ইসলামের দৃষ্টিতে অনশন ধর্মঘট
অনশন বা উপবাস বলতে শাব্দিক ভাবে বোঝায়, কোনরূপ খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করা। তবে খাবারের অভাবের কারণে অভুক্ত থাকা অনশন নয়।
বাংলা উইকিসোর্স-এ বলা হয়েছে, “সাধারণতঃ অনশন বলিতে মৃত্যুসংকল্পপূর্বক উপবাস বুঝায়।”
রাজনীতির ভাষায়, অনশন ধর্মঘটকে নীরব প্রতিবাদ বা অহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে বা কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন বা দাবী আদায়ের উদ্যেশ্যে দীর্ঘ সময় উপবাস করে থাকেন।
এর উদ্দেশ্য হল, সরকার, নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তি বিশেষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং দাবি আদায়ের জন্য তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা।
তা হয় কখনো হয় ব্যক্তি পর্যায়ে, কখনো দল বা সংগঠনের পক্ষ থেকে। কখনো ব্যক্তির নিকট বিশেষ দাবী আদায়, (যেমন: বিয়ের দাবীতে অনশন), কখনো বিশেষ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী আদায় (যেমন: জেল কর্তৃপক্ষ) আবার কখনো হয় রাষ্ট্রের নিকট দাবি উপস্থাপন।
যখন এই অনশনকে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা বিশেষ দাবি পূরণের জন্য প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং তা আমৃত্যু (Hunger Strike to Death) করার হুমকি দেওয়া হয় তখন ইসলামে এর বিধান নিয়ে আলোচনা আসে।
অনশন ধর্মঘটের ব্যাপারে ইসলামের বিধান:
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনশন করতে গিয়ে ইতিহাসে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে পানাহার করার সুযোগ থাকার পরেও বা পানাহারের সক্ষমতা থাকার পরেও কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে না খেয়ে থাকে (অনশন করে) এবং এর ফলে যদি তার মৃত্যু ঘটে তাহলে সে ‘আত্মহত্যা কারী’ বলে গণ্য হবে। অথবা এর কারণে যদি তার অঙ্গহানি বা শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতি হয় তাহলেও সে গুনাহগার হবে। উভয়টির পরিণতি জাহান্নাম।
মোটকথা, স্বেচ্ছায় এমন কোনও কাজ করা যা নিজের ক্ষতির কারণ হয় কিংবা মৃত্যু ডেকে আনে তা হারাম বা নিষিদ্ধ। চাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হোক বা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে হোক।
নিম্নে এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হল:
ইসলামে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ
জীবন আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত। তাই ইসলাম মানুষকে দেওয়া জীবনের সুরক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। সে কারণে ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের জীবনকে বিপন্ন করা বা মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
“আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। [সূরা নিসা: ২৯]
তিনি আরও বলেন:
وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
“আর তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকার্য করো। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্ম শীলদের ভালোবাসেন।” [সূরা বাকারা: ১৯৫]
আত্মহত্যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। এ ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَيْءٍ عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যে ব্যক্তি কোনও কিছু দ্বারা আত্মহত্যা করবে কিয়ামতের দিন তাকে সেই জিনিস দিয়েই শাস্তি দেওয়া হবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১০৯]
ইসলামে এমন কোনও কাজ করা হারাম যা ক্ষতিকর
এটি ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি যে, ইসলামে এমন কোনও কাজ করা হারাম যাতে নিজের বা অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ
“নিজের বা অন্যের কোনও ক্ষতি করা যাবে না। ”[ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৩৪১; মুয়াত্তা মালেক, হাদিস ১৪২৯]
