সাহাবীদের প্রিয় ঋতু কোনটি

নবী এবং সাহাবীদের চোখে শীতকাল
শীত শুধু আমাদের প্রিয় ঋতু, তা কিন্তু নয়। আমাদের কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় অনেক বড় মাপের মানুষেরাও শীতকে ভীষণ পছন্দ করতেন।

নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব কাছের একজন সাহাবি ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। শীতকে তিনি পছন্দ তো করতেনই, রীতিমতো স্বাগত জানাতেন! কী বলতেন?

“শীত, তোমাকে স্বাগতম!”
[লাতাইফুল মাআরিফ, ১/৩২৭]

আমরা কিন্তু যে কাউকে বিশেষভাবে বরণ করি না। যাঁরা আমাদের ভীষণ প্রিয়, যাঁদের আগমন অনেক বেশি প্রত্যাশিত ও আকাঙ্ক্ষিত, তাঁদেরকে আলাদা সম্বোধন ও সম্ভাষণে স্বাগত জানাই, বরণ করি। ইবনু মাসউদও তেমনই। শীত ঋতুর জন্যে তিনি অপেক্ষা করতেন। যখনই চলে আসত, তাঁর উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ত সাদর সম্ভাষণের মধ্য দিয়ে।

মুআজ ইবনু জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন আরেকজন বড় সাহাবি। তিনি আবার অনেক সাহাবির শিক্ষকও। মৃত্যুশয্যায় তিনি হঠাৎ কাঁদতে আরম্ভ করলেন। উপস্থিত সবাই জানতে চাইলেন, আপনি কেন কাঁদছেন?
তিনি জানালেন, তিনটি জিনিসকে বিশেষভাবে ‘মিস’ করবেন, এই ভেবে তাঁর অশ্রু ঝরছে। সেই তিনটির একটি ছিল, শীতের রাতগুলো তিনি ফিরে পাবেন না [লাতাইফুল মাআরিফ, ১/৩২৭]।

কী আছে এই শীতের রাতে? তার জন্যে কান্না-ই বা করতে হবে কেন?

এঁরা দুজন উদাহরণ মাত্র। আরও অনেক সাহাবি, তাবিয়ি ও পুণ্যবান মানুষদের প্রিয় ঋতু ছিল শীত। শীত-কে শুধু শীতের কারণে পছন্দ করতেন, তা নয়; তাঁরা শীত-কে ‘বসন্ত’ হিসেবে দেখতেন। তাঁরা দেখতে শিখেছেন নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে।

নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

“শীত ঋতু মুমিনের জন্য বসন্তকাল।”
[মুসনাদ আহমাদ: ১১৭১৬ (ইমাম হাইসামি-র মতে, সনদ হাসান। দেখুন- মাজমাউয যাওয়াইদ: ৭/৩৮৮)]

ওমা, এ কেমন কথা! বসন্ত একটা ফুল্ল-ফুলেল ঋতু, ওদিকে শীত এলে তো গাছের পাতাটুকুও অবশিষ্ট থাকে না! বসন্তে চারিদিকে গান আর ঘ্রাণ, শীত শুষ্ক আর নিষ্প্রাণ। দুটো কি কখনও এক হয়?

আলবৎ হয়! কীভাবে, দেখুন।

এই ঋতুতে দিনগুলো ছোটো হয়। কেউ যদি নফল রোজা রাখতে চায়, সহজেই রাখতে পারে। গ্রীষ্মের মতো দাবদাহ নেই, ফলে অতিরিক্ত পিপাসার শঙ্কা নেই। দিনগুলো অত বড় নয়, ক্ষুধায় রুগ্ণ হয়ে পড়ার ভয়ও নেই।

আবার শীতকালে রাতগুলো বেশ দীর্ঘ হয়। যাঁরা আল্লাহর প্রিয় হতে চায়, তাঁরা রাতের শেষভাগে সালাত আদায় করার জন্যে সব সময় মুখিয়ে থাকেন, সচেষ্ট থাকেন। অনেক সময় ঘুমের কারণে এই ইচ্ছায় ছেদ পড়ে। কিন্ত শীতের রাতগুলো বেশ দীর্ঘ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমিয়ে তারপর জায়নামাযে দাঁড়ানো যায়।

দেখা যাচ্ছে, শীত ঋতুতে দিনটা সাওমের উপযোগী। রাতটা সালাতের অনুকূলে। ইবাদাতের ফুল ফোটে সারাক্ষণ। আল্লাহর কাছাকাছি হবার প্রবর্তনা সুর বাঁধে অনুক্ষণ। ঘ্রাণে আর গানে মুখরিত এমন সময়টাকে ‘বসন্ত’ না বললে কি মানায়? এমন স্বর্ণপ্রসূ বসন্তকে ভালো না বেসে উপায়ই বা কোথায়?

আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব ভাইয়ের ‘মেঘপাখি‘ বই থেকে।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version