ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালন করার সঠিক পদ্ধতি

স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালনের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
কোন পদ্ধতিতে আমাদের এ সব দিবস পালন করা উচিত?
সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে আলোক জানতে চাই।
ইসলামের দৃষ্টিতে কিভাবে বিজয় পালন করতে হয় তা জানতে সূরা নাসর এর তরজমা পড়ুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّـهِ وَالْفَتْحُ - وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّـهِ أَفْوَاجًا - فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন তখন আপনি তাসবীহ পাঠ তথা আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং ইস্তিগফার তথা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।”
[সূরা নাসর]

অর্থাৎ বিজয় অর্জিত হলে মনে করতে হবে, এই বিজয় আল্লাহ তাআলার সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। তাঁর সাহায্য ও শক্তি ছাড়া কখনোই তা সম্ভব ছিল না। তাই বেশি বেশি মহান রবের তাসবিহ ও ইস্তিগফার পাঠ করতে হবে এবং তাঁর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। কিন্তু তা কেবল বিজয়ের দিনেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা সবসময়-সারা বছর।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবীদের যুগে কত শত দেশ ও শহর বিজিত হয়েছে কিন্তু তারা কি কখনো ঘটা করে ‘বিজয় দিবস’ পালন করেছেন-এমন কোন ইতিহাস আমাদের জানা নেই।

বর্তমান যুগে আমাদের দেশে বিজয় দিবস পালনের নামে কী হয়?

কারও অজানা নয় যে, বর্তমানে বিজয় কিংবা স্বাধীনতা দিবস পালনের নামে অনুষ্ঠিত হয় বাদ্য ও নাচগানের অনুষ্ঠান, যুবক-যুবতীদের নিয়ে উত্তাল কনসার্ট, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং নানা ধরণের অপসংস্কৃতি চর্চা। কথিত ‘শহীদদের’ উদ্দেশ্যে তৈরি করা বেদিতে ফুল দেয়া হয়, সেনাবাহিনী সেগুলোতে স্যালুট দেয়, রাজনৈতিক বক্তারা পুরাতন হিংসা-বিদ্বেষকে উস্কে দেয়, পরাজিত গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে জঘন্য ভাষায় গালাগালি করে ও আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তৃতা দেয়। কিন্তু বিজয়ীদের জন্য এগুলো কখনও শোভা পায়?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কা বিজয় কি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে না?

বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন উপলক্ষে আমাদের করণীয় কি?

রাষ্ট্রের বিজয় উপলক্ষে আমাদের কর্তব্য, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং অধিক পরিমাণে তাসবীহ ও ইস্তিগফার পাঠ করা। কারণ এ বিজয় নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য বলে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। সর্বোপরি সব ধরণের অপসংস্কৃতি ও শিরকি কার্যক্রম, হিংসা-বিদ্বেষ ও উস্কানি মূলক বক্তব্য ও আচরণ পরিহার করে ক্ষমা, উদারতা এবং ন্যায়-ইনসাফ এর ভিত্তিতে সকলে মিলেমিশে দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে, অশিক্ষা ও দরিদ্রতা দূরীকরণে অবদান রাখতে হবে এবং শত্রুর কবল থেকে দেশ রক্ষার জন্য একতাবদ্ধ থাকতে হবে… তবেই মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার ফল লাভ করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।

আরও মনে রাখতে হবে, যে দেশে আমরা জন্ম গ্রহণ করেছি এবং যে দেশের আলো ও বাতাসে আমরা বড় হয়েছি তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সে দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবাসতে হবে এবং এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে দেশের বা দেশের মানুষের কোন ক্ষতি হয় অথবা বহির্বিশ্বে বদনাম হয়।

মোটকথা, একজন খাঁটি মুসলিম হবে খাঁটি দেশপ্রেমিক, সৎ ও আদর্শবান নাগরিক এবং দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরী-তবে তা অবশ্যই ইসলামের মহান আদর্শকে বুকে ধারণ করে; ইসলামকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়।

আল্লাহু আলাম।


Exit mobile version