সুতরাং যে কাজ করলে মৃত্যু সংঘঠিত হওয়ার অথবা কোনও প্রকার শারীরিক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।
আর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দীর্ঘমেয়াদী অনশনের ফলে শারীরিক নানা ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
দীর্ঘ অনশনে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ অনশনে বা স্বাভাবিক সময়ের বেশি না খেয়ে থাকলে শরীরে বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীরের নিজস্ব খাদ্য ফুরিয়ে যাওয়া:
প্রথম দিকে শরীর শক্তি জোগানোর জন্য লিভার (যকৃৎ) থেকে জমা রাখা শর্করা (গ্লাইকোজেন) এবং চর্বি ব্যবহার করে।
এরপর যখন জমা থাকা চর্বিও শেষ হয়ে যায় তখন শরীর শক্তি পেতে শুরু করে মাংসপেশি (Muscle) ভাঙতে। এই মাংসপেশি ভাঙা থেকেই শরীর কোনোমতে কাজ চালানোর মতো খাবার জোগাড় করে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া:
দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকার কারণে রক্তে শর্করার (Sugar) পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়।
মস্তিষ্ক মূলত শর্করা থেকে শক্তি নেয়। শর্করার অভাবে ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে এবং অনশন কারী অচৈতন্য (Unconscious) হয়ে যেতে পারেন।
বিষাক্ত কিটোন তৈরি হওয়া:
মাংসপেশি ভাঙার সময় শরীরে কিটোন বডি নামে কিছু উপাদান তৈরি হয়। এগুলি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বা বিষাক্ত।
কিছু কিটোন প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে গেলেও, বাকিটা শরীরের ভিতরেই থেকে যায়। এই অবস্থায় অনশন চালিয়ে গেলে কিডনি, যকৃৎ (Liver), হৃৎপিণ্ড (Heart) সহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি:
কিটোন বডি এবং শর্করার অভাবের কারণে যেসব অঙ্গের বড় ক্ষতি হতে পারে:
কিডনি (বৃক্ক) ও যকৃৎ (Liver): কিটোন বডির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মস্তিষ্ক (Brain): শর্করার অভাবে এর স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
হৃৎপিণ্ড (Heart): রক্তচাপ অনিয়মিত হওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত আসতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী বা স্থায়ী ক্ষতি:
এই ক্ষতিগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা প্রয়োজন। যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক বা কিডনির মতো অঙ্গগুলো একবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে সেই ক্ষতি সাধারণত আর পূরণ করা যায় না।
সেক্ষেত্রে অনশন কারীকে বাকি জীবন এই ক্ষতির মাত্রা জেনে-বুঝেই বিশেষ সতর্কতার সাথে কাটাতে হয়।
[Anandabazar-এর অনলাইন পোর্টাল থেকে সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]
এটি ভিন্ন সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ
ইসলামের দৃষ্টিতে অনশনের মাধ্যমে নিজের জীবনের ধ্বংস ডেকে আনা, কোনও ভাবে আত্মহননের পথে বেছে নেওয়া বা নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দেওয়া━কারণ যাই হোক না কেন━বড় অপরাধ এবং কবিরা গুনাহ। এটি অমুসলিমদের বা পাশ্চাত্যের রাজনীতির অংশ।
এমনকি তা হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় রীতি থেকে আসতে পারে। কেননা হিন্দুধর্মে পূজা-পার্বণের পূর্বে কিংবা কোনও ব্রত অর্জনের লক্ষ্যে আমৃত্যু অনশন করার বিধান রয়েছে। অনশন তিন রকম স্বল্পানশন, অর্ধাশন ও পূর্ণানশন।” [অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম]
পানাহার না করার ফলে মৃত্যু: আলেমদের ফতোয়া
কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে পানাহার থেকে বিরত থাকার ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হয় তাহলে ইসলামি পণ্ডিতদের মতে সে আত্মহত্যা কারী━যার পরিণতি জাহান্নাম। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
