যে মানুষের প্রতি অকৃতজ্ঞ, সে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।” [সূরা সাবা ৩৪: ১৩]
এই গুণটি মুমিনের অন্যতম গুণ। একজন মুমিন স্বভাবতই কৃতজ্ঞ থাকে। সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা তার সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। কিন্তু, আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, তাঁর খুব কম সংখ্যক বান্দাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। যে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, হাত-পা-চোখ দান করেছেন, রিযিক দেন, সেই আল্লাহর প্রতি মানুষ কিভাবে অকৃতজ্ঞ হতে পারে?
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“অবশ্যই আমি তাকে পথ প্রদর্শন করেছি। হয় সে কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ।”1
কৃতজ্ঞতার আরবি হলো ‘শুকুর’, অকৃতজ্ঞতার আরবি হলো ‘কুফর’। আল্লাহকে অবিশ্বাস করা, অস্বীকার করা যেমন কুফর, তেমনি আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা বুঝাতেও কুফর শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
আমাদের সামনে পথ খোলা। আমরা হয় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবো, নতুবা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হবো।
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার শুনলেন, এক লোক দু’আ করছে-
“হে আল্লাহ! আমাকে অল্প সংখ্যকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন!”
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন, “অল্পসংখ্যক মানে কী? কারা অল্পসংখ্যক?”
তখন লোকটি খলিফাকে কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে শুনান-
“আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।” [সূরা সাবা ৩৪: ১৩]
লোকটির বুদ্ধিমত্তা দেখে খলিফা বললেন, “সবাই আমার চেয়ে কতো বেশি জানে!” [মুসান্নাফে আবি শায়বা: ২৯৫১৪]
কৃতজ্ঞতাবোধের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা শুধু যে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবো, এমন না। মানুষের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞতা আদায় করবো। যদি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারি, তাহলে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারবো। যে পারে, সে দুটোই পারে। যে পারে না, সে একটিও পারে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।” [সুনানে আবু দাউদ: ৪৮১১]
একই হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন:
“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়।” [সুনানে আবু দাউদ: ৪৮১১]
আপনি যদি আল্লাহর ইবাদাত ভালোভাবে আদায় করেন, কিন্তু বান্দার হক পরিপূর্ণভাবে আদায় না করতে পারেন, মানুষকে কষ্ট দেন; তাহলে কিন্তু এটার জন্য পরকালে জবাবদিহী করতে হবে। এটার উদাহরণ পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরেকটি হাদীস থেকে।
একবার একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এক নারী অত্যধিক নামাজ, রোজা ও দানের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু সে কথার মাধ্যমে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। তার ব্যাপারে আপনি কী বলেন?”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
