মিসওয়াক ও আধুনিক বিজ্ঞান

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

প্রকৃতি কখনো মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ নয়, বরং তা সর্বদাই মানবস্বভাবের অনুকূল। শুধু তাই নয়, মানুষ যখন দুনিয়ার চাকচিক্য ও ভোগ-বিলাসিতায় ডুবে গিয়ে একসময় নানাবিধ বিপদাপদের সম্মুখীন হয় এবং তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনোরূপ উপায়ান্তর না দেখে পুনরায় প্রকৃতির দিকে ফিরে আসে, প্রকৃতি তখনও মানুষকে পূর্বের মতো উপকার করে থাকে। চমকদার ও মহামূল্যবান হীরার টুকরোকে ফেলে দিয়ে সামান্য এক টুকরো কাঁচ খণ্ড গ্রহণ করা যেমনিভাবে বুদ্ধিহীনতা ও বোকামী, ঠিক তেমনি মিস্ওয়াকের মতো স্বভাবসুলভ আমলটিকে পরিত্যাগ করাও অজ্ঞতা ও মূর্খতার পরিচয়।

যখন থেকে আমরা এ মহান নেয়ামতটিকে হাতছাড়া করেছি, তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমরা নানাভাবে পেরেশান হচ্ছি। হাজার হাজার টাকা নষ্ট করেও দৈহিক সুস্থতার উৎসমূলে ফিরে যেতে সক্ষম হচ্ছি না।
মিসওয়াক সম্পর্কে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি তার পাণ্ডিত্যসুলভ উক্তি করেছেন: যেদিন থেকে আমরা মিসওয়াকের ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছি, সেদিন থেকেই “ডেন্টাল সার্জন”-এর সূত্রপাত হয়েছে।

এবার আসুন! আমরা একটু পরীক্ষা করে দেখি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মানুষের স্বভাবসুলভ কি না?
সুন্নত আমাদের উন্নতির প্রতিবন্ধক, না পথ প্রদর্শক?
সুন্নত আমাদেরকে প্রস্তর যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, না বিজ্ঞানের নিকটবর্তী করে দেয়?
ফায়সালা আপনার হাতে ছেড়ে দেওয়া হল। গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যায়টি পড়ুন এবং নিজেই ফায়সালা করুন!

রাত ও মিসওয়াক

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করতেন। রাতে শয়নকালে মিসওয়াক করা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মহান অভ্যাস। (যাদুল মা’আদ)

জনৈক ইঞ্জিনিয়ার বলেনঃ ওয়াশিংটন (আমেরিকা) এর একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার একদা আমাকে বললেন, আপনি শয়নকালেও মিসওয়াক করবেন! আমি বললাম- এর কারণ কি?
উত্তরে তিনি বললেন- বর্তমান যুগের গবেষণা বলে, মানুষ যা ভক্ষণ করে তার ময়লা কুলির দ্বারা পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার হয় না। তিনি আরো বলেন, সাধারণত মানুষের দাঁত নষ্ট হয় শয়নকালে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এর কারণ কী?

তিনি বললেন, আপনি প্রত্যক্ষ করে থাকবেন, দিনের বেলায় মানুষ কখনো কথা বলছে, কখনো আহার করছে আবার কখনো পান করছে। তাই দিনের বেলায় মুখের গতিশীলতার কারণে রক্তরস/ রক্তলসিকা তার কাজ করার সুযোগ পায় না। কিন্তু রাতের বেলা যখন মুখ বন্ধ হয়ে যায়, তখন তার সুযোগ এসে যায় কাজ করার। এ কারণেই দাঁত রাতের বেলায় অধিক খারাপ হয়। তিনি আরও বললেন, সকালে “টুথ পেস্ট” ব্যবহার করেন আর না করেন, শোয়ার সময় অবশ্যই মিসওয়াক করে ঘুমাবেন।