ইমাম আবু বকর আর রাযী আল জাসসাস আল হানাফি রাহ.- বলেন,
” مَنْ امْتَنَعَ مِنْ الْمُبَاحِ حَتَّى مَاتَ كَانَ قَاتِلا نَفْسَهُ مُتْلِفًا لَهَا عِنْدَ جَمِيعِ أَهْلِ الْعِلْمِ… لَوْ امْتَنَعَ مِنْ أَكْلِ الْمُبَاحِ مِنْ الطَّعَامِ مَعَهُ حَتَّى مَاتَ كَانَ عَاصِيًا لِلَّهِ تَعَالَى
“যে ব্যক্তি মুবাহ (বৈধ ও অনুমোদিত) বস্তু গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে এবং এভাবে সে মারা যাবে, সে সকল আহলে ইলমের মতে সে আত্মহত্যাকারী ও নিজের জীবন বিনাশকারী হিসেবে পরিগণিত হবে… যদি সে তার কাছে থাকা মুবাহ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকে এবং মারা যায় তবে সে আল্লাহ তাআলার নাফরমান বলে গণ্য হবে।”
[সূত্র: আহকামুল কুরআন (১/১৭৭]
২. ইমাম আল কারাফি আল মালিকি রাহ. বলেন,
” لَوْ مَنَعَ مِنْ نَفْسِهِ طَعَامَهَا وَشَرَابَهَا حَتَّى مَاتَ : فَإِنَّهُ آثِمٌ قَاتِلٌ لِنَفْسِهِ
“যদি কোনও ব্যক্তি তার আত্মার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পানীয় থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং এর ফলে সে মারা যায়: তবে সে পাপী এবং নিজ আত্মার হত্যাকারী বলে গণ্য হবে।” [সূত্র: “আল-ফুরূক” (৪/১৮৩)]
৩. শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,
الأَكْلَ عِنْدَ الضَّرُورَةِ وَاجِبٌ . قَالَ مَسْرُوقٌ : مَنْ اُضْطُرَّ إلَى الْمَيْتَةِ ، فَلَمْ يَأْكُلْ ، فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ
“চরম প্রয়োজনের সময় খাদ্য গ্রহণ করা ওয়াজিব। মাসরুক রহ. বলেন: “যে ব্যক্তি মৃত জন্তু (যা সাধারণত হারাম) খেতে বাধ্য হল কিন্তু খেলো না এবং মারা গেল সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [সূত্র: আল ফাতাওয়া আল কুবরা (১/৩৮৯)]
আমরণ অনশন ধর্মঘট সম্পর্কে আধুনিক যুগের আলেমদের ফতওয়া
আমরণ অনশন ধর্মঘট সম্পর্কে আধুনিক আলেমগণও উপরোক্ত দলিলের উপর নির্ভর করে ফতওয়া দিয়েছেন।
শাইখ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ.:
বিশ্ব বরেণ্য ইসলামি স্কলার, সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রা. কে প্রশ্ন করা হয়━
আমরা প্রায়শই শুনতে পাই যে, মানুষ দাবি আদায়ের জন্য আমরণ অনশন ধর্মঘট করছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এর বিধান কী?
উত্তরে তিনি বলেন,
هذا الإضراب ما له أصل، هذا إعانة للأعداء على مقاصدهم الخبيثة، هذا النظام ما له أصل، وإذا كان يفضي إلى ضرر عليه، أو قتل نفسه؛ فهو لا يجوز، هذا الذي نعتقده في هذا، هذا أخذوه من أعداء الله، هذا لا نعرف له أصلًا
“এই ধরনের অনশনের শরিয়তে কোনও ভিত্তি নেই। এটি বরং শত্রুদের মন্দ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সাহায্য করার নামান্তর। এই পদ্ধতির কোনও ভিত্তি নাই।
যদি এই অনশন নিজের ক্ষতির কারণ হয় অথবা আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয় তবে তা জায়েজ নেই। এই বিষয়ে আমাদের আকিদা এটাই। এই প্রথাটি আল্লাহর শত্রুদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ইসলামে আমরা এর কোনও ভিত্তি জানি না।”
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. এ প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন,
” حُكم من توفي وهو مضرب عن الطعام ، أَنَّه قاتل نفسه وفاعل ما نهى عنه الله تعالى ، فإن الله سبحانه وتعالى يقول: ( وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ) ، ومن المعلوم أن من امتنع عن الطعام والشراب لابدَّ أن يموت ، وعلى هذا فيكون قاتلاً لنفسه ، ولا يحلُّ لإنسان أن يُضرِبَ عن الطعام والشراب لمدة يموت فيها ، أما إذا أضرب عن ذلك لمدة لا يموت فيها ، وكان هذا السبب الوحيد لخلاص نفسه من الظلم ، أو لاسترداد حقه فإنَّه لا بأس به ، إذا كان في بلد يكون فيه هذا العملُ للتخلص من الظلم ، أو لحصول حقِّه ، فإنَّه لا بأس به ، أما أن يَصِلَ إلى حدِّ الموت : فهذا لا يجوز بكل حال ” .