“সে জাহান্নামী।”
সাহাবী আবার জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আরেকজন নারী কম রোজা রাখে, দানও কম করে এবং নামাজও কম পড়ার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ। বলতে গেলে সে এক টুকরো পনিরই দান করে। কিন্তু প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। তার ব্যাপারে আপনি কী বলেন?”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
“সে জান্নাতি।” [মুসনাদে আহমাদ: ৯২৯৮]
একজন মানুষ নিজেকে কিভাবে আল্লাহর ওলী দাবি করতে পারে, যে কিনা নিয়মিত নামাজ পড়ে, অথচ মানুষের সাথে প্রতারণা করে, কষ্ট দেয়? আল্লাহর প্রিয়ভাজন হতে গেলে অবশ্যই ‘অলরাউন্ডার’ হতে হবে। আল্লাহর ইবাদাত যেমন করতে হবে, মানুষের হকও আদায় করতে হবে।
কৃতজ্ঞতা মূলত তিন প্রকার। সেগুলো হলো:
- অন্তরের কৃতজ্ঞতা
- জবানের কৃতজ্ঞতা
- আমলের কৃতজ্ঞতা
১। অন্তরের কৃতজ্ঞতা:
অন্তরের কৃতজ্ঞতা হলো উপলব্দি করা। আল্লাহ আপনাকে কেমন নিয়ামতের বারিধারা বর্ষণ করেছেন, মানুষ আপনাকে কিভাবে উপকার করেছে, আপনার পাশে দাঁড়িয়েছে। যখন আপনি অনুভব করবেন এসব উপকারের কথা, তখন আপনা আপনি সবার ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারবেন।
আপনি যখন বাবা অথবা মা হন, তখন অনুভব করেন- ‘সুবহানাল্লাহ! আমার মা-বাবা আমার জন্য কতো কিছু করেছেন’। বাবা-মা হবার আগ পর্যন্ত আপনি হয়তো ঐভাবে অনুভব করতে পারবেন না, আপনার মা-বাবা আপনার জন্য কী করেছেন। নিজের সন্তানকে যখন আদর করতে যাবেন, তখন মনে পড়বে আপনার শৈশবের কথা। সন্তানের মধ্যে শৈশবের আপনি’র ছায়া খুঁজবেন।
২। জবানের কৃতজ্ঞতা:
যদি আপনি অনুভব করেন যে, কেউ আপনার উপকার করেছে, তাহলে তাকে কৃতজ্ঞতা জানান। তার প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। আল্লাহ আপনাকে অনেক কিছু দান করেছেন, নিয়মিত ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলুন। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করতে করতে শেষ করতে পারবেন না।
অনেক মানুষ আছেন, যারা নিয়মিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করলেও মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করেন না। তারা মনে করেন, আমার বন্ধুকে বা আমার ভাইকে বা আমার আম্মা-আব্বাকে ‘ধন্যবাদ, থ্যাংকিউ/জাজাকাল্লাহ’ বলে কী হবে? তারা তো আমার আপনজন। আপনজনের সাথে আবার ফর্মালিটি কিসের?
এটা ভুল ধারণা। মানুষ স্বভাবগত প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে, তার প্রতি কেউ কৃতজ্ঞতা আদায় করলে তার ভালো লাগে। রিক্সা থেকে নেমে একদিন রিক্সাওয়ালা মামাকে বলে দেখুন- ‘থ্যাংকিউ মামা’ বা ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান মামা’; দেখবেন সেই রিক্সাওয়ালা আপনাকে সুন্দর একটি হাসি উপহার দিবে। কারণ, এভাবে কেউ তাকে কখনো বলে না। সে এটা শুনে অভ্যস্ত না। যখন সে আপনার মুখ থেকে শুনবে, আপনাকে সে পছন্দ করবে; আপনার জন্য সে দু’আও করতে পারে।
ঈদের সময় আপনার বাবা আপনাকে নতুন জামা কিনে দেন। তিনি কিন্তু আপনার কাছ থেকে ‘ধন্যবাদ’ শুনার জন্য এটা করেন না। কিন্তু, যদি আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, তিনি খুশি হবেন। সামান্য একটি বাক্য দিয়ে যদি আপনি মানুষকে খুশি করতে পারেন, মানুষের মন জয় করে নিতে পারেন, তাহলে এটা বলতে আপনার আপত্তি কোথায়?
