Dua

যে দু’আ নারীদের জন্য ‘স্পেশাল’

আজকের যুগের মুসলিম মেয়েদের বড়ো এক অংশ অমুক তমুক সেলিব্রেটিদের অনুসরণ করাতে ব্যস্ত। তারা জানেই না তাদের আদর্শ কে হওয়া উচিত। যেখানে তাদের অনুসরণ করার কথা জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত নারী ফাতেমা (রাঃ), আয়েশা (রাঃ), খাদিজা (রাঃ) প্রমুখ। এমনকি আছিয়া (আঃ) যার কথা স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে বলেছেন সেই তাদেরকে অনুসরণ না করে নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, কাফির-মুশরিক, ইসলাম বিদ্বেষীদের অনুসরণ করে চলছে। আর তাদের অনুসরণে আর যাই-হোক সঠিক পথের সন্ধান পাবেন না, জানবেন না শান্তির উৎস, নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দীতেও পরিণত করা হবে না।

হে আমার বোন, আপনি কি চান জান্নাতে আপনার একটি বাড়ি হোক?
আর সে বাড়ি জান্নাতের যেখানে সেখানে নয় স্বয়ং আপনার রবের কাছাকাছি হোক তথা আপনি আপনার রবের প্রতিবেশী হোন সেটা কি আপনি চান?
সাংসারিক জীবনে আপনি কি আপনার স্বামীর শারিরীক এবং মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ?
আপনার ননদ কি আপনার সাথে খারাপ আচরণ করেন?
আপনার প্রতি আপনার শশুর শাশুড়ির আচরণ কি রুক্ষ?
শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে কি আপনি বিভিন্নভাবে জুলুমের স্বীকার হচ্ছেন?
মোটকথা, কোনো জালিমের কাছে কি আপনি বড়ো অসহায় সময় কাটাচ্ছেন?
দিনকাল কষ্টে যাচ্ছে?

প্রশ্নগুলো রেন্ডম হলেও জিজ্ঞাসিত কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে তবে আপনার জন্য কুরআন আছিয়া (আঃ) এর অনুকরণে একটি দোয়া পাঠ করার ব্যবস্থা রেখেছে। আছিয়া (আঃ) তার জীবনের কঠিন সময়ে আল্লাহর কাছে এমন একটি দোয়া করেছিলেন যা আল্লাহ তা’য়ালা সকল ঈমানদারদের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিয়েছেন যাতে তারাও একই কায়দায় রবের কাছে দোয়া করতে পারে। সুবহান’আল্লাহ!

সেই ওজনদার দোয়াটি হচ্ছে,

‎رَبِّ ابۡنِ لِیۡ عِنۡدَکَ بَیۡتًا فِی الۡجَنَّۃِ وَ نَجِّنِیۡ مِنۡ فِرۡعَوۡنَ وَ عَمَلِهٖ وَ نَجِّنِیۡ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ
অর্থঃ হে আমার রব, জান্নাতে তোমার পাশে তুমি আমার জন্য একখানা ঘর বানিয়ে দিয়ো, আর (দুনিয়ার এ ঘরেও) তুমি আমাকে ফির‘আউন এবং তার যাবতীয় কার্যকলাপ থেকে বাঁচিয়ে রেখো, তুমি আমাকে জালিম সম্প্রদায়ের সকল প্রকার অনাচার থেকে উদ্ধার করো।1

প্রসঙ্গত, অচিরেই দোয়াটি ‘শুদ্ধ করে’ শিখে নিবেন।

লক্ষ্যণীয়, আছিয়া (আঃ) আল্লাহর নিকট শুধু জান্নাতে একটি বাড়ি চাওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি। জান্নাতের সে বাড়িটি কোথায় হবে সেটাও তিনি বলে রেখেছেন। সেটা যেন রবের কাছাকাছি হয় সেই আবদারও জোরালোভাবে করে রেখেছেন। সুবহান’আল্লাহ! এছাড়া, দুনিয়ায় ফির‘আউনের জুলুমসহ সকল ধরণের জুলুম থেকে মুক্তির দোয়াও করেছেন।

এই দোয়ার ইন্টরেস্টিং একটি পার্ট হচ্ছে, ফির‘আউনের মতো এতো বড়ো জালিমের এতো ভয়ঙ্কর কঠিন নির্যাতনের স্বীকার হওয়া আছিয়া (আঃ) কিন্তু চাইলে উনার দোয়ার শুরুতে জুলুম থেকে মুক্তির দোয়া করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে শুরুতেই জান্নাতের একখানা বাড়ি চেয়ে নিলেন, সেটাও আবার স্বয়ং আল্লাহর পাশে। এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, তার কাছে দুনিয়ার জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার চেয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি মনে করেছেন, জান্নাতে যাওয়াটাই ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ার সকল কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করার আসল স্বার্থকতা। এছাড়া, জান্নাতে আল্লাহর পাশে অবস্থানের বিনিময়ে দুনিয়ার এসব জুলুম কিছুই না। এমনটাই তার (আঃ) দোয়ার ভাষার সিকুয়েন্স থেকে বোঝা যায়।