“বিজ্ঞ ডাক্তার সাহেবের মুখে একথা শুনে আমি শুকরিয়া জ্ঞাপন স্বরূপ আলহামদুলিল্লাহ পড়ে নিলাম। কেননা এটাই তো আমাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা ওযু অবস্থায় শয়ন করতেন আর মিসওয়াক করা ব্যতীত কখনো তিনি ওযু করতেন না। যদি কেউ খাবার শেষে ওযু করে এবং মিসওয়াক করে, তা হলে সে দন্ত রোগ থেকে রেহাই পাবে।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাবারের পূর্বে হাত ধৌত করতেন আর খাবার শেষে কুলি করতেন; কিন্তু বর্তমান যুগের মানুষেরা খানা খেয়ে কুলি না করেই চলে যায়। অথচ সে ব্যক্তি যদি মিষ্টি দ্রব্য খেয়ে থাকে, তা হলে তার প্রভাব মুখের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ অবশিষ্ট থাকে। আর যদি সাথে সাথে কুলি করার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তাহলে মহা ক্ষতির হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া দিনে অন্তত পাঁচবার ওযু করতে হয়, আবার পৃথকভাবে মুখ পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। এভাবে মানুষ (Electronic System) বিশেষ পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত মুখ, হাত, পা ইত্যাদি পরিষ্কার করে থাকে।

নামাযের পূর্বে মিসওয়াক

প্রকৃতপক্ষে নামায যেহেতু মহা পরক্রমশালী আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের গুণ-গান করা, তাই নামাযের সময় মুখ পরিষ্কার থাকা অত্যাবশ্যক। যদি আহারের পর মিসওয়াক বিহীন উযু করে নামায আদায় করা হয়, তাহলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আটকে থাকা খাবারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো জিহ্বায় লেগে নামাযের একাগ্রতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

তাছাড়া নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় নামাযী ব্যক্তির মুখ থেকে যদি দুর্গন্ধ বের হয়, তাহলে তার দ্বারা অন্য নামাযীদেরও কষ্ট হয়। তাই মিস্ওয়াক দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে নেওয়া উচিত। আর মিসওয়াক করার সময় মুখ এমনভাবে (Rays) হিল্লোলিত হয়, যদ্দরুন কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদিতে পাওয়া যায় অনাবিল শান্তি। নামায হল মহান সৃষ্টিকর্তার সম্মুখে হাজিরা দেওয়া আর সেই বিশেষ সময় যদি মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়, তা হলে তা লজ্জারও কারণ বটে।

সুইজারল্যাণ্ডের জনৈক ডাক্তার ও মিসওয়াক,
বন্ধুবর মনসূর সাহেব ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সরল প্রকৃতির লোক। একদিন আমাকে বলতে লাগলেন, আমি একসময় সুইজারল্যাণ্ডে ছিলাম। সেখানে সাক্ষাৎ হল একজন নও মুসলিমের সাথে। আমি তাকে (পীলু বৃক্ষের) একটি মিস্ওয়াক উপহার দিলাম। মিস্ওয়াকটি পেয়ে সে মহা আবেগে আপ্লুত হয়ে সেটি চোখে-মুখে লাগাতে লাগল এবং আনন্দের আতিশষ্যে তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রুধারা বইতে লাগল। তারপর সে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করল। তাতে দুই ইঞ্চি পরিমাণ একটা মিসওয়াক সযত্নে জড়ানো ছিল।

মিস্ওয়াকটি বের করে সে বলতে লাগল, আমি যখন মুসলমান হয়েছিলাম, তখন এক মুসলমান ভাই এটি আমাকে উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন। আমি অতি সাবধানতার সাথে এটি ব্যবহার করতে থাকি। এ খণ্ডটুকু তারই অবশিষ্ট অংশ। এখন আপনি আমার উপর বিরাট বড় ইহসান করেছেন।

তারপর সে তার জীবনের একটি ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে লাগল, একবার আমার দাঁতের মাড়ীতে এমন কঠিন রোগের সৃষ্টি হয়েছিল, যার চিকিৎসা তদানিন্তন ডাক্তারদের নিকট ছিল দুরূহ ব্যাপার। অগত্যা আমি এ মিস্ওয়াক ব্যবহার শুরু করে দিলাম। কিছু দিন পর গেলাম সেই ডাক্তারকে দাঁত দেখাতে। দাঁত দেখে তো ডাক্তার হতবাক। জিজ্ঞেস করল, আপনি এমন কী ঔষধ ব্যবহার করেছেন, যার ফলে আপনি এত দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারলেন?

