অনেকেই প্রশ্ন করেন, “কুরআন নিয়ে ইন-ডেপথ স্টাডি কিভাবে স্টার্ট করবো?
অনেকদিন লিখালিখি বন্ধ, তাই ভাবলাম আজ এটা দিয়েই শুরু করি।
তবে শুরুর আগে কিছু কথা, কুরআনের শব্দ গুলো সাধারণ কোনো শব্দ নয়, লিটারেলি সাত আসমান উপর থেকে আসা কিছু শব্দ, আর শব্দ গুলো কোনো যেনতেন লেখকের শব্দ না, লিটারেলি যিনি শব্দ সৃষ্টি করেছেন তার চয়নকৃত কিছু শব্দ।
আর সব কিছু তো এই শব্দ দিয়েই শুরু, জাস্ট একবার একটা শব্দটা উচ্চারণ করলেন,
“হও“
আর অমনি সব হওয়া শুরু করলো!
হ্যাঁ এমনি শক্তি তার শব্দে, তা জীবন সৃষ্টি করে, ঈমান বৃদ্ধ করে, চেইঞ্জ প্রডিউস করে, খুশি ছড়ায়, দুশ্চিন্তা দূর করে, আশা দেখায়, শক্তি জোগায়, শয়তানকে দূরে রাখে, টেম্পটেশনকে রোধ করে, হার্টকে ক্লিন করে এবং একটা অনন্ত কালের স্বপ্ন দেখায়!
তার এই সৃষ্টায়াইত শব্দগুলো থেকে বাছাই করা শব্দ নিয়ে এই মাস্টারপিস!
কোনো ভাবে যদি এই শব্দগুলোর প্রেমে পরে যেতে পারেন, দেখবেন এর থেকে বের হয়ে আসার আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না, ইনফেক্ট চাচ্ছেন না।
“এই শব্দের মাঝেই আছে স্পিরিচুয়াল নারিশমেন্ট”
আছে হার্ট হিল করার শক্তি, আছে ক্যারেক্টার বিল্ড করার শক্তি, আছে সিচুয়েশন পাল্টে ফেলার শক্তি, তাই প্রশ্ন আসতেই পারে, আজ প্রতিটা ঘরে এই শব্দের উপস্থিতিতে থাকা সত্ত্বেও পুরো উম্মাহ তাহলে কেন এমন স্পিরিচুয়াল মেলনিউট্রিশনে ভুগছে।
যেখানেই তাকাই সব খানে ওই একই অবস্থা, সবাই কেমন যেন এক অদ্ভুত ডিপ্রেশনে ভুগছে, দুঃখ দুশ্চিন্তা আর এনজাইটি যেন এক নিত্যদিনের সঙ্গী, কেন?
কারণ আমরা নিজেদেরকে এই শব্দ গুলো থেকে দূরে সরিয়ে ফেলছি, কথাটা রূপক আকারে বলছি না, লিটারেল অর্থেই বলছি।
এই মুহূর্তে যে কোনো যুগ থেকে কুরআনের কপি অনেক বেশি এভেইলেএবল, অথচ এই মুহূর্তে আমরা যেকোনো যুগ থেকে এই কুরআন থেকে আনএভেইলেএবল।
তাই বলি, শেল্ফের উপর উঠিয়ে রাখা কুরআন এভাবে থাকা আর না থাকা একই কথা।
আজ এর প্রয়োগ যেন শুধু রমজান কিংবা কেউ মারা যাওয়াতেই সীমাবদ্ধ।
খুব স্পেসিফিক করে নিয়েছি এর পাঠ্য সময়, তার থেকেও স্পেসিফিক করে নিয়েছি এর পাঠ্য রীতি, তোতা পাখির মতোই কিছু বাক্য মুখস্ত বলে যাবো আর ভাবনা এতেই যেন সব হয়ে গেলো।
যেখানে স্পিরিচুয়াল নারিশমেন্টের জন্য এই স্ট্যান্ডার্ড এর কোনো বিকল্প নেই।
সেখানে তা দূরে ঠেলে দিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি কালচার, ট্রেডিশন, লজিক কিংবা ইমোশন নামক কিছু ফ্লোড স্ট্যান্ডার্ড। কি ভাবে?