এখন কুরআন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কি কখনো আছিয়া (আঃ) এর মতো আল্লাহর নিকট এমন দোয়া করেছি যে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে তোমার পাশে একটি ঘর বানিয়ে দিয়ো। ফির‘আউনের মতো আজকে যারা জালিমের ভূমিকায় আছে তাদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। ইয়া রব! আমাকে সকল প্রকার জুলুম নির্যাতন থেকে উদ্ধার করুন। কী, এভাবে আমরা কোনোদিন রবের দরবারে হাত তুলে বিনীত কন্ঠে বলেছি?
রবের সাথে নিজের কষ্টের কথা মনখোলে বলেছি?

অনেক বোন আছেন যারা পারিবারিক অশান্তিতে অতিষ্ঠ। সবার কাছে জুলুমের স্বীকার হয়ে যাচ্ছেন। তার প্রতি এ জুলুম তিনি না দুনিয়ার কাউকে বলতে পারছেন না মুখ বুঝে সহ্যও করতে পারছেন। সে এক বড়ো মানসিক যন্ত্রণা। এ যন্ত্রণায় নীরবে কেবল চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ে আর হয়তো ভাবেন কবে পাবো আমি এ জুলুম থেকে মুক্তি, কবে হবে আমার এ ধৈর্যের অবসান। ভাবছেন, এ অবস্থায় করণীয় কী?

হে বোন আমার, আছিয়া (আঃ) এর মতো জান্নাত লাভের আশায়, জান্নাতে রবের কাছাকাছি একটি ঘর পাওয়ার আশায় ধৈর্যের সাথে দুনিয়ার যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যখনই কোনো কঠিন পরিস্থিতির স্বীকার হবেন তখন ভেঙ্গে না পড়ে, আশাহত না হয়ে জান্নাতের মালিকের কাছে উল্লেখিত দোয়া পাঠের মাধ্যমে আগে জান্নাত চেয়ে নিবেন। তারপর নিজের যন্ত্রণার কথা নিজ ভাষায় রবের কাছে তুলে ধরবেন। এই দোয়া আমাদের লাইফের সাথে খুব বেশি রিলেট করে, আমাদের সাংসারিক জীবনের অনেক চাওয়ার সাথে দোয়ার কথাগুলো কী দারুণ মিলে রয়েছে-তাই না! এজন্য এই দোয়া এখন থেকে সবসময় পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলবেন।

যদিও ফির‘আউনের মতো বড়ো জালিমের সাথে কারো তুলনা হয় না তবুও আপনার স্বামী হয়তো আপনাকে চরম নির্যাতনের মাধ্যমে ফির‘আউনের ন্যায় জালিমের ভূমিকায় আছেন। তার কষ্টদায়ক আচরণে আপনি যেন বেঁচে থেকেও বেঁচে নেই, ভীষণ কঠিন এক সময় পার করছেন। আপনি যতো বড়ো কঠিন অবস্থায়ই থাকুন না কেন নিশ্চয়ই আছিয়া (আঃ) এর মতো কঠিন অবস্থায় আপনি নন। বোন আমার! আপনি কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না, হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাবেন না।

ও আমার বোন, আমি বুঝতে পারছি, আপনি অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে দিন পার করছেন। এত বেশি কষ্টের স্বীকার হচ্ছেন যা হয়ত কাউকে বোঝানোও সম্ভব নয়, যা হয়ত শুনলে যে কারো চোখে অশ্রু আসবে। আছিয়া (আঃ) এর জুলুমের দিনগুলো যেমন আজ আর নেই তেমনি আপনারও আজকের জুলুমের দিনগুলো একদিন থাকবে না। শীঘ্রই এ সময়টা কেটে যাবে গো বোন। আপনার জন্য আছিয়া (আঃ) এর কাছে বিশাল অনুপ্রেরণা রয়েছে। আছিয়া (আঃ) যদি এতো বড়ো জালিমের সংসার করতে পারেন শুধুমাত্র এই আশায় যে, একদিন আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে এর উত্তম বিনিময় দিবেনই। তাহলে আপনি কেন পারবেন না, বোন? অতি অবশ্যই পারবেন। আপনি তো তারই উত্তরসূরী, আপনি তো তার মতোই জান্নাতে যেতে চান।

  1. সূরা আত তাহরীম, আয়াত নং : ১১ ↩︎

লিখেছেন

Picture of রাকিব আলী

রাকিব আলী

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

All Posts

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture