Writing

দুয়াতে সবর চাইবো নাকি সলিউশন

এক জন প্রশ্ন করলেন, ভাইয়া আমি কি দুয়াতে সবর চাইবো নাকি সলিউশন?
কারণ সবর চাইলে তো তিনি সবর দিবেন সলিউশন দিবেন না, বলতে গেলে অনেক কিছু চলে আসে, তাই আজকের এই লিখা।
দেখুন চলার জন্য আমাদের কি কি প্রয়োজন এবং সেগুলো কীভাবে কীভাবে এচিভ করতে হবে, তা যিনি আমাদেরকে বানিয়েছেন তিনিই ভালোই জানেন এবং প্রতিটা বিষয়ই তার মেনুয়ালে লিখা, নোট সারপ্রাইসিং যে এই বিষয়টাও সেই মেনুয়ালে আছে, আছে একটা কেস স্টাডি স্বরূপ।

কেস স্টাডিটা হচ্ছে সূরা বাকারার ২৪৯ থেকে ২৫১ আয়াত পর্যন্ত

فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللَّهَ مُبْتَلِيكُم بِنَهَرٍ فَمَن شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَن لَّمْ يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ ۚ فَشَرِبُوا مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۚ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ ۚ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو اللَّهِ كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
অতঃপর তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদিগকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং যে লোক সেই নদীর পানি পান করবে সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো না, নিশ্চয়ই সে আমার লোক। কিন্তু যে লোক হাতের আঁজলা ভরে সামান্য খেয়ে নেবে তার দোষঅবশ্য তেমন গুরুতর হবে না। অতঃপর সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন ছাড়া। পরে তালূত যখন তা পার হলো এবং তার সাথে ছিল মাত্র কয়েকজন ঈমানদার, তখন তারা বলতে লাগল, আজকের দিনে জালূত এবং তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই, যাদের ধারণা ছিল যে, আল্লাহর সামনে তাদের একদিন উপস্থিত হতে হবে, তারা বার বার বলতে লাগল, সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্য্যশীল আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।
[সূরা আল বাক্বারাহ:২৪৯]
وَلَمَّا بَرَزُوا لِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالُوا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
আর যখন তালূত ও তার সেনাবাহিনী শত্রুর সম্মুখীন হল, তখন বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ-আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে।
[সূরা আল বাক্বারাহ:২৫০]
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।
[সূরা আল বাক্বারাহ:২৫১]

যেখানে হজরত দাউদ আ. বিশাল দেহি জালূতকে হারিয়েছিলেন এটা ওই গল্পেরই একটা অংশ!
তো ঘটনা অনেকটা এরকম, একদা বাণী ইসরাইলের প্রথম রাজা তালুত তার সেনাবাহিনী নিয়ে এক বিশাল বাহিনীর সামনাসামনি হলেন, অপসিশন পার্টির লিডার ছিল জালুত নামক এক বিশাল দেহি যোদ্ধা, আর সাথে ছিল তার কয়েক গুন্ বড় সৈন্য সামন্ত, বাণী ইসরাইল বাহিনীর এই বিশাল বহর দেখে ভয়ে তটস্থ, এমন অবস্থায় যাঁরা বিশ্বাসী ছিলেন তারা নিজেরাই নিজেদের আশস্ত করা শুরু করে, তারা বললেন,
এমন কতবার হয়েছে যে একটা ছোট আর্মি আল্লাহর ইচ্ছায় বড় আর্মিকে হারিয়েছে, এবারো আমাদের ভয় নেই ইনশাল্লাহ!
এবং তারা দুয়া করলেন, সেই দুয়াতেই আছে প্রশ্নের উত্তর

“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে সবর দাও এবং সাথে আমাদের পা গুলো দৃঢ় করে দাও এবং আমাদেরকে কাফিরদের উপর জয় দাও”

খেয়াল করুন, তারা কিন্তু প্রথমেই জয় চায়নি, চেয়েছে সবর তারপর চেয়েছে স্টেবিলিটি এবং সব শেষে চেয়েছে বিজয়, তাদের মাথায় এটা ছিল না যে, সবর চাইলে আল্লাহ এখন সবর দিবে, বিজয় দিবে না।
কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, সবর হচ্ছে একটা স্টেট অফ মাইন্ড, আমরা যখন কোনো ইম্পসিবল প্রব্লেমে পরি, আমাদের মাইন্ড একদম জমে যায়, আমরা স্ট্রেইট আপ চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি, আমরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই হেরে যাই।

তখন সহজ সহজ করণীয় কাজ গুলোও আমরা মাঝে মাঝে করতে ভুলে যাই, তাই এমত অবস্থায় বিপদ থেকে বের হওয়ার জন্য সব থেকে ইম্পর্ট্যান্ট হচ্ছে মেন্টাল স্টেবিলিটি, সবর আমাদেরকে সেই স্টেবিলিটি এচিভ করায়, আর তারা সেই স্টেবিলিটি টাই চাইছিলো।