বললাম, আমি তো শধু আপনার দেওয়া ঔষধই ব্যবহার করেছি। ডাক্তার বললেন, কখনো না। আমার ঔষধে এত দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব নয় বরং আপনি চিন্তা করে বলুন! আমি গভীরভাবে চিন্তা করতেই স্মরণ হল আমি তো মুসলমান, আমি মিস্তয়াক ব্যবহার করছি। এরপর যখন ডাক্তারকে মিস্তয়াক দেখালাম। ডাক্তার খুবই আশ্বস্ত হলেন এবং নতুনভাবে রিসার্চ শুরু করে দিলেন।

গুরু নানক ও মিসওয়াক,
গুরু নানক সম্পর্কে কথিত আছে, তিনি সর্বদা হাতে মিস্ওয়াক রাখতেন এবং মিস্ওয়াক করতেন। তিনি বলতেন, হয়তো এ লাকড়ি গ্রহণ কর, নতুবা রোগকে বরণ কর। দেখুন, কত সূক্ষ্ম কথা। তিনি বলেছেন, মিসওয়াক দ্বারা রোগ-ব্যাধি দূরীভূত হয়। নতুবা অসুস্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

মুখের দুর্গন্ধ ও মিসওয়াক

এক ব্যক্তির মুখে ছিল খুবই দুর্গন্ধ। এর জন্য সে উন্নত মানের টুথপেস্ট, ঔষধ, মাজন এবং দুর্গন্ধনাশক বিভিন্ন ঔষধ (Medicine Antiseptic) ব্যবহার করে কিন্তু তাতে তার কোন উপকার হয় নি। তারপর সে এ ব্যাপারে আমার নিকট পরামর্শ চাইলে আমি তাকে পীলু বৃক্ষের মিসওয়াক ব্যবহাররের পরামর্শ দিলাম এবং পদ্ধতি বলে দিলাম যে, মিসওয়াকের আগার চিকন আঁশগুলো প্রত্যহ নতুন হওয়া বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ প্রত্যহ সেই আঁশগুলো কেটে ফেলে নতুন আঁশগুলো ব্যবহার করতে থাকবেন, (এটা সকলের জন্য বাঞ্ছনীয়, নতুবা মিসওয়াকের কাঙ্ক্ষিত উপকার পাওয়া যাবে না)। এ পদ্ধতিতে মিস্ওয়াক ব্যবহারের পর অতি অল্প দিনের মধ্যেই সে আরোগ্য লাভ করে।

হৃৎপিণ্ডের ঝিল্লিতে পুঁজ ও মিস্ওয়াক,
হেকিম এস.এম. ইকবাল ‘জাহান’ নামক পত্রিকায় লিখেন
আমার নিকট একজন রোগী এল। তার হৃৎপিণ্ডের ঝিল্লিতে জমা হয়েছিল অনেক পুঁজ। এর জন্য লোকটি চিকিৎসাও নিচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই সে ফল পেল না। অবশেষে অপারেশনের মাধ্যমে পুজ বের করা হল। কিছুদিন পর আবার পুঁজ জমা হয়ে গেল। অবশেষে সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সে আমার নিকট চলে এল। আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পেলাম তার দাঁতের মাড়ীতে ক্ষত আছে। তাতে পুঁজ ভর্তি। দাঁতের মাড়ীর ওই পুঁজই তার হৃৎপিণ্ডে গিয়ে জমা হচ্ছে। আমার এ রোগ নিরূপণ সকল ডাক্তারগণও একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন।

এবার তার চিকিৎসার পালা। প্রথমে তার দাঁত ও মাড়ীর চিকিৎসা করা হল। সেবনের জন্য কিছু ঔষধ আর ব্যবহারের জন্য দেওয়া হল পীলু বৃক্ষের মিস্ওয়াক। ফলে অতি অল্পদিনের মধ্যেই তার রোগ নিরাময় হল।

দন্ত চিকিৎসা ও দশ হাজার দিরহাম,
আরব দেশ থেকে এক রোগী লিখে জানাল, সে দাঁতের জটিল রোগে ভুগছে। তার চিকিৎসার জন্য এ যাবৎ ১০ হাজার দিরহাম ব্যয় করা হয়ে গেছে; কিন্তু এর কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে চিঠির উত্তরে লিখলাম আপনি শুধু পীলু বৃক্ষের মিসওয়াক দুই মাস পর্যন্ত প্রত্যহ নামাযের প্রাক্কালে উযুর সময় ৫ বার আর তাহাজ্জুদ নামাযে একবার ব্যবহার করুন। অন্য কোনো ঔষধ সেবন করা যাবে না। অচিরেই রোগী কল্পনাতীতভাবে আরোগ্য লাভ করল। উল্লেখ্য যে, রোগ নিরাময়ের জন্য মিস্তয়াক তরতাজা হওয়া বাঞ্ছনীয়।

