সিরিজ: নবীদের জীবন কাহিনী – ইদ্রিস (আঃ)

ইদ্রিস (আঃ) ছিলেন আদমের (আঃ) পর ইসলামের তৃতীয় নবী। ওহাবের মতে, ইদ্রিস (আ:) ছিলেন শক্তিশালী এবং সুঠামদেহী একজন মানুষ। তাঁর বুক ছিল প্রশস্ত এবং তিনি নিচু গলায় কথা বলতেন। এটাও বলা হয় যে তিনি লম্বা এবং সুদর্শন ছিলেন এবং তাঁর ব্যবহারও ছিল সুন্দর। নবী ইদ্রিস (আ:) বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে খুবই কৌতূহলী ছিলেন, তিনি তাঁর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি মহাবিশ্বের বিশালতা – আকাশ, পৃথিবী, চাঁদ, তারা এবং মেঘ নিয়ে চিন্তা করতেন।

কুরআনে দুটি আয়াতে ইদ্রিসের (আ:) কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এবং আয়াত দুটিতে তাঁর চরিত্রের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।

وَٱذۡكُرۡ فِى ٱلۡكِتَٰبِ إِدۡرِيسَۚ إِنَّهُۥ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا
আর স্মরণ কর এই কিতাবে ইদরীসকে। সে ছিল পরম সত্যনিষ্ঠ নবী।
[সূরা মারইয়াম-১৯:৫৬]
وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِدۡرِيسَ وَذَا ٱلۡكِفۡلِۖ كُلٌّ مِّنَ ٱلصَّٰبِرِينَ
আর স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল্ কিফল এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ধৈর্যশীল ছিল।
[সূরা আম্বিয়া-২১:৮৫]

আদমের (আ:) জীবদ্দশায় ইদ্রিসের (আ:) জন্ম হয়। তিনি শেথের অনুসারীদের মধ্যে ছিলেন এবং শেথের মৃত্যুর পর আদমের (আ:) বংশধরদের শাসন করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সত্যবাদী, ধৈর্যশীল এবং অসাধারণ ব্যক্তি। আবু জারের (রা:) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে ইদ্রিসই প্রথম ব্যক্তি যিনি মানবজাতির জন্য লেখাপড়ার প্রচলন করেছিলেন। এছাড়া তিনি সেলাইয়ের কাজও জানতেন, এবং এর প্রবর্তন করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতশাস্ত্র ছিল আল্লাহর তরফ থেকে আসা ঐশী বাণী যা ইদ্রিসের (আ:) মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম বিকাশ ঘটে।

ইদ্রিস (আ:) আল্লাহর একজন একনিষ্ঠ বান্দা ছিলেন, তাই আল্লাহ তাঁকে নবী ও রসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং তাঁকে আদম সন্তানের শাসক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।

শেথের মৃত্যুর পর কাবিলের অনুসারীরা হেদায়েত থেকে দূরে সরে যায়, এতে করে চারদিকে পাপ এবং দুর্নীতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইদ্রিস (আ:) তাঁর নিজের লোকদের শয়তানের কবলে পড়তে দেখে তা সহ্য করতে পারেননি। তাই আল্লাহ ইদ্রিসকে (আ:) কাবিলের (কাইন) অধঃপতিত অনুসারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দেওয়ার নির্দেশ দেন। ইদ্রিসই (আ:) ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নবী ও রাসূল যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ করেন।

আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী, একদল সেনাবাহিনী নিয়ে ইদ্রিস (আ:) সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হন।

একদিন, ইদ্রিসকে (আ:) আল্লাহ তা’য়ালা জানালেন যে তিনি তাঁর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিদিন মানুষের দ্বারা সম্পাদিত সমস্ত ভাল কাজের প্রতিদান তিনি পাবেন।

ইদ্রিস (আ:) এই খবরে আনন্দিত হলেন এবং তাঁর সমস্ত নেয়ামতের জন্য আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন। কিন্তু ইদ্রিস (আ:) বেশ বৃদ্ধ ছিলেন, এবং আরো ভালো কাজ করার জন্য, এবং অন্যদের করা ভালো কাজ উপভোগ করার জন্য পৃথিবী ছেড়ে যেতে প্রস্তুত ছিলেন না। তাই, তিনি মৃত্যুর ফেরেশতার সাথে কথা বলার জন্য এবং তাঁর মৃত্যু বিলম্বিত করার জন্য অনুরোধের সিদ্ধান্ত নেন। ইদ্রিসের (আ:) বন্ধু এক ফেরেশতা তাঁর এই আবেদনে সম্মত হন এবং ইদ্রিসের (আ:) সাথে মৃত্যুর ফেরেশতার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন।

সেই বন্ধু ফেরেশতা ইদ্রিসকে (আ:) ডানায় বসিয়ে চতুর্থ আসমানে উড়ে গেলেন এবং মৃত্যুর ফেরেশতার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। ইদ্রিসের (আ:) সঙ্গী ফেরেশতা মৃত্যুর ফেরেশতাকে বললেন, “নবী ইদ্রিস জানতে চান আপনি তাঁর আয়ু আরো কিছুদিন নির্ধারিত করতে পারবেন কিনা।”

মৃত্যুর ফেরেশতা বন্ধু ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করেন, “তিনি কোথায় আছেন?”
উত্তরে বন্ধু ফেরেশতা বলেন, “এই তো তিনি আমার পালকের উপর বসে আছেন।”

মৃত্যুর ফেরেশতা তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “সুবহানাল্লাহ! আমাকে এখনই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন ইদ্রিসের (আ:) রূহ চতুর্থ আসমান থেকে কবজ করি। কিন্তু আমি চিন্তা করছিলাম – ইদ্রিস (আ:) তো আছেন জমিনে, চতুর্থ আসমান থেকে তাঁর রূহ কবজ করবো কিভাবে?”
অতঃপর তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত ইদ্রিসের (আ:) রূহ কবজ করে নেন।

মুহাম্মাদ (সা:) যখন ইসরা এবং মিরাজে গমন করেন, মিরাজের সফরে তিনি (সা:) প্রতিটি আসমানে নবী ও রাসুলদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং চতুর্থ আসমানে ইদ্রিসের (আ:) সাথে তাঁর সাক্ষাৎ করেন। .

ইদ্রিসের (আ:) এর ইন্তেকালের পর পুনরায় দুর্নীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বেশ কয়েক প্রজন্ম পরে, নতুন কোন নবী-রসূল না আসায়, শয়তান অবশেষে আদম সন্তানদেরকে তাদের প্রথম শিরক করার জন্য প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।

ইদ্রিসেল (আ:) কিছু মূল্যবান বাণী

ধন্য সেই ব্যক্তি যে তার নিজের কাজের প্রতি আলোকপাত করে এবং নিজেকে তার পালনকর্তার কাছে আবেদনকারী হিসাবে নিযুক্ত করে।

আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য তার চেয়ে উত্তম কৃতজ্ঞতা আর কেউই জ্ঞাপন করতে পারে না যে সেগুলি অন্যদের সাথে ভাগ করে‌ নেয়।

মানুষের কাছে যা আছে তার জন্য ঈর্ষা করো না, কারণ তারা তা অল্প সময়ের জন্য উপভোগ করবে।
যে অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা (পার্থিব) করে সে এর দ্বারা উপকৃত হয় না।
জীবনের আসল আনন্দ হল বিজ্ঞতায়।

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Exit mobile version