কালচারাল: সবাই করছে, সো এটাই ঠিক
ট্রেডিশন: বাপ দাদাদের দেখে আসছি সো এটাই ঠিক
লজিক: এটা লজিকাল সো এটা ঠিক
ইমোশন: আমি ফিল করছি এটাই ঠিক
এধরণের নানা অদ্ভুত মতবাদকে জাহির করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, অথচ আমরা বুঝি না যে, এই প্রতিটা বিকল্প স্ট্যান্ডার্ডই মেনুপুলেট করা সম্ভব।
আজ সেই ডিভাইন স্ট্যান্ডার্ড শেলফে উঠিয়ে রেখেছি, এর মূল কারণ হচ্ছে মিস রিপ্রেসেন্টেশন, একে আমাদের কাছে এমনভাবেই প্রেজেন্ট করা হয়েছে যে, আমরা এর উপর কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেছি, এখন আর আমরা একে কোনো অথরিটি হিসেবেই কনসিডার করি না, মনে করি এটা যেন প্যাসিভ একটা লিটারেচার, বুড়ো বয়সে বাপ দাদাদের মত চৌকির উপর বসে তেলওয়াত করার উপকরণ মাত্র।
তাইতো ইন্টেলেকচুয়ালি প্রশ্ন করি, এই মডার্ন এরাতেওঁ কি এই ১৪০০ বছর পুরোনো বই আমার জীবনে রেলিভেন্ট?
অথচ এই প্রশ্ন গুলো আসারই কথা ছিল না, এটা হওয়ার কথা ছিল ছিল আমাদের অথোরেটিভ স্টান্ডার্ড, হওয়ার কথা ছিল আমাদের মোরাল কম্পাস, হওয়ার কথা ছিল আমাদের প্রতিটা ডিসিশনের বেঞ্চমার্ক!
যাক আসি মূল প্রশ্নে, কুরআন নিয়ে যদি ইন ডেপথ স্টাডিস করতে চান তাহেল কিছু স্টাডি ফ্রেমওয়ার্কের লেয়ার গুলো আগে বুঝা দরকার, যেকোনো স্টাডিসেই এই লেয়ার লক্ষ্য করা যায়।
যেমনঃ ইগ্নোরিং লেয়ার: অর্থাৎ আপনি এই স্টাডিরই বিপক্ষে,
প্রিটেন্ডিং লেয়ার: অর্থাৎ আপনি ভাব দেখাচ্ছেন পড়ছেন, আসলে আপনি পড়ছেন না
সিলেক্টিভ লেয়ার: আপনি শুধু সেটাই পড়ছেন যেটা কোনো স্পেসিফিক অ্যাজেন্ডা সার্ভ করে
এটেনটিভ লেয়ার: এবার আপনি চেষ্টা করছেন মনোযোগ সহকারে পড়ার কিন্তু পুরোপুরি শিখছেন না
রিফ্লেক্টটিং লেয়ার: এটা হায়েস্ট লেয়ার, আপনি শুধু শিখছেনিই না, আপনি এখন এটা নিয়েই ভাবছেন আর অন্যদের শিখাচ্ছেন।
এই ইগ্নোরিং লেয়ার থেকে রিফ্লেক্টিং লেয়ারে আসার জন্য একাডেমিক্সরা ৫ টা ভিন্ন লেভেলের অ্যাপ্রোচ আইডেন্টিফাই করেন, অ্যাপ্রোচ গুলো হলো, রিসিভিং, রিডিং, রিসার্চিং, রিমেম্বারিং এন্ড রিফ্লেক্টিং।
প্রথমেই আসি রিসিভিং নিয়ে, সবার আগে আপনাকে একজন রিসিভার হতে হবে, অর্থাৎ আপনাকে আগে ওপেন মাইন্ডেড হতে হবে, যদি না হন পৃথিবীর সব থেকে বেস্ট লেকচারার লেকচার শুনলেও আপনার মনে হবে, এ সবই ফালতু আলাপ, পক্ষান্তরে আপনি যদি সত্যিকার অর্থে রিসিভিং স্টেটে থাকেন, তাহলে পৃথিবীর সব থেকে বোরিং লেকচারের মাঝেও আপনি ইসনপিরেশন খুঁজে পাবেন।
কারণ এটাই লো,
“এই বইয়ে তাদের জন্য উপদেশ রয়েছে যাদের নেয়ার জন্য উপযুক্ত হৃদয় আছে আর শুনার জন্য এটেনটিভ অ্যাটিচুড আছে” [৫০:৩৭]
এবার আসি দ্বিতীয় অ্যাপ্রোচ, রিডিং, আমাদের দেশে একটা সময় ছিল যখন কুরআন ছিল কিছু এলিট শ্রেণীতেই সীমিত, যারা শুধু আরবিতেই দক্ষ ছিল তারাই শুধু একে পড়তে পারতো, তবে এখন তো আর সেই এক্সকিউজ নেই, নানা রঙের নানা ঢঙের ট্রেন্সলেশন এখন হাতের নাগালে।
এতো এভেইল্যাবিলিটির মাঝেও আমরা প্রতিদিন তার জন্য একটা ডেডিকেটেড টাইম স্লট এলোকেট করতে ব্যর্থ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিউজ ফিড স্ক্রল করতে পারি, কিন্তু জাস্ট ১৫ টা মিনিট পড়ার জন্য টাইম বের করতে পারি না। কেন?
