শিক্ষকতা নাকি ব্যাংকের পেশা উত্তম

আমি বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। সম্প্রতি একটি শরীয়া ব্যাংক আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকে ভালো পদে বেতনে চাকরি হয়েছে। এমত অবস্থায় আমার কোনটি বেছে নেয়া উচিত?
উল্লেখ্য এই দুটি চাকরির কোনটি আমি চূড়ান্ত ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাই না, যদি আল্লাহ তাআলা সরকারি প্রথম শ্রেণীর একটি হালাল চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। ভাই আমার আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যেটাই থাকুক না কেন, আমি বলতে চাই ব্যাংকের চাকরির বিপরীতে যদি শিক্ষকতার চাকরি পাওয়া যায়, সন্দেহাতীতভাবে শিক্ষকতার চাকরিকে ব্যাংকের চাকরির উপরে প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত, অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

প্রথমত আমাদের মানসিকতার মধ্যে একটা জিনিস সেট হয়ে গেছে যে, আমাদের অনেক টাকা দরকার, এই জিনিসটা আমাদের সবার মানসিকতার মধ্যে সেট হয়ে গেছে, ভোগবাদী পৃথিবী, পৃথিবীটাকে এমনভাবে সাজিয়েছে, যে এখানে সবাই টাকা পয়সা কামাই করতে পারলে নিজেকে মনে করে আমি সাকসেস আমি সফল। মানুষ সুখের পথ এটা নিশ্চিত করবার জন্য যতটা চেষ্টা করে তার চেয়ে বেশি টাকা কামাই করার চেষ্টা করে। অনেক কাজ আছে যে কাজে টাকা নাই কিন্তু সুখ আছে। এখন এই পৃথিবীতে অবশ্য আমরা চিন্তাও করতে পারি না টাকা না থাকলে আবার সুখ থাকে কেমনে?

টাকা ছাড়া আবার সুখ হয় কিভাবে?
আমরা চিন্তাই করতে পারি না। এখানে চলে আসে নবী (স.) হাদিস। যেখানে তিনি বলেছেন,
অনেক সম্পদ এটার মালিক হয়ে যাওয়া, এটা মূলত ধনী হওয়া নয়, আসল ধনী হওয়া হলো মানসিকভাবে ধনী হওয়া, কেউ কোন মানুষ যদি অল্প পেয়ে সে যদি বলে আলহামদুলিল্লাহ, আমারটা যা পাইছি এটা নিয়ে আমি অনেক সুখী আমার আর চাহিদা নাই আল্লাহর কাছে আমার তৃপ্তি আছে, আমি আল্লাহকে শুকরিয়া জানাই আমার আর দরকার নাই, এই লোকটা ধনী।

কারণ তার আর অভাব নাই, তার অন্তরে কোন সংকীর্ণতা নাই সে ধনী, আরেকজনের অনেক আছে, কিন্তু এরপরও তার যদি আরো চাহিদা থাকে তাহলে সে ধনী না, সে মূলত গরীব, কারণ অভাব আছে।

তো এজন্য কিছু কিছু কাজ আছে যে কাজে টাকা নাই, কিন্তু প্রচন্ড তৃপ্তি আছে যেমন শিক্ষকতা, আমি একজনকে একটা জিনিস শিখাবো। কিছু মানুষকে কিছু জিনিস শিখাবো। তারা ভালো কিছু শিখবে। তাদের জীবন গঠন করবে। আমি একজন স্কুলের শিক্ষক হব। স্কুলের ছেলে মেয়েদের বাচ্চাদেরকে আমি পাঠদানের ফাঁকে ফাঁকে তাদের মধ্যে ভালো মানুষ হওয়ার প্রেরণা এটা জাগ্রত করে তুলব। হয়তো একটা বাচ্চা ছেলে সে আমার সঠিক গাইডলাইন পেয়ে আল্লাহমুখী হয়ে যাবে। ভালো মুসলিম হবে, ভালো মানুষ হবে। তাহলে আমি এখানে একটা ভালো ইনপুট দিতে পারলাম।

এর আউটপুট আসবে খুব ভালো কিছু আশা করা যায়। এখানে টাকা একটু কম হলেও বেতন একটু কম হলেও সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সমাজে একটু আমার অবস্থান ওরকম বেশি স্ট্রং না হলেও এটা আমার জন্য তৃপ্তিদায়ক, সুখকর। এর বিপরীতে আরেক জায়গায় আমি সার্ভিস দিচ্ছি কোম্পানিকে। বিনিময়ে কিছু টাকা পাচ্ছি। সেখানে আসলে সমাজ ব্যক্তি মানুষের প্রতি আমার কোন বিশেষ অবদান থাকছে না। তৃপ্তিদায়ক চক্ষু শীতলকারী কোন এচিভমেন্ট কোন অর্জন হচ্ছে না। তাহলে সেই চাকরির তুলনায় আমার অবশ্যই ওই চাকরিকে প্রায়রিটি দেওয়া উচিত।

যেখানে তুলনামূলকভাবে আমার এচিভমেন্ট অর্জনটা বেশি হয়। ক্যারিয়ার সাজাতে গিয়ে আমাদের এইভাবে যদি ভাবি তাহলে আমরা সুখী হব তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। একটা চাকরিতে আমি অনেক টাকা পয়সা কামাই করলাম। কিন্তু সেখানে আসলে আমার তেমন কোন আপনার তৃপ্তিদায়ক কোন অর্জন থাকলো না। যেটা দিয়ে আমার আসলে চক্ষু শান্ত শীতল হতে পারে। মন প্রশান্ত হতে পারে সেরকম কোন অর্জন হলো না। টাকা অনেক হলো। তো মনের শান্তিটা আল্লাহ তাআলা এটা দিয়ে দিবেন না। শরীরের শান্তি এটা হয়তো টাকা দিয়ে কিছুটা হতে পারে কিন্তু মনের শান্তি আসল শান্তি সেটা আল্লাহ তাআলা দিবেন না।

এজন্য শিক্ষকতার পেশাকে অবশ্যই প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত। তাছাড়া ইসলামী ব্যাংকগুলোতে, ইসলামী ব্যাংকিং পরিপূর্ণভাবে হয় কিনা কতখানি হয় সেটা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে, ধোঁয়াসা আছে এবং বড় ধরনের প্রশ্ন করার সুযোগ আছে। তো আমি সন্দেহের ঊর্ধ্বে ওঠার সুযোগ যদি থাকে তাহলে সন্দেহের মধ্যে কেন ঢুকতে যাব?
একটু বেশি টাকার জন্য একজন ঈমানদার টাকার পরিমাণ না দেখে তিনি তার তাকওয়ার জন্য কোনটা বেশি অনুকূল সেটাকে দেখবেন সেই চেষ্টা করবেন। অতএব আশা করি যে আপনি এখান থেকে আপনার করণীয় বা আপনার কি করা উচিত সে সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে গেছেন।

Exit mobile version