গাইরত কি
গাইরত হলো একজন ঈমানদার পুরুষ ও নারীর আত্মমর্যাদাবোধ। বিশেষ করে তার পরিবার ও আত্মীয়দের সদস্যগণের পর্দা মেনে চলার ব্যাপারে জাগ্রত ঈর্ষাবোধ। তাদের মধ্যে পর্দার বিধান লঙ্ঘন হলে, যে ক্রোধের সঞ্চার হয়, সেটাই গাইরত।
একজন পুরুষ তার স্ত্রীর মর্যাদা, পর্দা এবং গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গাইরতের অধিকারী হবেন। একইভাবে একজন নারী তার স্বামীর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী গাইরতের অধিকারী হবেন।
কোন ঈমানদার পুরুষ তার স্ত্রী, মা, বোন প্রমুখ নারীকে অন্য গায়ের মাহরাম পুরুষের সাথে বেপর্দা অবস্থায় দেখলে বা পর্দার শর্তগুলো পালন করার ব্যাপারে শিথীলতা দেখলে অথবা তাদের গোপনীয়তার প্রকাশ ঘটার আশঙ্কা দেখা দিলে তার মাঝে গাইরত জেগে উঠবে, তিনি রাগান্বিত হবেন এবং বাধা দেবেন।
একইভাবে কোন নারী তার স্বামী, ভাই, পিতা প্রমুখ পুরুষকে অন্য কোন গাইর মাহরাম নারীর সাথে বেপর্দায় দেখলে তার মাঝে গাইরত জেগে উঠবে, তিনি উত্তেজিত হবেন এবং সে কাজে তিনি বাধা দেবেন।
গাইরতের তীব্রতা সবচেয় বেশি থাকে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে।
গাইরত ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ। গাইরত ঈমানদার ব্যক্তির স্বভাবগত মর্যাদাবোধ। যার মধ্যে ঈমানের সঠিক উপস্থিতি আছে, তার আচরণে গাইরত প্রকাশ পাবে।
আল্লাহ তায়ালার গাইরত সবচে বেশি, আর সৃষ্টিকুলের মধ্যে রাসূল (সা.) গাইরত ছিলো সর্বাধিক।
উম্মাতে মুহাম্মাদী (সা:) এর মধ্যে সাহাবায়ে কিরামের গাইরত ছিলো সর্বোচ্চ।
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলার গাইরত আছে। নিশ্চয় মুমিনও গাইরতওয়ালা হবে”। -সহীহ মুসলিম
“নিশ্চয় মুমিন গাইরতওয়ালা হবে, নিশ্চয় মুমিন গাইরতওয়ালা হবে, নিশ্চয় মুমিন গাইরতওয়ালা হবে। আর আল্লাহর গাইরত সবচেয়ে কঠিন।” -মুসনাদে আহমাদ
সা’দ ইবনে উ’বাদা ছিলেন আনসারী, খাজরাজ গোত্রের নেতা, বদরী সাহাবী। একবার সা’দ ইবনে উবাদা মন্তব্য করেন—“যদি কোনোদিন ঘরে এসে আমার স্ত্রীর সাথে অন্য কোনো পুরুষকে দেখি, তাহলে নিঃসন্দেহে এক কোপে তার মস্তক ফেলে দিব।” হযরত সা’দের এই বক্তব্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনতে পেয়ে বলেন, “তোমরা সা’দের গাইরত দেখে আশ্চর্য হচ্ছো? অবশ্যই আমার গাইরত সা’দের চেয়ে বেশি। আর আল্লাহ তাআলার গাইরত আমার চেয়েও বেশি”। -সহীহ বুখারী।
নবীজির (সা.) স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামা (রা.) এর ঘরে একজন হিজড়া এসেছিল। সে এসে উম্মুল মু’মিনীনের কাছে অন্য এলাকার মহিলাদের রূপ সৌন্দর্য আর দেহের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দিচ্ছিলো। রাসূল (সা.) এসে এসব কথা শুনতে পেলেন। তিনি তখন স্পষ্ট করে বলে দেন, “এ যেন আর কখনো তোমাদের কাছে না আসে”। – সহীহ বুখারী
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামা (রাঃ) বর্ননা করেন, আমি এবং মাইমূনা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম । ইতিমধ্যে অন্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) সেখানে আসতে লাগলেন । তখন রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে বললেন, “তোমরা তার থেকে পর্দা কর, আড়ালে চলে যাও”। আমি বললাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ ! তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না”। রাসূল (সঃ) ইরশাদ করলেন, “তোমরাও কি অন্ধ ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না ?”- আবু দাউদ
একজন ঈমানদার পুরুষের গাইরত কেমন হতে পারে আশা করি এরই মধ্যে আমরা উপলব্ধি করেছি। কিন্তু এমন কিছু বিষয়ও আছে যা আমরা সহজভাবে মেনে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যেমন, কোন ব্যক্তির চরিত্রের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই, এবং তার সাথে নিজেদের পরিবারে মেয়েদেরকে সাময়িকভাবে ছেড়ে দিই। এটি বেশি ঘটে আত্মীয়দের মধ্যে।
লিখেছেন
আবদুল্লাহ সায়াদ (শাহপরান)







