রাব্বাতুল বাইতের রাজসিংহাসন

বৃষ্টির ধারা টুপটাপ ঝরে পড়ে বারান্দার কার্নিশ বেয়ে। আকাশ যেন কান্নার শব্দে ভারী হয়ে উঠেছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে স্নিগ্ধতা, আবার কোথাও বা বিষাদ। এমন এক ভোরবেলা, যখন কফির কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়াই, চোখে পড়ে তাঁকে—সেই নারীকে, যিনি প্রতিদিন আমার বাসার সামনের গলিপথ পেরিয়ে হেঁটে চলেন।

চট্টগ্রামের লাগাতার বৃষ্টির মধ্যে, তাঁর হেঁটে যাওয়া এক বর্ণময় দৃশ্য—ভিজে রেইনকোর্ট, ভেজা আঁচল, এবং মুখে ক্লান্ত অথচ দৃঢ় এক অভিব্যক্তি। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তাঁর রেইনকোর্টের প্রান্ত থেকে ঝরে ঝরে রাস্তায় পড়ে, যেন রোজকার সংগ্রামের এক নিঃশব্দ কবিতা। প্রতিদিন সকালে যেভাবে ভিজতে ভিজতে কাজে যান, ঠিক সেভাবেই রাতে ফিরে আসেন—ভিজে, ক্লান্ত, কিন্তু পরাজিত নন।

আর আমি?

আমি তো তখন নরম কাঁথা মুড়ি দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি। আমার প্রিয় মানুষ, আমার স্বামী, সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা। আমায় বাইরে যেতে হয় না, রোদ্দুরের দাহ কিংবা বৃষ্টির নির্দয় স্পর্শ আমাকে ছুঁয়ে যায় না। আমি ঘরের রানী। হ্যাঁ, আমি সত্যিই রানীর মতো বাঁচি—আরাম, সম্মান আর নিরাপত্তার এক স্বর্গে।

এই দৃশ্য দেখে আমার অন্তর কেঁপে উঠে। চোখে জল আসে না, তবে হৃদয় ভরে যায় অশেষ কৃতজ্ঞতায়। সুবহানাল্লাহ! কী সম্মানই না দিয়েছেন আল্লাহ নারীদের! ঘরের রানী করে আমাদেরকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে রেখেছেন। সংসারের রাব্বা বানিয়েছেন—”রাব্বাতুল বাইত”—এই মহান উপাধির ভার দিয়েছেন। আমার স্বামী বাইরে যুদ্ধ করে ফিরে আসেন, আর আমি ঘরের শান্তি রক্ষা করি। এই যে পারস্পরিক দায়িত্ববোধ, এ তো এক পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা—যা কেবল ইসলামই দিয়েছে নারীদের।

আমি ভাবি, আজ যদি আমায় বের হতে হতো এই মুষলধারে বৃষ্টিতে, যদি আমায়ও রেইনকোর্ট পরে অফিসের দুশ্চিন্তা নিয়ে প্রতিদিন পথে নামতে হতো, তাহলে কি এতটা প্রশান্তি পেতাম?
এতটা তৃপ্তি নিয়ে কি কখনো কফির কাপটা হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকাতে পারতাম?
রবের শোকর আদায় করতে পারতাম?

না, এই আরাম, এই সম্মান, এই শান্তি—সবই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার দেওয়া উপহার।

তাই আজ, সেই ভেজা রাস্তায় ভিজতে থাকা নারীকে দেখে, আমার ভেতরে এক রাজরানীর অনুভূতি জেগে ওঠে। তবে সে অহংকারের রাজত্ব নয়, বরং কৃতজ্ঞতার সিংহাসন। আমি গর্বিত, আমি কৃতজ্ঞ, আমি ধন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাকে যেই মর্যাদা দিয়েছেন, তা অমূল্য।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা’র দরবারে হাত তুলে বলি,
“ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে গৃহের শান্তির প্রতীক বানিয়েছো, আমাদের রাজসিংহাসন ঘরের ভেতরে, তোমার এ নিয়ামতের জন্য হাজার শুকরিয়া।”

লিখেছেন

যাইনাব বিনতে মুহাম্মাদ আলী

ইসলামীক লেখক ও গবেষক
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
"Alhamdulillah For Everything"

All Posts

ইসলামীক লেখক ও গবেষক
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
“Alhamdulillah For Everything”

Exit mobile version