যে সাহাবী ফ্রিতে কিছু নেননি

মদীনায় একেবারে খালি হাতে গিয়েছিলেন একজন সাহাবী। তাঁকে ফ্রি-তে অফার দেয়া হয়েছিলো একটি বাগান, কোটি টাকার প্রপার্টি।
কিন্তু, তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “মদীনার বাজারটি কোথায়? আমাকে বাজারের রাস্তাটি দেখাও।”

মদীনার বাজারে গিয়ে তিনি ঘি ও পনিরের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তী ঘোড়ার ব্যবসা করেন।
কোটি টাকার প্রপার্টি ফ্রি-তে পেয়েও গ্রহণ না করা সেই সাহাবী যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭৭০ কোটি টাকা!

তিনি ছিলেন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু, দুনিয়ার বুকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী

কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় সেটার উদাহরণ খুঁজতে গেলে আপনি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে পাবেন৷

‘মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই’ এই কথার সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সা’দ ইবনে রাবি’আ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি ছিলেন মদীনাবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী। আব্দুর রহমান ইবনে আউফের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সাথে ভ্রাতৃত্ববন্ধনের পর তিনি তাঁকে বলেন:

“আমার দুটো বাগান আছে, দুইজন স্ত্রী আছে। দুটো বাগানের মধ্যে যেটি তোমার পছন্দ হয় সেটি আমি তোমাকে দিয়ে দেবো। আর আমার দুই স্ত্রীর মধ্যে যে স্ত্রীকে তোমার পছন্দ হয় আমি তাকে তালাক দিয়ে দেবো, তাঁর ইদ্দত পূরণ হলে তুমি তাঁকে বিয়ে করে নিও।”

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা:) ফ্রী-তে কোনো কিছু নিতে ইচ্ছুক না। সা’দ ইবনে রাবি’আর (রা:) এমন আন্তরিক প্রস্তাবের জবাবে তিনি তাঁর জন্য দু’আ করেন, ‘আল্লাহ আপনার ধন সম্পদ এবং পরিজনের মধ্যে বরকত দান করুন’ এবং সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেন-

‘দুল্লানি আলাস সূক- আমাকে শুধু বাজারের পথটি দেখিয়ে দিন’।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
ওপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত হলো দাতার আর নিচের হাত হলো ভিক্ষুকের।
[সহীহ বুখারী: ১৪২৯]

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা:) তাঁর হাতকে উত্তম হাত হোক সেটা চাইলেন। ফ্রী তে কিছু নেবার পরিবর্তে নিজে উপার্জন করার জন্য ছুটলেন মদীনার বাজারে। শুরু করলেন ঘি এবং পনিরের ব্যবসা। অল্প দিনেই তিনি অনেক লাভ করেন এবং এক আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেন।
[সহীহ বুখারী: ৩৭৮১]

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার দিনার। এটাকে যদি গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডে ধরে টাকায় রূপান্তর করা হয়, তাহলে সেটা দাঁড়ায় প্রায় ৭৭০ কোটি টাকা!

তিনি মদীনায় হিজরতের সময় ছিলেন রিক্তহস্ত। তখনো বিয়ে করেননি, বয়স তাঁর ৪০ বছর।

বাকি ৩০ বছরে তিনি ব্যবসা করে এতো সম্পদ উপার্জন করেন। এতো এতো দান-সাদকার পরও তাঁর কাছে রয়ে যায় ৭৭০ কোটি টাকা।

এমন না যে তিনি দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে দ্বীনদারিতা ভুলে গেছেন। তিনি সেই সৌভাগ্যবান সাহাবী, যিনি দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ পান।

বর্তমান সময়ে কেউ কেউ মাসে ১ লক্ষ টাকা উপার্জন করলে আল্লাহকে ভুলে যেতে চায়, নামাজ পড়ার সময় পায় না। অথচ দুনিয়ার বুকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবীর মধ্যে কমপক্ষে চারজন ছিলেন কোটিপতি।

তারা কিভাবে ব্যালেন্স করেন?
এটা আমাদের শিখতে হবে।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version