পারিবারিক উদারতা

দারিদ্রতা সত্ত্বেও আলী (রা:) এবং ফাতিমা (রা:) ছিলেন উদার। অবশ্যই ফাতিমা (রা:) ছিলেন তাঁর বাবার মত, আলীও (রা:) ছিলেন রাসুলের (ﷺ) মত, যিনি তাঁর ঘরেই প্রতিপালিত হয়েছিলেন। আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) ঘরে যাই থাকুক না কেন, অনেক সময় নিজেরা তার স্বাদ গ্রহণের আগেই তা বিলিয়ে দিতেন।

কিছু কিছু তাফসীরের বর্ণনা অনুসারে সুরা ইনসান এর ৮ এবং ৯ নং আয়াত তাঁদের উদ্দেশ্য করেই নাযিল হয়েছে।

وَيُطْعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسْكِينًا وَيَتِيمًا وَأَسِيرًا
তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।
[৭৬:৮]

إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَآءً وَلَا شُكُورًا
তারা বলে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।
[৭৬:৯]

অনেক আলেম বলেন, এটা সেই রাতের কথা যখন আলী (রা:) এবং ফাতিমা (রা:) নিজেরা অভুক্ত থেকেও অভাবীদের খাদ্য দান করেছিলেন। সে রাতে তাদের ঘরে একটিমাত্র রুটি ও সামান্য পানি ছিল। দরিদ্র এক পরিবার যখন তাদের কাছে খাদ্য চেয়েছিল, তাঁরা তাই দিয়েছিলেন যা তাদের নিজেদের জন্য ছিল। তখন আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালা তাঁদের প্রসঙ্গে এই আয়াতটি নাযিল করেন।

এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রমাণ আছে। ইবনে জোসি রহিমুল্লাহ এ প্রসঙ্গে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। ইমাম আল শাফি আলীর (রা:) প্রসঙ্গে তাঁর কবিতায় বলেন من انزل فيه هل اتى, যার সম্পর্কে সুরা ইনসান এ বলা হয়েছে। আল্লাহ প্রশংসা করেছেন তাদের ব্যাপারে যারা নিজেরা কষ্টে থাকা সত্ত্বেও এতিম, দরিদ্র, ও বন্দীদের খাদ্য দান করেন। কিছু কিছু বর্ণনা নিয়ে অবশ্য মতভেদ আছে।

অনেক বর্ণনায় এসেছে রাসুল (ﷺ) তাঁদের ঘরে গেলেন এবং হাসির শব্দ শুনলেন। এভাবে প্রতিটি বর্ণনা এনে দেয় তাঁদের পরিবার সম্পর্কে ভিন্ন মাত্রা এবং আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কিছু বিষয়। এর মধ্যে একটি বর্ণনা হলো, রাসুল (ﷺ) তাদের ঘরে গিয়ে তাদের রাতের কিয়ামের জন্য উঠাতেন। রাসুলের (ﷺ) প্রতিবেশী হওয়ার কারণে, কিছু প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্বও চলে আসে। এই পিতা মধ্যরাতে নিজ ঘর ছেড়ে বের হতেন, মেয়ের ঘরে কড়া নেড়ে তাঁদের নামাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। রাসুল (ﷺ) নিজেও মধ্যরাতে তাঁর প্রতিপালককে স্মরণ করতেন।

এক রাতে তিনি আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) ঘরের সামনে গেলেন, এবং তাদের ঘুম থেকে উঠানোর চেষ্টা করলেন। সেই রাতে তাঁরা উঠতে পারলেন না। পরদিন রাসুল (ﷺ) আলীকে (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কেন উঠোনি, যখন গতরাতে কিয়ামুল লাইলের জন্য আমি তোমাকে উঠাতে চেয়েছিলাম।”
আলী (রা:) বললেন, “হে রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ যদি আমাদের আত্মাকে ফিরিয়ে আনতে চাইতেন, তাহলে তিনি তা ফিরিয়ে আনতেন।” তখন রাসুল (ﷺ) মাথা নেড়ে হেঁটে যেতে যেতে বললেন, وَكَانَ الْإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا – “মানুষ সবসময় তর্কপ্রিয়।
আলী (রা:) নিজেই বলতেন, “রাসুল (ﷺ) বলেছেন, মানুষ সবসময় তর্কপ্রিয়।”

আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) সুখের সংসার

পর্ব – ০৩

মূল: ড. ওমর সুলাইমান

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Exit mobile version