গায়েবানা জানাজা নামায পড়া কি বৈধ

গায়েবানা জানাজা নামায পড়া কি বৈধ?
একাধিকবার জানাজা করা ঠিক কিনা।
আমাদের বর্তমানে অন্যান্য সালাত না পড়লেও গায়েবানা জানাজা হয়, কখনো রাজনৈতিকভাবে কখনো ধর্মীয়ভাবে।
সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর জীবদ্দশায় অনেক সাহাবী দূরে মৃত্যুবরণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কারো জন্য গায়েবানা জানাজা পড়েন নাই।

একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটনা নাজ্জাশি। এ ব্যতিক্রম ঘটনাকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে এ ব্যাপারে ফোকাহারা মতভেদ করেছেন।

কেউ বলেছেন তার জন্য এটা ব্যতিক্রম ঘটনা ছিল, এটার উপর আমরা শরীয়তের বিধান আনবো না।
এটা শরীয়তের মূলনীতি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সালাম কখনো কোন কাজ নিয়মিত করেন, সর্বদা করেন, আগেও করেছেন, পরেও করেছেন, মাঝে একটা ব্যতিক্রম করেন।
তখন ওলামায়ে কেরাম অনেক ক্ষেত্রে এই বাতিক্রমকে ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করে বাকি কর্মকে সুন্নত হিসেবে গন্য করেছেন।

দ্বিতীয় আরেকটি মত হল, এই ব্যতিক্রমকেই কি বিধান করা যে। সর্ব অবস্থায় গায়েবের জানাজা বৈধ। এটা কুরআন সুন্নাহর একটি দুর্বল মত, কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক সাহাবী মৃত্যুবরণ করেছেন কারো ক্ষেত্রে এটা করেননি। কাজেই একটা ক্ষেত্রে করেছেন, এটা হয় ব্যতিক্রম হবে, নইলে কোন কারনে হবে।

এই ক্ষেত্রে তৃতীয় মত হল, এটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি জোরালো মনে হয় ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহি:) বলেছেন,

যদি কোন মুসলমান এমন কোথাও মারা যায় যে, সেখানে তার দেশে তার জানাজার কোন ব্যবস্থা নাই, মুসলমান কেউ সেখানে নেই বা অবস্থান করেন নাই। তাকে জানাযা ছাড়া দাফন করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে মুসলমানগন বা মুসলিম উম্মার যিনি প্রধান, তিনি তার জন্য গায়েবানা জানাজা করতে পারেন। এটা নাজ্জাশির জন্য একমাত্র প্রযোজ্য, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তার দেশে আর কেউ গ্রহন করেননি। সেটা খ্রিষ্টান প্রদান দেশ ছিল। ওই সময়ে ইথিওপিয়ায় ইহুদি এবং খ্রিস্টান কিছু ছিলেন তারা তাওহীদ পন্থী, তার ভিতরে নাজ্জাশি একজন ছিলেন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনে মুসলমান হয়েছিলেন।
এক্ষেত্রে যেহেতু তাকে জানাযা করানো হয়নি, অন্য পদ্ধতিতে দাফন করা হচ্ছে। সেজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী মাধ্যমে খবর পেয়ে জানাজা পড়েছিলেন।

এরকম কোন ক্ষেত্রে ঘটে মুসলমান মৃত্যুবরণ করেছেন কিংবা মারা গিয়েছেন তার জানাজা হয়নি হয়নি কখনো ইসলামিক কায়দায় তার জানাজা করতে হবে।
জানাযা তো মৃত ব্যক্তির প্রতি মুসলমানদের ফরজে কেফায়া, একবারই দায়িত্ব এটা ফরজে আইন নয়, কোথাও জামাত শেষ হলে আবার আরেকটা জামাত করব এমন কোন বিষয় নয়।
এর জন্য জানাযার ক্ষেত্রে তিনটা ভিন্ন মত আছে কিন্তু সবচেয়ে জোরালো মত, যদি কোন মুসলিম এমন জায়গায় মারা যান, যার কোন জানাজা হয়নি তার ক্ষেত্রে গায়েবানা জানাজার নামাজ পরা যেতে পারে, অন্যান্যদের ক্ষেত্রে এটা সুন্নাহসম্মত নয় বলেই মতটা জোরালো।

যদি কারো জন্য হৃদয়ে খুব মহব্বত থাকে, আমি তার জানাজায় যেতে পারলাম না যেকোনো কারণে হতে পারে সেক্ষেত্রে আসলে গায়েবানা জানাজা না পড়ে, অন্য কি করা যায়?
জানাজা তো দোয়ার জন্য আমি তো তার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করব, আমি সর্বদা তার জন্য দোয়া করব আল্লাহ তাআলা তো কুরআনে দোয়া নির্দেশ দিয়েছেন যে মুসলমানরা যারা আগে মারা যায় তাদের জন্য পরবর্তী রা দোয়া কর

وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়।
[সূরা আল হাশরঃ১০]

আমরা হৃদয় ভরে তাদের জন্য দোয়া করব, দোয়ার একটা পদ্ধতি হল সালাতুল জানাযা। এই পদ্ধতিটা মৃতকে যারা পাবেন একবার করলেই মুসলিম উম্মাহ সবারটা আদায় হয়ে যাবে।

আমাদের দেশে অনেক বিখ্যাত লোকদের অথবা রাজনৈতিক নেতাদের জানাজা একাধিকবার হয়ে থাকে।

এটাও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো করেননি এবং যেটা আগে বললাম জানাযা তো মাইয়াতের প্রতি আমাদের দায়িত্ব একবারই শেষ।
এটা ফরজে কেফায়া।

Exit mobile version