসলমান বীরের মতো বাঁচতে পারবে। আর না হয় একদিন এই মুসিবত আমাদের উপরও আসবে। কেউ টেরই পাবেনা।

মুসলমানদের ইতিহাস পড়লে অনুধাবন করতে পারবি, মুসলমানদের কোন কিছুই জিহাদ ছাড়া হয়নি। এবং জিহাদের বিকল্প আর রাস্তা নেই যে, তা অবলম্বন করবে। যারা বাকস্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ায় তাঁদের মূলত টার্গেট হলো ইসলাম। বাকস্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতার কথাও কিন্তু ইসলামে আছে। কিন্তু তাঁরা বুলি আওড়ায় পশ্চিমাদের। যাদের মূল টার্গেট হলো ইসলামকে নির্মুল করার। ইসলামের বাকস্বাধীনতায় কোন ধর্মকে আঘাত করতে পারেবেনা। কিন্তু পশ্চিমাদের বাকস্বাধীনতায় ইসলামকে বার বার আঘাত করছে।

বাকস্বাধীনতার নামে রাসূলকে অবমাননা করা, রাসূল সা. কে হেয় করা, রাসূল সা. এর ব্যাঙ্গচিত্র করা, বাকস্বাধীনতার নামে ইসলামের বিভিন্ন দিক নিয়ে আপত্তিকর কথা বলা, আপত্তিকর মন্তব্য করা ইত্যাদি যা একজন মোমিনের রক্তক্ষরণ হওয়ার যন্ত্রণা হয়। আর এই বাকস্বাধীনতা হলো পশ্চিমাদের, যা আমাদের মধ্যে ধারণ করছি।

সত্যি ভাই, আমার ইচ্ছে করে এখনি জিহাদে যোগ দিই। আল আক্বসাকে মুক্ত করি।

আমি চায় প্রতিটি যুবকের অন্তরে এই তামান্না থাকুক। তবে আমরা চায়লে তাঁদের পাশে বাংলাদেশ থেকেও দাঁড়াতে পারি। কীভাবে জানিস?
কীভাবে সম্ভব?
কোথায় ফিলিস্তিন আর কোথায় বাংলাদেশ?

সবি সম্ভব।
হুম, হ্যাশট্যাগ দিয়ে বুঝি।
হ্যাশট্যাগ দিয়ে না অর্থ দিয়ে।
কীভাবে?

বিকাশ এপ্সে ফিলিস্তিনের সহোযোগিতার জন্য একটি অপশন চালু করেছে। সবাই নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।অবশ্যই আমি সহযোগিতা করবো। আমাকে শিখিয়ে দিবি কিন্তু।

অবশ্যই দিবো।

প্রকৃত বন্ধু সিরিজ
প্রকৃত বন্ধু পর্ব-০৯

লিখেছেন

আল্লাহর দেওয়া অবয়ব মোদের রতন হ্যায় অমূল্য, যাহার নেই বা হারিয়েছে যেই বুঝিবে তাঁহার মূল্য।

Exit mobile version