“যে ব্যক্তি অনশন রত অবস্থায় মারা যায়, তার বিধান হল সে আত্মহত্যাকারী এবং সে এমন কাজ করেছে যা আল্লাহ তা’আলা নিষেধ করেছেন। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
'আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।' [সূর নিসা: ২৯]
এটা জানা কথা যে, যে ব্যক্তি খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে সে অবশ্যই মারা যাবে। আর এর ভিত্তিতে সে নিজের আত্মহত্যাকারী হিসেবে গণ্য হবে।
কোনও মানুষের জন্য এমন সময় পর্যন্ত অনশন করা বৈধ নয় যার ফলে তার মৃত্যু হবে। তবে যদি সে এমন সময় পর্যন্ত অনশন করে যে, এতে তার মৃত্যু হবে না এবং এটিই যদি তার উপর চলতে থাকা জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার অথবা নিজের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার একমাত্র পথ হয় তাহলে এতে কোনও দোষ নেই—যদি সেই দেশে এটি জুলুম থেকে মুক্তি বা অধিকার আদায়ের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কিন্তু মৃত্যুর পর্যায়ে পৌঁছানো: এটি কোনও অবস্থাতেই জায়েজ নয়।”
[মাজমু’ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল আল উসাইমিন (২৫/৩৬৫)]
এ ফতোয়ার আলোকে এটিও প্রতীয়মান হয় যে, যদি কেউ সাময়িকভাবে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন এবং এর উদ্দেশ্য যদি হয় কোনও দাবি আদায়ের জন্য সহানুভূতি লাভ করা কিন্তু তাতে জীবন নাশ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থায়ী ক্ষতির কোনও আশঙ্কা না থাকে তবে তা জায়েজ। যেমন: ছেলে-মেয়েরা তাদের বিশেষ কোনও দাবি পূরণের জন্য সাময়িকভাবে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে, বাবা-মার সহানুভূতি নিয়ে তাদের দাবী পূরণ হলে ইনশাআল্লাহ তাতে কোনও দোষ নেই।
মূল পার্থক্যটা হল: জীবনের ক্ষতি বা মৃত্যুর হুমকি ছাড়া সাময়িক প্রতিবাদ এবং আমৃত্যু বা স্থায়ী ক্ষতির উদ্দেশ্যে অনশন-এই দুটির মধ্যে শরীয়তের বিধান ভিন্ন।
মোটকথা, কোনভাবেই নিজেকে অনর্থক কষ্ট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। তাই মুসলিমদের জন্য পাশ্চাত্যের এই সকল ফালতু ও ক্ষতিকর প্রতিবাদের পদ্ধতি বর্জন করা অপরিহার্য।
অন্যায়ের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে ইসলামি পদ্ধতি
কেউ যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চায় তাহলে অবশ্যই শরিয়ত সম্মত পন্থায় যৌক্তিক উপায়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। আর ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায়ের প্রতিবাদের মূলনীতি প্রতিধ্বনিত হয়েছে নিম্নোক্ত হাদিসটিতে:
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ
“তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনও মন্দ কাজ দেখে, তাহলে সে যেন তা হাত দিয়ে পরিবর্তন করে। যদি সে এতটা সামর্থ্য না রাখে তাহলে সে যেন মুখ দিয়ে বলে। যদি এটাও না পারে তাহলে যেন অন্তরে ঘৃণা করে। আর এটি হলো ইমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর।” [সহিহ মুসলিম: ৪৯]
অবশ্য পাশ্চাত্যের আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র যেমন হারাম তেমনি এর জন্য এই ধরনের হারাম কর্মসূচি (অনশন ধর্মঘট) ডাবল হারাম। এগুলো মূর্খদের মুর্খামি ছাড়া কিছু নয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে সব ধরণের জাহেলি প্রথা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।