৩। আমলের কৃতজ্ঞতা:
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“হে দাউদ পরিবার! তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও।” [সূরা সাবা ৩৪: ১৩]
দাউদ আলাইহিস সালাম এতো লম্বা নামাজ পড়তেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নামাজের প্রশংসা করেন। দাউদ আলাইহিস সালাম এতো বেশি রোজা রাখতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রোজা রাখার প্রশংসা করেন।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দাউদ আলাহিস সালাম ও তাঁর পরিবারকে জানিয়ে দেন, তারা যেন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করেন। অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁকে যে নিয়ামত দান করেন, সেগুলোর তিনি সদ্ব্যবহার করবেন এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“কাউকে অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে বলে ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ (আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন), তবে সে উপযুক্ত ও পরিপূর্ণ কৃতজ্ঞতা আদায় করলো।” [জামে আত-তিরমিজি: ২০৩৫]
কেউ যদি আমাদের কোনো উপকার করে, কোনো কিছু দিয়ে তার উপকারের প্রতিদান দিতে না পারলেও আমরা যেন কথার মাধ্যমে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“কাউকে কিছু দান করা হলে তার সক্ষমতা থাকলে সে যেন প্রতিদান দেয়। সক্ষমতা না থাকলে সে যেন প্রশংসা করে। কেননা, যে লোক প্রশংসা করলো, সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। আর যে তা গোপন রাখলো, সে অকৃতজ্ঞ হলো। [জামে আত-তিরমিজি: ২০৩৪]
দুঃখজনক কথা হলো, আমরা আমাদের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করি না, আমাদের কাছের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করি না। পরিবারের গৃহিণী যখন ভালো রান্না করে, আমরা মুখ ফুটে বলি না ‘রান্নাটা খুব ভালো হয়েছে, আল্লাহ তোমার/আপনার হাতে বরকত দান করুন’। আমরা লজ্জা পাই। কিংবা আমরা মনে করি, এটা বলে কী হবে? আমরা কাজের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। কৃতজ্ঞতা শুধু কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে, এমন না। কথার মাধ্যমেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। আপনার ছোট্ট একটি প্রশংসা অনেকের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে সাহাবীদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। কৃতজ্ঞতা আদায়ে তিনি কার্পণ্য করতেন না। আমরাও যেন কার্পণ্য না করি।
অনেকেই দেখবেন রামাদ্বানের শেষে ‘ঈদ মোবারক’ ম্যাসেজ দেয়। কেউ কেউ সেটা হোয়াটসঅ্যাপ ব্রডকাস্টের মাধ্যমে সবাইকে দিয়ে দেয়, কেউ কেউ কপি করে সবাইকে একই ম্যাসেজ দেয়।
মনে করুন, কেউ আপনাকে কপি-পেস্ট ম্যাসেজ দিলো, আরেকজন আপনাকে ফোন করে বললেও ‘ঈদ মোবারক’। কোনটা আপনার কাছে বেশি ভালো লাগবে? অবশ্যই, যে আপনাকে ফোন করে বলেছে। কারণ, আপনি তার মধ্যে আন্তরিকতা দেখতে পান।
কৃতজ্ঞতা আদায় হতে পারে ছোটো জিনিসের জন্য এবং বড়ো জিনিসের জন্য। যে আপনাকে ১ লক্ষ টাকা দিলো, তাকে আপনি ‘জাজাকাল্লাহু খাইরান’ বললেন, অথচ যে আপনাকে ১০ টাকা দিলো, তাকে বললেন না’ এমনটা হতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ছোটো কিছুর জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে বড়ো কিছুর জন্যও কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।” [আল-ফিরদাউদ লিল-দায়লামী: ৫৯৬২]
আপনি যদি ছোটো বিপর্যয়ে ধৈর্যধারণ করতে না পারেন, তাহলে বড়ো বিপর্যয় আসলে ভেঙ্গে পড়বেন। ঠিক তেমনি, কৃতজ্ঞতা আদায়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এটা অভ্যাসের ব্যাপার, চর্চার ব্যাপার। হুট করে আপনি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে যাবেন না। আস্তে আস্তে এটা শিখতে হবে, চর্চা করতে হবে।
কেউ যদি আপনাকে হাজার টাকার কোনো উপহার দেয়, আপনি তাকে শ’টাকার কোনো উপহার দিন। কেউ যদি আপনাকে দুটো বই উপহার দেয়, আপনি অন্তত তাকে একটি বই উপহার দিন। সবসময় অন্য দিবে, আপনি তার আশায় বসে থাকবেন, এমনটা যেন না হয়।