মুখের স্বাদ বৃদ্ধি ও মিস্ওয়াক

জনৈক ব্যক্তি তার মুখের আস্বাদন শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। অনেক চিকিৎসার পরও কোনো ফল হল না। কেউ তাকে পরামর্শ দিল জিহবায় জোঁক লাগিয়ে দিতে। সে জিহবাতে জোঁক লাগিয়ে ক্ষত করল। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হল না। অবশেষে আমি তাকে পরামর্শ দিলাম, আপনি প্রত্যহ পীলু গাছের তাজা মিসওয়াক ব্যবহার করুন। একমাস পর আমাকে আবার জানাবেন। একদিন রোগী বলল, এ এক টাকার মিসওয়াক পেল সে তার মুখের স্বাদ।

গলা ও মিসওয়াক

টনসিলের (Tonsils) রোগীদেরকে মিসওয়াক ব্যবহার করিয়ে যথেষ্ট ফল পাওয়া গেছে। এক ব্যক্তি গলায় মাংসগ্রন্থি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খুব পেরেশান ছিল। তাকে তুত ফলের শরবত ও মিস্ওয়াক ব্যবহার করতে দেওয়া হল। অর্থাৎ তুতের শরবত পান করবে আর তাজা মিস্ওয়াক দ্বারা দাঁত মাজবে এবং মিসওয়াক টুকরা টুকরা করে পানিতে জাল দিয়ে গড়গড়া করে কুলি করবে। এ পন্থা অবলম্বন করার পর ফলে অসুস্থ ব্যক্তি দ্রুত আরোগ্য লাভ করল।

একটা জটিল কেস,
এক ব্যক্তি একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত ছিল। যেমন ঘাড়ব্যথা, গলায় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া, গলার স্বর হ্রাস পাওয়া, মস্তিষ্ক ও স্মরণশক্তি হ্রাস পাওয়া, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি। ব্রেইন স্পেশালিস্ট (Brain Specialist) জেনারেল ফিজিশিয়ান (General Physician) বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা এসব রোগের অনেক চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া গেল না। আমি তার চিকিৎসার জন্য মিস্ওয়াক কেটে তা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দ্বারা গড়গড়া করতে দিলাম। সাথে সাথে মিস্ওয়াক ব্যবহারেরও নির্দেশ দিলাম। আর থুতনীর নিচের উচু অংশে কিছু ঔষধ প্রলেপের জন্য দেওয়া হল। এভাবে খুব দ্রুত তার রোগ উপশম হল।

প্রকৃতপক্ষে লোকটা “থাইরাইড গ্ল্যান্ড” আক্রান্ত (Infected) ছিল। তার প্রতিক্রিয়া গোটা দেহে বিস্তার লাভ করার কারণে এসব রোগের সৃষ্টি হয়েছিল। সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করার পর রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠল।

গালের ঘা নিরাময়ে মিসওয়াক

গালের ঘা অনেক ক্ষেত্রে গরমের তীব্রতা এবং প্রখরতার কারণে হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বিশেষ একপ্রকার ঘা রয়েছে, যার বিষাক্ততা দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তার জন্য তাজা মিসওয়াক দ্বারা দাঁত মাজতে হবে এবং তখনকার সৃষ্ট মুখের লালাগুলো মুখের মধ্যে মলতে হবে। এ পদ্ধতিতে অনেক রোগী আরোগ্য লাভ করেছে।

দাঁতের হরিদ্রতা দূরীকরণে মিসওয়াক

অনেকের দাঁত হলুদ বর্ণ হয়ে যাওয়া এবং দাঁতের শুভ্র আস্তর বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে থাকেন। মিসওয়াকের নতুন নতুন আঁশ দাঁতের হরিদ্রতার জন্য খুবই উপযোগী

রোগজীবাণু রোধে মিসওয়াক

মিসওয়াক হল দুর্গন্ধ প্রতিষেধক। মিসওয়াক মুখের ভিতরের রোগ জীবাণু ধ্বংস করে দেয়, ফলে নামাযী ব্যক্তি অসংখ্য রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পায়। আর অনেক রোগজীবাণু তো মিস্তয়াকের প্রতিরোধক পদার্থ ক্রিয়াতে ধ্বংস হয়ে যায়।

