আগামীকাল সে তো বহুদূর, আর গতকাল তো অতীত হয়েই গেছে, তাই এখনই সময় অনুতপ্ত হওয়ার এবং সুযোগ চলে যাওয়ার আগে নিজের জীবন এবং পরকাল পরিবর্তন করার।
কমবেশি আমরা সবাই পাপ করি, কিন্তু যেকোনো পাপ কাজের পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা আবশ্যক। যে সৎকর্ম করে সে আল্লাহর নিকটবর্তী, এবং যে সবসময় পাপে লিপ্ত থাকে সে শয়তানের নিকটবর্তী, এবং যে পাপ করার পর সৎকর্ম করে সে একজন সফল ব্যক্তি।
যারা ক্রমাগত তওবা করে তারাই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
……নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে।1
আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি তার আমলনামায় অধিক পরিমাণে ’’ক্ষমা প্রার্থনা’’ যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ, আনন্দ।”2
তাওবা/আন্তরিক অনুতাপের অর্থ:
তওবা হলো পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, একই পাপের পুনরাবৃত্তি না করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হাওয়া এবং কেবলমাত্র তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করা। যে ব্যক্তি দ্বীনের পথে চলতে চায়, সে যেন তার নতুন জীবন শুরু করে তওবা দিয়ে। এটি শৃঙ্খলার প্রথম ধাপ, সরল পথে পরিচালিত হাওয়ার চাবিকাঠি, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নিজেকে পবিত্র করার মোক্ষম অস্ত্র।
যদি আমরা আমাদের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতাম, তাহলে আমরা পাপে জর্জরিত হয়ে কখনও নিজেদের অপমানিত করতাম না। এই জীবনে আমাদের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা, নিজেদের খেয়াল খুশির বশবর্তী হয়ে চলা না।
আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে,
‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত কর।’3
আল্লাহর রাসূল (সা:) ছিলেন সবচেয়ে ধার্মিক এবং পাপমুক্ত একজন মানুষ, এমনকি তিনিও দিনে ৭০ বারের বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি।4
পাপ কি?
এমন কোন কাজ করা যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন, এবং এর জন্য পাপীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন না কোন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়, কখনও কেবল এই পৃথিবীতে এবং কখনও উভয় জগতেই।
পাপ হলো ফ্ল্যাট টায়ারের মতো, সঠিক সময়ে পরিবর্তন না করলে এই চাকা আপনাকে কোথাও নিয়ে যাবে না। আর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হলো পাপ যখন এমন অভ্যাসে পরিণত হয় যা কিছুতেই ত্যাগ করা যায় না। পাপ যতই লোভনীয় এবং অপ্রতিরোধ্য হোক না কেন, এর সীমারেখা রয়েছে। কখনো কখনো কিছু পাপের প্রতি আমরা এতটাই আসক্ত হয়ে যাই যে এই পাপগুলো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়, এবং তা ছেড়ে দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।
তাহলে এর সমাধান কি?
আমাদেরকে প্রায়শই নিজেদের পরিস্থিতি, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, ঈমানের অবস্থা, দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ততা এবং সৎকর্মে আমাদের প্রবৃত্তি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। পাপের মধ্যে আমাদের এতটা ডুবে যাওয়া উচিত নয় যা আমাদের আখেরাতকে ঝুঁকির সম্মুখীন করে। আসুন আমরা আজ থেকেই পাপ ছেড়ে দিই, এবং তা থেকে দূরে সরে আসি।
কোনো ভালো কাজের ব্যাপারে বলা যতটা সহজ তা কাজে পরিণত করা কিন্তু ততটা সহজ নয়, তবে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হবে। একটু একটু করে এগিয়ে যান, তারপর দেখুন আল্লাহ আপনার জন্য খারাপ কাজ থেকে দূরে সরে আসা কতটা সহজ করে দেন, এমনকি তিনি চাইলে আপনার খারাপ কাজগুলোকেও ভালো কাজে পরিণত করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ।
আপনার আশেপাশের মানুষকে পাপ সম্পর্কে সতর্ক করুন। পাপ কিন্তু আকাশ থেকে পড়ে না, এগুলো আমাদের সাথেই বেড়ে ওঠে। এগুলো বৃদ্ধি পায় কারণ আমরা এদের সাথে বসবাস করে আনন্দ পাই। গোপনে বা প্রকাশ্যে হয়তো কেউ কেউ নিজের পাপ কাজে গর্বিত হয়, আবার অনেকে এই কারণে পাপে লিপ্ত হয় যে তার চারপাশে সবাই পাপ করছে তাই। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, যেকোনো পাপই সংক্রামক, এটিকে দমিয়ে রাখার জন্য শারীরিক শক্তির দরকার নেই, দরকার শুধু মানষিক দৃঢ়তার। নিজের মনকে প্রজ্ঞা দিয়ে প্রশিক্ষণ করুন যাতে আপনি পাপ থেকে দূরে সরে আসতে পারেন। আপনার খারাপ অভ্যাসকে ভালো অভ্যাস দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন যা আপনি সত্যিই উপভোগ করেন এবং যাতে আপনি গর্বিত বোধ করেন।
মনে রাখবেন, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও প্রিয় কাজ হলো সেইসব কাজ যা শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করা হয় এবং যখন কেউ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পাপ বা খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত থাকে, এর থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। পাপ কি আপনার জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনে?
না, এটি কেবল আপনাকে আপনার স্রষ্টার কাছ থেকে দূরে নেয়, এবং আপনার পরকালকে ঝুঁকির সম্মুখীন করে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ ঘোষণা করলেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি, কোন মানুষের কল্পনায়ও আসেনি।5
অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।6
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা আপনাদের পরকালকে কেমন দেখতে চান?
জান্নাত এবং জাহান্নাম কোন রূপকথার গল্প নয়, এগুলো কঠিন বাস্তবতা। তাই আসুন, পাপ দূরে থাকি, আন্তরিকভাবে অনুতাপ করি, এবং আল্লাহ সন্তুষ্টির পথে কাজ করি, যাতে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি এবং আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে সেই না দেখা, না শোনা, কল্পনাতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। আল্লাহুম্মা আমীন!
- সূরা আল-বাকারাহ-২: আয়াত-২২২ ↩︎
- সুনান ইবনু মাজাহ:৩৮১৮ ↩︎
- সূরা আল-আম্বিয়া-২১: আয়াত-২৫ ↩︎
- সহিহ বুখারি: ৬৩০৭ ↩︎
- সহিহ বুখারী:৭৪৯৮ ↩︎
- সুরা আস-সিজদাহ-৩২: আয়াত-১৭ ↩︎