একটা রাফ কেল্কুলেশন করে দেখলাম, বেশি না, প্রতিদিন মাত্র এই ১৫ মিনিট যদি আমরা রেগুলারলি কোরআনের ট্রেন্সলেটশনটা পড়ি, তাহলে জাস্ট ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে আমরা একে কভার টু কভার খতম করতে পারি।
অর্থাৎ বছরে দু থেকে তিন বার ইসিলি রিভাইস করতে পারি!
প্রতিদিন একটু করে হলেও অনুবাদ পড়লে যেটা হবে, প্রতিদিন একটা মেন্টাল এক্সারসাইজ হবে, আপনি প্রতিদিন তার কথার প্রোক্সিমিটিটিতে থাকবেন, একটা বলয়ে থাকবেন, কারণ তার শব্দগুলোর নিজস্ব একটা শক্তি তো আছেই, আর এটা রিমাইন্ডার হিসেবেও কাজ করবে।
মোর ইম্পোর্টেন্টলি যখন আপনি এক থেকে দুবার শেষ করবেন, থার্ড টাইম থেকে এর অর্থ গুলো আপনি আরো ডিপলি বুঝা স্টার্ট করবেন।
তবে এই রেগুলার পড়াটা আমরা পড়ি না, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, শয়তান আমাদেরকে একটা ইনটেলেকচুয়াল ধোঁকা দিয়ে রেখেছে, ওয়াসওয়াসা দিয়ে রেখেছে যে,
“পড়ছিস তো পর, আরবিতে পড়, অনুবাদ পড়ার আর কি দরকার?
“এতে তো কোনো নেকি নাই”
“তুই তো নেকি লস করছিস, নেকীর পিছে ছুটতে গিয়ে আমরা আরবি শুরু করি, আর আরবি যেহেতু বুঝি না, খুব শীঘ্রই সেটার উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।
তাই বলি, নেক্সট টাইম যখন এই ওয়াসওয়াসা আসে, ৩ বার সূরা ইখলাস পরে নিয়েন, সাথে সাথে পুরো কুরআন খতমের নেকি পেয়ে যাবেন, দেখবেন ওয়াসওয়াসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে!
আবারো বলছি, আপনি যেই ভাষায়ই বুঝেন কোরআন সেই ভাষাতেই পড়বেন!
