স্ত্রীর পক্ষ স্বামীকে যাকাত প্রদানের বিধান

স্বামীর যদি অনেক ঋণ থাকে এবং বউ যদি কাজ করেন আর তা কাছে যাকাত দেওয়ার মতো টাকা এবং সোনা-গহনা ইত্যাদি থাকে তাহলে সে কি তার স্বামীকে ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাতের টাকা থেকে কিছু দিতে পারবে?
এটা কতটুকু জায়েজ হবে?

হ্যাঁ, স্ত্রী সম্পদশালী হলে তার ঋণগ্রস্ত স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে।

কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে এমন গরিব-অসহায় ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া জায়েজ যাদের ভরণ-পোষণ দেয়া যাকাত দাতার জন্য ফরয নয়। যেমন: পিতা, মাতা, স্ত্রী প্রমুখকে যাকাত দেয়া যাবে না। কেননা তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া ফরয

কিন্তু ভাই, বোন, চাচা, চাচী, ফুফা, খালু, মামা ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেয়া যাবে যদি তারা যাকাত পাওয়ার হকদার হয়।

এমন কি স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় আর স্বামী ঋণগ্রস্ত হয় আর আর্থিক অভাবে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় তাহলে তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারে। শরিয়তে এতে কোনো বাধা নেই। কেননা, স্বামীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্ত্রীর জন্য ফরয নয়।

এ মর্মে হাদিস হল:

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ إِلَى الْمُصَلَّى ثُمَّ انْصَرَفَ فَوَعَظَ النَّاسَ وَأَمَرَهُمْ بِالصَّدَقَةِ فَقَالَ ‏”‏ أَيُّهَا النَّاسُ تَصَدَّقُوا ‏”‏‏.‏ فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ ‏”‏ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّي رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ ‏”‏‏.‏ فَقُلْنَ وَبِمَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ‏”‏ تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ، مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ ‏”‏‏.‏ ثُمَّ انْصَرَفَ فَلَمَّا صَارَ إِلَى مَنْزِلِهِ جَاءَتْ زَيْنَبُ امْرَأَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ تَسْتَأْذِنُ عَلَيْهِ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذِهِ زَيْنَبُ فَقَالَ ‏”‏ أَىُّ الزَّيَانِبِ ‏”‏‏.‏ فَقِيلَ امْرَأَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ‏.‏ قَالَ ‏”‏ نَعَمِ ائْذَنُوا لَهَا ‏”‏‏.‏ فَأُذِنَ لَهَا قَالَتْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّكَ أَمَرْتَ الْيَوْمَ بِالصَّدَقَةِ، وَكَانَ عِنْدِي حُلِيٌّ لِي، فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِهِ، فَزَعَمَ ابْنُ مَسْعُودٍ أَنَّهُ وَوَلَدَهُ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَلَيْهِمْ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ صَدَقَ ابْنُ مَسْعُودٍ، زَوْجُكِ وَوَلَدُكِ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتِ بِهِ عَلَيْهِمْ ‏”
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতর দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সদকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেন:

“লোক সকল! তোমরা সদকা দিবে। তারপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেন: মহিলাগণ তোমরা সদকা দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন: তোমরা বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণ কারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি।”

যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন।

বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল, যায়নাব এসেছেন।
তিনি বললেন, কোন যায়নাব?
বলা হল, ইবনে মাস’উদের স্ত্রী।
তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও।
তাকে অনুমতি দেওয়া হল।

তিনি বললেন: হে আল্লাহর নবী, আজ আপনি সা’দকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সা’দকা করব ইচ্ছা করেছি। ইবনে মাস’উদ (রাঃ) (তার স্বামী) মনে করেন, আমার এ সদকায় তাঁর এবং তার সন্তানদেরই হক বেশী।

তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ইবনে মাস’উদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। “তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সদকায় অধিক হকদার।”

সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর: [1377]
অধ্যায়ঃ ২১/ যাকাত (كتاب الزكاة)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন

Exit mobile version