সময় পার হবার পরও আপনি অন্যের কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। কেউ যদি ১০ বছর পূর্বে আপনার কোনো উপকার করে, আপনি ১০ বছর পরও তার সেই উপকারের কথা স্মরণ করুন। আপনি এটা ভাববেন না যে, তখন তো আমি কৃতজ্ঞতা আদায় করেছি, এখন কৃতজ্ঞতা আদায় করে কী হবে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত তাঁর সাহাবীদেরকে তাঁদের উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন। আপনি-আমি কেনো করবো না? অথচ সাহাবীরা তো শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এসব করতেন। তারপরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের অবদান স্মরণ করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বলেন:
“নিজের সম্পদ এবং সাহচর্য দিয়ে যিনি আমার সবচেয়ে বেশি উপকারে এসেছেন তিনি হলেন আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)।”2
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের কয়েকদিন পূর্বে তিনি বলেন:
“আমি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিশেবে গ্রহণ করলে অবশ্যই আবু বকরকে গ্রহণ করতাম। আবু বকরের দরজা ব্যতীত এই মসজিদের ছোটো দরজাগুলো সব বন্ধ করে দাও।”3
কয়েক যুগ পর যখন শায়মা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখা হয়, তিনি তখন তাঁর দুধ-বোনের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করেন। ছোটোবেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লালন পালন করেন উম্মে আইমান রাদিয়াল্লাহু আনহা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারাজীবন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন। তিনি তাঁকে ডাকতেন ‘মায়ের পর মা’ বলে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সবচেয়ে দুঃসময়ে তাঁর পাশে থাকেন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা। জীবদ্দশায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করেন, ইন্তেকালের পরও তিনি তাঁর কৃতজ্ঞতার কথা স্মরণ করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন।
কখনও ছাগল জবাই হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুঁজে খুঁজে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার বান্ধবীদের কাছে পাঠাতেন।4
খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পরও তাঁর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা অটুট থাকে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন তাঁর স্ত্রী এবং সাহাবীদের উপকারের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন, তেমনি অমুসলিমদের কৃতজ্ঞতার কথাও স্মরণ করতেন। তেমন একজন অমুসলিম ছিলেন মুতঈম ইবনে আদি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফ থেকে ফেরার পর মুতঈম ইবনে আদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশ্রয় দেন। তিনি নিজে ইসলাম গ্রহণ না করলেও বিভিন্ন সময় মুসলিমদের পাশে দাঁড়ান মানবিক কারণে। তাঁর কারণে নানান সময় মুসলিমরা উপকৃত হয়।
দুঃসময়ে উপকার করা মুতঈম ইবনে আদির প্রশংসা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সামনে করেন। বদর যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদেরকে তিনি মুক্ত করে দিতেন বিনা মুক্তিপণে, যদি মুতঈম তখন বেঁচে থাকতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের সুদিনে ‘উপকারী বন্ধু’র প্রতিদান আদায় করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যদি মুতঈম ইবনে আদি জীবিত থাকতেন আর আমার নিকট এ সকল নোংরা লোকের জন্য সুপারিশ করতেন, তবে আমি তার সম্মানার্থে এদেরকে মুক্ত করে দিতাম।”5
আল্লাহ আমাদেরকে কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করুন। যে অল্পসংখ্যক লোক আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করে, আমরা যেন সেই অল্পসংখ্যকদের দলভুক্ত হতে পারি এই কামনা করি।
সুলাইমান আলাইহিস সালামের মতো আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করি-
“হে আমার রব! আপনি আমার প্রতি ও আমার মা-বাবার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, তার জন্য আপনার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক আমাকে দান করুন।”6
- [সূরা আল-ইনসান: ৩] ↩︎
- [সহীহ বুখারী: ৪৬৬] ↩︎
- [সহীহ বুখারী: ৪৬৭] ↩︎
- [সহীহ বুখারী: ৬০০৪] ↩︎
- [সহীহ বুখারী: ৩১৩৯, মুসনাদে আহমাদ: ২৭৫০৬] ↩︎
- [সূরা আন-নামল ২৭: ১৯] ↩︎