রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দুআটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন:
নিম্নে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সর্বাধিক পঠিত দুআ এবং তার সংক্ষিপ্ত অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো:
আনাস রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অধিকাংশ দুআ ছিল:
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: আল্ল-হুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাহ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াক্কিনা ‘আযাবান্নার।
“ হে আল্লাহ, হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব (শাস্তি) থেকে রক্ষা করো।”1
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
মূলত এটি সূরা বাকারার ২০১ নম্বর আয়াত (শুরুতে আল্ল-হুম্মা শব্দটি ছাড়া)। এই দুআ আমাদের নিকট সুপরিচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুআ ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর অর্থবোধক। সেই দুআয় দুনিয়া ও আখিরাত—উভয় জীবনের কল্যাণকেই তিনি অন্তর্ভুক্ত করতেন।
১. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির রাহ. বলেন,
الحسنة في الدنيا تشمل كل مطلوب دنيوي ، من عافية ، ودار رحبة ، وزوجة حسنة ، ورزق واسع ، وعلم نافع ، وعمل صالح ، ومركب هنيء ، وثناء جميل ، إلى غير ذلك مما اشتملت عليه عبارات المفسرين ، ولا منافاة بينها ، فإنها كلها مندرجة في الحسنة في الدنيا . وأما الحسنة في الآخرة فأعلى ذلك دخول الجنة وتوابعه من الأمن من الفزع الأكبر في العرصات ، وتيسير الحساب وغير ذلك من أمور الآخرة الصالحة ، وأما النجاة من النار فهو يقتضي تيسير أسبابه في الدنيا ، من اجتناب المحارم والآثام وترك الشبهات والحرام .
“দুনিয়ার ‘কল্যাণ’ বলতে বোঝানো হয়েছে—শারীরিক সুস্থতা, প্রশস্ত বাসস্থান, ভালো জীবনসঙ্গিনী, পর্যাপ্ত রিজিক, উপকারী জ্ঞান, সৎ আমল, আরামদায়ক যানবাহন, মানুষের প্রশংসা—এবং তাফসির কারকগণ যেসব ব্যাখ্যা করেছেন, সেগুলোর সবই এতে অন্তর্ভুক্ত। এর কোনও ব্যাখ্যার সঙ্গে অন্য ব্যাখ্যার বিরোধ নেই। কারণ এগুলোর সবই দুনিয়ার কল্যাণের আওতায় পড়ে।
আর ‘আখিরাতের কল্যাণে’র মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—জান্নাতে প্রবেশ করা। এর সঙ্গে আরও আছে—মহাসংকটের দিন (কিয়ামতের ময়দান) নিরাপদ থাকা, সহজ হিসাব, এবং আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণকর ব্যাপারগুলো।
আর জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার অর্থ হলো—আল্লাহ যেন আমাদের এমন পথ দেখান, যা সেই আগুন থেকে বাঁচায়। এর মধ্যে রয়েছে—পাপাচার থেকে দূরে থাকা, হারাম ও সন্দেহজনক বিষয়গুলো পরিহার করা এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।” [তাফসিরে ইবনে কাসির]
২. আল্লামা শাইখ আব্দুর রাহমান বিন নাসের আস সাদি রাহ, বলেন,
والحسنة المطلوبة في الدنيا يدخل فيها كل ما يحسن وقعه عند العبد, من رزق هنيء واسع حلال, وزوجة صالحة, وولد تقر به العين, وراحة, وعلم نافع, وعمل صالح, ونحو ذلك, من المطالب المحبوبة والمباحة. وحسنة الآخرة, هي السلامة من العقوبات, في القبر, والموقف, والنار, وحصول رضا الله, والفوز بالنعيم المقيم, والقرب من الرب الرحيم، فصار هذا الدعاء, أجمع دعاء وأكمله, وأولاه بالإيثار, ولهذا كان النبي صلى الله عليه وسلم يكثر من الدعاء به, والحث عليه.
“দুনিয়ার প্রত্যাশিত ‘হাসানাহ’ (কল্যাণ) বলতে এমন সব বিষয় বোঝানো হয়েছে—যা একজন মানুষের কাছে কল্যাণকর ও কাঙ্ক্ষিত বলে বিবেচিত হয়। যেমন:
হালাল ও প্রশান্তি পূর্ণ প্রশস্ত রিজিক, নেককার জীবনসঙ্গিনী, চক্ষু শীতল কারী সুসন্তান, মানসিক প্রশান্তি, উপকারী জ্ঞান, সৎ আমল—এবং এর মতো অন্য সব পছন্দনীয় ও বৈধ চাওয়া-পাওয়া।
আর আখিরাতের ‘হাসানাহ’ (কল্যাণ) হলো—
কবরের আজাব, কিয়ামতের ভয়াবহতা ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিরাপত্তা, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, চিরস্থায়ী জান্নাতের নিয়ামত অর্জন এবং পরম দয়ালু রবের সান্নিধ্য লাভ করা।
এই দুআটি এতটাই পরিপূর্ণ ও সারগর্ভ যে, এটিকে বলা যেতে পারে—
সবচেয়ে ব্যাপক, পূর্ণাঙ্গ ও অগ্রাধিকারের যোগ্য দুআ।
এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুআটি খুব বেশি পড়তেন এবং অন্যদেরকেও এ দোয়া বেশি বেশি করার জন্য উৎসাহিত করতেন।”
[তাফসিরে বিন সাদি]
আমাদের উচিৎ, অধিক পরিমাণে উক্ত দুআটি পাঠ করা। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
- সহিহ বুখারি, হা/ ৬৩৮৯, সহিহ মুসলিম, হা/২৬৯০ ↩︎