আমরা যখন সবর চাই, বিষয়টা এমন না যে আমরা উনাকে টাইম দিচ্ছি, উনার যদি হেল্প করার হয় তিনি ইন্সটেন্টলিই হেল্প করতে পারেন, উনার জন্য বিষয়টা কেবল কুন্ ফা ইয়া কুন্ এর মতই সিম্পল, জাস্ট বলবে “হও” আর অমনি তা হয়ে যাবে, সবর চাই হচ্ছে আমরা নিজেদের জন্য, আমরা যেন স্টেবল হতে পারি এই জন্য।
কারণ এই স্টেবিলিটি আমাদেরকে জয় সিকিউর করতে সাহায্য করে!

সেইদিন ঈমানদাদের সেই দুয়া কিন্তু সাথে সাথেই কবুল হয়েছিল, তারা যখন কল্পনাও করে নাই যে জয় কীভাবে আসবে এবং কত তাড়াতাড়ি আসবে, আল্লাহ তাদের জয় দিয়েছিলেন এবং ইন্সটেন্টলি দিয়েছিলেন, সবরের জন্য এক দুই মাস পরে দেননি
মোর ইম্পোর্টেন্টলি তিনি এমনভাবে দিয়েছিলেন যে তারা কল্পনাও করতে পারেনি।

দাউদ আ. এর মত ছোট খাটো গড়নের এক ছিপছিপে যুবক, মাত্র একটা ঘূর্ণি গুলাইল দিয়ে জালুত নামক সেই মহা যোদ্ধাকে কুপোকাত করেছিল!
সে যখন কুপোকাত তার দল পালতে থাকলো, এবং বাণী ইসরাইল জয় পেল।
তাই এই যে প্রশ্ন,

দুয়াতে সবর চাইবো না সলিউশন?

উত্তর: দুটোই চাইবো!
তবে আমরা যখন দুয়া করি, আমরা প্রায় সময় ধরেই নেই যে তিনি আমাদের দুয়া শুনছেন না, হয়ত ভাবি যে, তিনি কোনো এক কারণে আমাদের উপর নারাজ, হয়ত বুজুর্গে কাউকে ধরলে শুনতে পারে, নয়তো ভাবি যে, তিনি এতটাই দূরে যে আমাদের দুয়া শুনবে কি করে, কাউকে ধরলে না হয় আমাদের দোয়াটা উনার কাছ পর্যন্ত পৌঁছে দিবে.

আর এই লজিক থেকেই কিন্তু শিরকের উৎপত্তি এবং এই চিন্তাটা তিনি এই সুরাতেই ক্লিয়ারলি খণ্ডন করেন, সূরা বাকারার ১৮৬ নাম্বার আয়াতে তিনি ঘোষণা দেন
“যখনই আমার কোনো বান্দা তোমার কাছে আমার ব্যাপারে এসে জিজ্ঞেস করে”
(তাকে বলে দাও)
“আমি একদম কাছেই আছি”
সে যখনি আমায় ডাকে তার প্রতিটি ডাকে আমি সারা দেই প্রতিটি বার”

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।
[সূরা আল বাক্বারাহ:১৮৬]

অর্থাৎ কারো ভায়া হওয়া দরকার নাই, উনার সাথে আমাদের কানিকটিভিটি হলো ডিরেক্ট কানেক্টিভিটি, যা চাইবো আমরা ডিরেক্ট তার কাছেই চাইব, তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, তিনি তাহলে আমারটা দুয়া শুনছে না কেন?
উত্তর: হতে পারে আমার চাওয়াটাই ঠিক ভাবে হচ্ছে না! কেন?

বিষিয়টা বুঝতে হলে আগে দুয়ার সায়েন্স টা বুঝতে হবে, একটু চিন্তা করুন, দুয়া জিনিসটা কি?
এটা কি জাস্ট দুহাত বা এক হাত তুলে কয়েকটা মুখস্থ শব্দ আওড়ানো?
এস্তেমার মাঠে আখেরি মোনাজাতের দিন দেখতে পাওয়া যায়, এক হাতে দুয়া ধরছে, আরেক হাত দিয়ে মোবাইল টিপছে কিংবা এক হাতে দুয়া ধরছে আর ওপর হাতে লুঙ্গি ঠিক করছে, যাই হোক না হোক, একটা হাত ঠিকই দুয়াতে ধরা কিংবা মা খালাদের দেখেছি, ইফতারে সময় যখন দুয়া ধরা হয়, এক হাতে করাই নাড়াচ্ছে আরেক হাত দুয়াতে, যেন হাত নামলেই দুয়ার লাইন কেটে যাবে!