মস্তিষ্ক ও মিসওয়াক

হযরত আলী রাযি. বলেন, মিসওয়াক দ্বারা মস্তিষ্ক সতেজ হয়। প্রকৃতপক্ষে মিসওয়াকের মধ্যে থাকে ফসফোরাস জাতীয় পদার্থ। রিসার্চ ও অনুসন্ধানে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে, যেই জমিতে ক্যালসিয়াম ও ফসফোরাস অধিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে, সেখানেই পীলু বৃক্ষ বেশি জন্মে। কবরস্থানের মাটিতে যেহেতু মানুষের হাড় বিগলিত হওয়ার ফলে ক্যালসিয়াম ও ফসফোরাস বেশি হয়ে থাকে, তাই সেখানে পীলু বৃক্ষও অধিক পরিমাণে জন্ম নিয়ে থাকে। দাঁতের প্রধান খাদ্যই হল ক্যালসিয়াম ও ফসফোরাস। আর বিশেষ করে পীলু বৃক্ষের জড়ে এ উপাদানগুলো সাধারণত বেশি পাওয়া যায়।

অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে,
পীলু বৃক্ষের মিসওয়াক তাজা ও নরম অবস্থায় চাবালে তার মধ্যে হতে বেরিয়ে আসে তিক্ত ও তেজস্ক্রীয় এক প্রকারপদার্থ। এ পদার্থ মিসওয়াকের মধ্যে রোগ জীবাণুর ক্রমবিকাশকে প্রতিহত করে এবং দাঁতসমূহকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এজন্য মিসওয়াকের ক্ষেত্রে বলতেই হয়, পীলু মিসওয়াকের অগ্রভাগের সূক্ষ্ম আঁশগুলো ভেঙে ভেঙে বা কেটে কেটে ব্যবহার করা উচিত যেন প্রত্যেকবারই নতুন আঁশ ব্যবহার হয় এবং তার তিক্ত পদার্থ সুস্থতার ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়।

বাবলা ও নীম গাছ

বাবলা ও নীম বৃক্ষের উপকারিতা ও গুণাগুন সম্পর্কে কে না জানে। কিন্তু আমি কাণীর বৃক্ষের (একপ্রকার তিতা গাছ) মিসওয়াক সম্পর্কে আলোচনা করব। কাণীর বৃক্ষ দুই প্রকার। একপ্রকার লাল ফুল বিশিষ্ট আরেক প্রকার সাদা ফুল বিশিষ্ট। উভয় প্রকারই সাধারণত পার্ক এবং বাগানে পাওয়া যায়। বাগানের মালীর অনুমতিক্রমে সেখান থেকে মিসওয়াকের জন্য ডাল ভাঙা যেতে পারে।
জনৈক ব্যক্তি নিজের দাঁতের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার ডলার ব্যয় করে ফেলেছিল। অবশেষে তাকে কাণীর ও পীলু বৃক্ষের মিসওয়াক ব্যবহার করানো হলে সে পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল। বিজ্ঞ ডাক্তারগণ দীর্ঘদিন যাবৎ পাইওরিয়ার রোগীদেরকে কাণীর মিসওয়াক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আসছেন, এতে দূরারোগ্য রোগীও সুস্থ হয়ে উঠেছে।

এজন্য মিসওয়াক প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রাখবে, তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে তা নরম করে ফেলবে। তারপর উপর থেকে নিচে এবং নিচে থেকে উপরের দিকে মিস্তয়াক করবে। কাণীর মিসওয়াক যদিও শক্ত ও তিতা। তথাপি এটা দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে এমন উপাদান রয়েছে, যা দাঁতকে করে মজবুত, উজ্জ্বল। উপরন্তু এটা পাইওরিয়ার মতো মারাত্মক রোগ-ব্যাধির জন্য মহৌষধ।