নিজের ভাষায় বুঝাটা যে কতটা ইম্পর্ট্যান্ট, এটা বুঝানোর জন্য তিনি তার এই বইতে ইনফর্ম করেন যে, তিনি যখনই কোনো জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছিলেন, নিজেদের ভাষাতেই পাঠিয়েছিলেন, যেন তিনি তাদেরকে পরিষ্কার ভাবে বুঝাতে পারে [১৪:৪]
আজ আমরা পরিষ্কার ভাবে না বুঝে নেকীর পিছে ছুটছি।
সো অ্যাকশন আইটেম: রেগুলার কোরান পড়ার জন্য একটা সহজ ট্রেন্সলেশন কিনে ফেলুন, প্রতিদিন ১৫ মিনিট এলোকেট করে ফেলুন, পসিবল হলে ডেইলি কোরান প্লেনার মেইনটেইন করুন।
কত কিছুই তো প্লেননারে ঢুকান, এবার না হয় এটাও একটা টাস্ক হিসেবে ঢুকিয়ে ফেললেন।
এবার আসি তৃতীয় অ্যাপ্রোচ -রিসার্চিং:
রিডিং আর রিসার্চের মধ্যে ফান্ডামেন্টাল পার্থক্য হলো, এক খানে আপনি শুধু পড়েই যান, আরেক খানে আপনি পড়ার পাশাপাশি চিন্তাও করেন, চিন্তা করে একটিভলি প্রশ্ন করেন, আর প্রশ্নের শেষে তার উত্তর খুঁজে বেড়ান।
আমাদেরকে তো এতদিন এই প্রশ্ন করাটাকেই নিরুৎসাহিত করা হতো, অথচ এই প্ৰশ্ন করাটাকে তিনি দারুন ভাবে ভালোবাসেন, তাই তো মমতা নিয়ে অ্যাডভাইস করেছেন, তোমরা না জানলে, যারা এক্সপার্ট তাদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন কর [২১:৭]
আর চিন্তা করার বিষয়ে বার বার বলেছেন,
“তারা কি কোরআন নিয়ে গভীরভাবে একটুও চিন্তা করে না? [৪৭:২৪]
রিসার্চের আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট হলো, কোরআনের পাশাপাশি অন্যান্য রেলিভেন্ট লিটারেচার পড়া, বিশেষ করে সিরাহ, নানা লেখকের নানা ভঙ্গিমার সিরাহ, কারণ সাহাবারা কোরআন বুঝেছেই এই সিরাহর মাধ্যমে, পার্থক্য শুধু তারা পড়েননি বরং এক্সপেরিয়েন্স করেছেন, তারা রাসুলকে জলজেন্ত চোখের সামনে দেখেছেন আর, উইটনেস করেছেন কখন কোন আয়াত কোন কনটেক্সে রিভিল হচ্ছে।
আজ আমাদের সেই সুযোগ নেই, তাই সিরাহই সম্বল, রাসুলের সিরাহ এমনকি সাহাবাদের সিরাহও।
সাথে পড়া চাই নানা ধরনের তাফসীর, ইনিশিয়ালি ছোট তাফসীর দিয়ে শুরু করেন তারপর গ্রেজুয়ালি ডিটেইল্ড তাফসীরে যান, আর পাশাপাশি পড়া চাই, নানা ধাঁচের সেলফ হেল্প জোনারের বই, সেগুলোতে আপনার পার্সপেক্টিভ বাড়বে, প্রতিটা আয়াতের ডেপ্থ আপনি ডিফারেন্ট ভাবে আনলক করতে পারবেন।
রিসার্চের আরেকটা দিক হলো ভেলিডেশন, কোরআনে যেই সাইন্টিক, হিস্টোরিক্যাল কিংবা মেথমেটিকাল ফেক্ট গুলো আছে তা ভেলিডেট করুন, যাচাই করে দেখুন এতে কোনো কন্ট্রাডিকশন আছে কিনা, আপনি খুঁজে পাবেন না, এবং তখন গিয়ে মনে মনে প্রশ করতে বাধ্য হবেন, ১৪০০ বছর আগে লিখা এই কথা গুলো কি করে পসিবল হলো?
তখন বিষয়টা সেলফ এভিডেন্ট হয়ে উঠবে যে, না এটাই সত্য, তখন একটা আয়াতের অর্থ আপনাকে অন্য ভাবে হিট করবে,
“তারা কি কোরআন নিয়ে চিন্তা করে না?
