ঈদে মেয়েদের মেহদি রঙ্গে সাজ

ঈদে মেয়েদের মেহদি রঙ্গে সাজ: কতিপয় ইসলামি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা
(মেহদি ব্যবহারের কতিপয় জরুরি নির্দেশনা-যা জানা জরুরি প্রতিটি নারীর)
আমাদের বাঙ্গালী সমাজে মেহদি ছাড়া নারীদের ঈদ কল্পনা করা যায় না। মেহেদির রং যেন ঈদ উৎসবে আনে এক ভিন্ন মাত্রা। ছোট শিশু, কিশোরী, যুবতী, মধ্যবয়স্কা ইত্যাদি প্রায় সব নারীদের মধ্যে এর ব্যবহার দেখা যায়। তারা চুলে, হাতে, পায়ে, হাত বা পায়ের আঙ্গুলে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মেহদির মাধ্যমে নকশা অঙ্গন ও ডিজাইন করে। বর্তমানে টিউব মেহেদির কল্যাণে খুব সূক্ষ্ম কারুকাজ করা হয়।

যাহোক, মেহদি সজ্জা আমাদের নারীদের এক চির চেনা রীতি। সত্যিকার আর্থে এই সাজসজ্জা নারীদের স্বভাবজাত প্রবণতা। ইসলাম তাতে নিষেধ করে না। তবে এ ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি। যথা:

১) সাধারণ মেহদি, রং ইত্যাদি ব্যবহার করলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ এগুলো ব্যবহার করলেও ওযু-গোসলের ক্ষেত্রে অনায়াসে চামড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তবে বর্তমানে বাজারে একপ্রকার কেমিক্যাল যুক্ত কৃত্রিম টিউব মেহদি পাওয়া যায় যা ব্যবহার করলে চামড়ার উপর একটা পাতলা আবরণ পড়ে। এতে ওজু-গোসলে সমস্যা হবে। তাই নামাজী নারীগণ অবশ্যই এসব মেহদি ব্যবহার থেকে দূরে থাকবে। কখনো ব্যবহার করলেও এগুলো অবশ্যই সাবান, শ্যাম্পু, কেমিক্যাল বা অন্য কোন উপায়ে তুলে ফেলতে হবে। অন্যথায় ওজু-গোসল শুদ্ধ হবে না।

তবে যে সব নারীদের সালাত নেই (যেমন: ঋতুমতী, প্রসূতি মহিলা বা ছোট বাচ্চা) তাদের জন্য এগুলো ব্যবহারে সমস্যা নেই।

২) বাজারের মেহদি ক্রয়ের সময় তাতে হারাম বা ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশানো আছে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে। কারণ বর্তমানে বাজারে এমন অনেক নকল ও ভেজাল মেহদি পাওয়া যায় যা ব্যবহার করলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা নানা ধরণের চর্মরোগ সৃষ্টি হয়। হাতে মেহদির সুন্দর আল্পনা আঁকতে গিয়ে তা বীভৎস রূপ ধারণ করতে পারে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ বলেন,
‘সরাসরি মেহেদি গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে যারা নিজেরা মেহেদি ব্যবহার করে তাদের এ ধরনের ক্ষতির ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু বাজারের নকল ও ভেজাল অনেক টিউব মেহেদি বেচা-কেনা হয়। এসবের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক মেহেদির লেশমাত্র থাকে না বরং বিষাক্ত নানা রাসায়নিক রং দিয়ে এই মেহেদি তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। এগুলোর মধ্যে এসিড জাতীয় ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা মানুষের ত্বক ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে বাজারের সব মেহেদি ব্র্যান্ডই যে বিষাক্ত বা ক্ষতিকর তা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। তাই দেখে-শুনে পরীক্ষিত ও ভালো ব্যান্ডের মেহদি ক্রয়ের চেষ্টা করতে হবে।

এ ক্ষত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ পরামর্শ দিয়েছেন, একবারে পুরো হাত বা নির্দিষ্ট নকশা ধরে মেহেদি না লাগিয়ে শুরুতে সামান্য একটু মেহেদি কোথাও লাগিয়ে স্কিন টেস্ট করা যেতে পারে। যদিও এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে না-ও পাওয়া যেতে পারে। অনেকের স্কিনে তাৎক্ষণিক ক্ষতির লক্ষণ দেখা দিলেও, অনেকেরই ধীরে ধীরে কিংবা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরেও ক্ষতি হতে পারে।

তাই মেহেদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক ও সচেতন থাকা খুবই জরুরি। এ ছাড়া যাদের ত্বকে এলার্জির সমস্যা আছে তাদেরও মেহেদি পরিহার করা উচিত।

৩) মেহদির মাধ্যমে ট্যাটু বা উল্কি অঙ্কনের মত করে শরীরে অমুসলিমদের ধর্মীয় প্রতীক, প্রাণীর ছবি, ড্রাগনের মাথা, প্রাণীর কার্টুন, নারী-পুরুষের ছবি, বয় ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ড এর নাম, অশ্লীল বাক্য ইত্যাদি ব্যবহার করা অথবা বিপরীত লিঙ্গের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মেহদি লাগানো জায়েজ নাই।

৪) অন্য মহিলাকে মেহদি দ্বারা সাজানোর সময় তার লজ্জা স্থানের দিকে তাকানো বা তার স্পর্শকাতর স্থান স্পর্শ করা হারাম

৫) যখন আপনি জানতে পারবেন যে, কোন মহিলা সাজগোজ করে পরপুরুষের সামনে প্রদর্শনী করে বেড়াবে তখন তাকে এ ক্ষেত্রে কোনও ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। অর্থের বিনিময়ে হোক বা বিনামূল্যে হোক। কারণ তা গুনাহের কাজে সহযোগিতার শামিল। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ
“সৎকর্ম ও তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির কাজে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর।”
(সূরা মায়িদা: ২)

আল্লাহ ঐ সকল মহিলাকে হেদায়েত করুন।
আমিন।

Exit mobile version