দাঁত ও মস্তিষ্ক

অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধময় পুঁজযুক্ত দাঁত মস্তিষ্ক রোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আভ্যন্তরীণ রোগ- যেমন উম্মাদনা, মস্তিষ্ক-বিকৃতিসহ আরও অনেক রোগ-ব্যাধিও এর থেকে জন্ম নেয়। জনৈক ব্যক্তির স্ত্রীর মস্তিষ্ক বিপত্তি ঘটে। তারপর পরীক্ষা দ্বারা ধরা পড়ল যে, মস্তিষ্কের পর্দায় পুঁজ জমা হয়েছে এবং রোগিনী দীর্ঘদিন যাবৎ পাইওরিয়া রোগে আক্রান্ত। সেই পুঁজই এ ধ্বংসাত্মক রোগের সৃষ্টি করেছে।

দাঁত ও কান

যেসব রোগীদের কানে ফোলা, পুঁজ, রক্তিমতা, ব্যথা ইত্যাদি রয়েছে এবং ডাক্তারগণ তাদের চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল রোগীর মাড়ীতে পুঁজ জমা হয়েছে। সুতরাং মাড়ীর চিকিৎসা করার পর অসুস্থ ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল।

দাঁত ও দৃষ্টিশক্তি

দন্তরোগের সাথে রয়েছে চক্ষুরোগের গভীর সম্পর্ক। দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে যখন খাবারের ছোট ছোট অংশ জমে থেকে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ে, তখন চক্ষুরোগ, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল এবং অন্ধত্বের শিকার হয়ে পড়ে। চক্ষুরোগের আরও যত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, তন্মধ্যে দাঁতের যত্নের প্রতি অমনোযোগই এর প্রধান কারণ বলে বিবেচিত হয়েছে। আর দাঁত পরিষ্কার করা হলেও তা করা হয় ব্রাশ দ্বারা। ব্রাশ কি দাঁতের জন্য উপকারী, না ক্ষতিকর তার বর্ণনা সামনে আসছে।

দাঁত ও পাকস্থলী

অভিজ্ঞ ডাক্তারগণের রিচার্স ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, পাকস্থলীর ৮০% রোগ দন্তরোগের কারণেই হয়ে থাকে, পাকস্থলীর রোগ বর্তমানে বিশ্বের এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাঁতের মাড়ীর ক্ষত নিঃসৃত পুঁজ যখন খাদ্য-পানির সাথে মিলিত হয় অথবা লালার সংমিশ্রণে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে, তখন ওই পুঁজ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা সমস্ত খাদ্যসমূহকে দূষিত ও দুর্গন্ধময় করে তোলে। পাকস্থলী ও যকৃতের রোগের চিকিৎসার পূর্বে দাঁতের চিকিৎসার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এভাবেই পাকস্থলী বা পেটের পীড়ার তড়িৎ ও স্থায়ী চিকিৎসা সম্ভব।

দাঁত ও সামাজিক জীবন

মানুষ যখন কোনো বৈঠকে আলোচনায় রত হয় অথবা যানবাহনে ‘বিশেষ করে বিমানে অন্যের সাথে উপবেশন করে, তখন তার শ্বাস-প্রশ্বাসের দুর্গন্ধের কারণে পাশে উপবেশনকারীর ভীষণ কষ্ট হয়। আর যদি সে ব্যক্তির কাশি শুরু হয়ে যায়, তা হলে তো কথাই নেই। দুর্গন্ধের কারণে পূর্ণ পরিবেশটাই বিষাদময় হয়ে পড়ে। এ ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য সর্বপ্রথম দাঁতের কথা স্মরণে রাখা উচিত। কেননা দুর্গন্ধের প্রধান কারণ হল, দাঁত। এতে ফল না হলে পাকস্থলীর চিকিৎসা করা উচিত। মোটকথা, সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার জন্য দাঁতের যত্ন নেওয়া আবশ্যক। কেননা সুস্থতাই হলো সফল জীবনের চাবিকাঠি। ঐ জীবন কখনো সফলকাম হতে পারে না, যেখানে স্বাস্থ্য রক্ষার মূলনীতির প্রতি থাকে চরম উদাসীনতা।

ব্রাশ ও মিসওয়াকের মধ্যে পার্থক্য

এখানে একটি প্রশ্ন জাগে, দাঁতের পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষার জন্য ব্রাশ বেশি প্রয়োজনীয়, না মিসওয়াক?
তাই আমরা এখানে সর্বপ্রথম ব্রাশের উপকারিতা ও ক্ষতি উভয় দিক নিয়ে আলোচনা করব।