যদি এটি আল্লাহ ছাড়া কারও কাছ থেকে আসত তবে তারা এতে অনেক বিরোধ দেখতে পেত।” [৪:৮২]
রিসার্চের পর নেক্সট আপ্রোচ হলো রিমেম্বারিং,
অর্থাৎ যা রিসার্চ করলেন সেটা রিক্যাল করা বা মনে করা, এই মনে করাটাতে অনেক বেনিফিট, তিনি নিজে ঘোষণা দেন, “তাদেরকে মনে করাতে থাকো , কারণ এই মনে করিয়ে দেয়াতে মুমিনদের বেনিফিট আছে [৫১:৫৫]
রেমাইন্ডিং অন্যতম এর একটা টেকনিক হলো মুখস্থ করা, সো বেছে বেছে চুম্বক আকারের আয়াত গুলো মুখস্থ করা স্টার্ট করুন, আপনি হয়ত মনে করছেন, আপনি মুখস্থে খারাপ, কিছুও মনে রাখতে পারেন না, তাহলে জেনে রাখুন, আপনি ভুল, নিজেকে ধোকা দিচ্ছেন কেবল।
মার্ভেলের মুভির নাম তার এক্টরের নাম স্টোরি লাইন তো ঠিকই মনে থাকে, মনে থাকে ইম্পর্ট্যান্ট ডেট গুলো, তাহলে এটা কেন মনে থাকবে না, স্রষ্টার ওয়ার্ড কে যদি আপনি ইম্পর্ট্যান্ট মনে করেন আপনি ঠিকই মনে রাখতে পারবেন।
হ্যাঁ প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে ব্যাট আস্তে আস্তে সেটা সহজ হবে, কারণ আমাদের মেমোরি হচ্ছে অনেকটা মাসেলের মতো, যত ইউজ করবেন ততই এর ইফিসিয়েন্সি বাড়বে।
শুরু করেন ইনশাল্লাহ সহজ হয়ে যাবে, কারণ একবার না দুই বার না চার চার বার তিনি আমাদেরকে একই সূরায় এসিউর করেছেন,
“আমি অবশ্যই কোরআনকে মনে রাখার জন্য সহজ করে দিয়েছি; কেউ কি আছে যে একে স্মরণ করবে?”
“আমি অবশ্যই কোরআনকে মনে রাখার জন্য সহজ করে দিয়েছি; কেউ কি আছে যে একে স্মরণ করবে?”
“আমি অবশ্যই কোরআনকে মনে রাখার জন্য সহজ করে দিয়েছি; কেউ কি আছে যে একে স্মরণ করবে?”
“আমি অবশ্যই কোরআনকে মনে রাখার জন্য সহজ করে দিয়েছি; কেউ কি আছে যে একে স্মরণ করবে?”
[সূরা আল-কামার ৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০]
জাস্ট একটা কথা মাথায় রাখবেন, যখন কোনো আয়াত মুখস্থ করবেন, সেটার ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড ট্রেন্সলেশন সোহো মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন, এতে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ভোকাবিউলারি সিগনিফিকেন্টলি ইম্প্ৰভ করবে, আর কুরআনের অন্যতম মিরাকেল হলো এটা মাত্র কয়েকসো শব্দে খুবই এফিসিয়েন্টলি তৈরি করা এক বই, জাস্ট ৫০০ ভোকাবিউলারি মুখস্থ করলেই দেখবেন, আপনি মোটামুটি ৮০% কুরআনই আরবিতে বুঝা স্টার্ট করে ফেলেছেন।
এবার মুখস্থের পর একে এপ্লাই করেন, এপ্লাই করবেন নামাজে, নামাজে বেছে বেছে চুম্বক চুম্বক আয়াত গুলো বার বার পড়েন, প্রতিদিন যদি পড়েন দেখবেন আয়াত গুলো অটো সাজেশনের কাজ দিচ্ছে, যেমন
আপনি যখন পড়বেন,
“আমার রব সাধ্যের বাহিরে কাউকে কিছু চাপিয়ে দেন না” [২:২৮৬]
প্রেসারড টাইমে তখন আপনার মোরাল অটোমেটিক বুলন্দ থাকবে, যখন প্রতি দিন পড়বেন
“রহমানের বান্দা তারাই যারা জমিনে নম্রভাবে চলাফেরা করে ” [২৫:৬৩]
তখন আপনি আপনি হাম্বল হয়ে যাবেন, আপনি যখন প্রতি দিন পড়বেন, “তোমরা অন্যের ব্যাপারে অ্যাসাম্পশন করা থেকে বিরত থাক”
“তোমরা অন্যের দোষ খোঁজাখুঁজি করা থেকে বিরত থাক”, “এমনকি একে অন্যের অনুপস্থিতিতে দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা থেকে বিরত থাক” [৪৯:১২]
তখন আপনি নিজ থেকেও কলিগদের নিয়ে গসিপ বন্ধ করে দিবেন, যখন প্রতিদিন পড়বেন,
“অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না” [১৭:৩২]
তখন অটোমেটিক দেখবেন রাতের আঁধারে মোবাইল স্ক্রীন থেকে চোখ সরে যাচ্ছে, যখন প্রতিদিন পড়বেন, “মোমিন তো তারা যারা আমানত রক্ষা করে আর” “কথা দিয়ে কথা ভেঙে ফেলে না” [২৩:৮]
তখন আপনি চাইলেও অন্যের টাকা মেরে দিতে পারবেন না অথবা, “এইতো ভাই ৫ মিনিট!” বলে উধাও হয়ে যেতে পারবেন না।
যখন প্রতি দিন পড়বেন, “শয়তান তোমাদেরকে গরিব হওয়ার ভয় দেখায় আর, আল্লাহ তোমাদের ফজলের প্রমিস দেয়” [২:২৬৮]
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ ۖ وَاللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।
[২ঃ২৬৮]
তখন আপনি অর্থ সংকট নিয়ে মোটেও হতাশ থাকবেন না!