ব্রাশ

জীবাণু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের সুদীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, একবার ব্যবহার করা ব্রাশ স্বাস্থ্যের জন্য তখনই ক্ষতিকর, যখন তা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয়। কেননা ব্যবহারের দ্বারা তার মধ্যে জীবাণুর ভিত্তি স্থাপিত হয়। পানি দ্বারা পরিষ্কার করলেও তা থাকে ক্রমবর্ধমান। তাছাড়া ব্রাশ দাঁতের উপরের উজ্জ্বল স্তরকে দূরীভূত করে দেয়। ফলে দাঁতের মাঝে ফাঁকা সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে দাঁতগুলো মাড়ী থেকে বিচ্যুত হয়ে থাকে। আর খাবারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো দাঁতের ফাঁকে জমে মাড়ী ও দাঁতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

মিসওয়াক

এমন বৃক্ষের মিসওয়াক দাঁতের জন্য উপযোগী, যার আঁশগুলো হয় কোমল, যা দাঁতের মাঝে ফাঁকা বৃদ্ধি করে না এবং মাড়ীতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে না। তিনটি গাছের ডাল মিস্তয়াকের জন্য উপযোগী।
(১) পীলু গাছ
(২) নীম গাছ,
(৩) বাবলা গাছ।

পীলু গাছের মিসওয়াক

পীলু গাছের বিভিন্ন উপকারিতা আছে
(ক) এর আঁশগুলো মসৃণ।
(খ) এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ফসফোরাস।

পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে লবণাক্ত ও বিরাণ ভূমিতে এ বৃক্ষ পাওয়া যায়।
ভূ-তত্ত্ববিদগণের আধুনিক রির্সাচ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, মস্তিষ্কের অসংখ্য খোরাক এবং সহায়ক বস্তুর মধ্যে “ফসফোরাস” অন্যতম। আর এ ফসফরাস মুখের লালা ও লোমকূপের সাহায্যে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। ফলে মস্তিষ্কে শক্তি সঞ্চিত হয়।
সর্দি-কাশি ও মিস্তয়াক
স্থায়ী সর্দি-কাশির রোগীর শ্লেষ্মা যদি জমাট বেঁধে থাকে, সে ক্ষেত্রে মিসওয়াক ব্যবহার করলে শ্লেষ্মা ভিতর থেকে বের হয়ে মস্তিষ্ক হালকা হয়ে যায়। একজন প্যাথলজিস্ট বলেছেন: পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাকে একথা স্পষ্ট
করে দিয়েছে যে, মিসওয়াক হল সর্দি-কাশির সর্বোচ্চ প্রতিরোধক। এমনকি সর্বদা মিসওয়াক ব্যবহার করলে নাক ও গলার অপারেশন করার মতো পরিস্থিতি খুব কমই সৃষ্টি হয়ে থাকে।

দাঁতের সুরক্ষায় মিসওয়াক

(অভিজ্ঞতায় দেখা যায়) মুচকি হাসি, হৃদয়ের প্রফুল্লতা ও মুক্তা ঝরানো হাসির জন্য দাঁত এক অমূল্য সম্পদ। এ মুচকি হাসিই এক সময় ঘৃণা ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং মানুষের মহব্বত-ভালবাসা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট করে দেয়। অর্থাৎ একজন সুদর্শন ও চরিত্রবান ব্যক্তি আভ্যন্তরীণ সুখ-শান্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে যখন মুচকি হাসি দেয়, তখন দাঁত সেখানে এক অতিরিক্ত মাত্রাযোগ করে তা আরো শক্তিশালী করে দেয়। পক্ষান্তরে সেই দাঁতই আবার মানুষের অলসতা ও মূর্খতার স্পষ্ট প্রমাণও বহন করে।

উল্লেখ্য যে, দেশীয় পদ্ধতিতে তেজস্ক্রীয় উপকরণবিহীন প্রস্তুত দাঁতের মাজনেও কিছু উপকারিতা রয়েছে। তবে পীলু ও নীমের মিস্তয়াকে যে গুণাগুণ রয়েছে, তা অন্য কোনো কিছুতে পাওয়া খুবই দুষ্কর।

সংগ্রহীত
বইঃ সুন্নতে রাসূল (স:) ও আধুনিক বিজ্ঞান
লেখকঃ- হাকীম মোহাম্মদ তারেক মাহমুদ চুগতাই রহ.

Exit mobile version