ফাইনালি লাস্ট অ্যাপ্রোচ- রিফ্লেকশনে, কোরানের কোনো আয়াত নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করাটা হলো রিফ্লেকশন, এর ওপর নাম মেডিটেশন, অনেকের কাছে মেডিটেশনের অর্থ হলো, দম নিতে নিতে ভাবুন আর মনের কল্পনায় কোথাও ঘুরে বেড়ান, কোরআনের মেডিটেশন ঠিক উলটো, এখানে পেসিভলি ঘুরে বেড়ানোর কোনো স্কোপ নেই, বরং একটিভলি ফোকাসড থিংকিং এ এনগেজড হাতে হবে, এবং এটা সিরিয়াস এফোর্ট এর বিষয়, অনেকেই বলে আমি এটা পারি না, আমি ফোকাস থাকতে পারি না, আমি বলি পারেন, কারণ আপনি যখন দুশ্চিন্তা করেন, তখন তো ফোকাসড চিন্তাই করেন, অর্থাৎ দুশ্চিন্তা যদি করতে পারেন তাহলে ফোকাসড চিন্তাও করতে পারবেন, জাস্ট একটুও প্র্যাকটিস দরকার!
এই ফোকাসড চিন্তার কথা তিনি তার বইয়ে প্রায় ২০০ বার বলেছেন,
যেমন
তাদাব্বুর বা ডিপ রিফ্লেকশন এর ব্যাপারে বলেছেন অন্তত ৪ বার, তাফাকক্কুর বা চিন্তা করার বিষয়ে বলেছেন ১৮ বার, তাকিলুন বা আকল খাটানোর কথা বলেছেন ৪৯ বার, আর নজর বা পর্যবেক্ষণ করা বলেছেন ১৩০ বার!
এই অ্যাপ্রোচ গুলো যদি ইমপ্লিমেন্ট করতে পারেন তখন দেখবেন মনে আর কোনো সন্দেহ নেই, আপনি তখন কনফিডেন্ট যে হাঁ এটাই একমাত্র স্ট্যান্ডার্ড।
শেষ কথা
রিসিভ, রিড, রিসার্চ, রিমেম্বার এন্ড রিফ্লেক্ট এ সবই বেকার যাবে, যদি আপনি ঠিক ভাবে প্র্যাকটিস না করেন, অনেক সময় আমরা এই অ্যাপ্রোচ গুলোতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ি যে, তা নিজের জীবনে ইমপ্লিমেন্ট করতে আমরা ভুলে যাই, লেকচারের পর লেকচার শুনি, অথচ কেউ প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারি না।
নলেজ কনসিউম করা আর নলেজ প্র্যাকটিস করা দুটো দুই সাইনন্স, নলেজ এবসর্ব করার বেস্ট উপায় হলো, যা শিখেছেন তা আরেকজনকে শিখিয়ে ফেলা, তাই যত টুকুই শিখছেন কারো না কারোর সাথে শেয়ার করুন, সুযোগ থাকলে সমমনাদের নিয়ে একটা স্টাডি গ্রুপ করুন, রেগুলার বসুন আর নিজেদের মাঝে ডিসকাস করুন।
এই অ্যাপ্রোচ টা পরীক্ষিত, তাই তো আল্লাহর রাসুলের বললেন,
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে কোরআন শিখে এবং অন্যদেরকে কুরআন শিখায়, [সহিহ বুখারী ৫০২৭]
উনার কথাতো আর মিথ্যে হতে পারে না!