প্রশ্ন: একটা হাত তুলে থাকলে কি তাহলে দুয়ার লাইন চালু থাকে?

আমার মনে হয় ছোট বেলা থেকে আমাদেরকে দুয়ার সাইন্সটাই ঠিক করে বুঝানো হয়নি! দুয়া কি ভাবে কাজ করে বুঝতে হলে কয়েকটা কনসেপ্ট বুঝতে হবে, প্রথম কনসেপ্ট- “অ্যাটেনশন”!
হাদিসে কুদসী থেকে আমরা জানি, আমরা যখন আমাদের রবের দিকে অ্যাটেনশন দেই, তিনি আরো দ্বিগুণ উৎসাহে আমাদের দিকে অ্যাটেনশন দেন, অর্থাৎ আমরা যখন কনসাসলি তার দিকে অ্যাটেনশন দেই, সেই মুহূর্তে তিনিও আমাদের উপুড় আরো নিবিড়ভাবে অ্যাটেনশন দেন, এই অ্যাটেনশন জিনিসটা কি?

বুঝতে হলে জানতে হবে, আমাদের মাইন্ড কীভাবে কাজ করে, ধরুন আমাদের মাইন্ড হলো বিশাল একটা অন্ধকার বাড়ি, তাহলে সেই বাড়িতে আমাদের হাতের টর্চটা হচ্ছে অ্যাটেনশন, আমাদের সেই বাড়িতে অনেক অনেক ঘর আছে, কোন ঘরে যেতে হলে আমাদেরকে সেই অ্যাটেনশন নামক টর্চটা নিয়ে যেতে হয়, শুধু তাই না, সেই ঘরের কোন পার্টে আপনি দেখতে চান শুধু সেই পার্টেই টর্চ ফেলতে হয়, ধরুন প্রথমে আপনি রাগ নামক রুমটাতে গেলেন, সেখানে অতীতের কোনো একটা পার্টিকুলার ইন্সিডেন্টে আপনি টর্চ ফেললেন, দেখবেন সাথে সাথেই সারা শরীরে আপনি রাগ অনুভব করা স্টার্ট করেন
তার মানে কি আপনি রাগি, না!

আপনি এখন কেবল রাগ নামক রুমে বিচরণ করছেন, সিমিলারলি একটু পরে আপনি খুশি নামক রুমটাতে গেলেন, খুশির রুমটির অতীতের কোনো একটা মজার ঘটনায় টর্চ ফেললেন, আপনি আনমনেই হেসে ফেললেন, খুশি অনুভব করা স্টার্ট করলেন!
তার মানে কি আপনি খুশি,
না!

আপনি এই মুহূর্তে খুশি নামক রুমের একটা সেগমেন্টে বিচরণ করছেন, মোট কথা আমরা চাইলেই আমাদের টর্চ টা কই যাবে তা কন্ট্রোল করতে পারি, ফর এক্সাম্পল এই মুহূর্তে একটু ভাবুন আপনার স্রষ্টার কথা, ভাবুন কি পারফেক্ট ভাবেই না তিনি আপনাকে বানিয়েছেন, এই যে এই মুহূর্তে শাঁস নিচ্ছেন সেটা খেয়াল করুন, বাতাস ভিতরে ঢুকছে আর বের হচ্ছে, যখন ঢুকছে অক্সিজেন ফিলটার হয়ে ব্লাডস্ট্রিমে ঢুকে যাচ্ছে, আর যখন বের হচ্ছে কার্বন ডাইঅক্সাইড ফিল্টার্ড হয়ে বের হচ্ছে, যেই চোখ দিয়ে দেখছেন, তা দেখছেন আলোর রিফ্লেকশন গুলো, চোখে এসে তা পড়ছে এবং তা ডিজিটালি কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে
এমনকি মেমোরিতে তা ডিজিটালি স্টোরও হচ্ছে!
কি অদ্ভুত!

এবার ভাবুন তিনি কি পারফেক্টলি এই বিশাল মহাকাশ বানিয়েছেন, সূর্য ছুটছে ঘন্টায় প্রায় ৭০ হাজার কিলোমিটার বেগে, তার পিছে ছুটছে গ্রহ গুলো, এই ছুটাছুটির মধ্যেই পৃথিবী নামক গ্রহে তিনি পাহাড় গেড়েছেন, গাছ পালা লাগিয়েছেন, জীব জন্তু আর মানুষ ছড়িয়েছেন!

এখন একটা সত্য বুঝার চেষ্টা করুন, এই যে আপনি কিছুক্ষণ তার দিকে অ্যাটেনশন দিয়ে রাখলেন, এর অর্থ হলো এই কিছুক্ষণ তিনিই আপনার দিকে অ্যাটেনশন দিয়ে রেখেছিলন!
চোখটা একটু বন্ধ করলেই এখন ফিল করতে পারবেন, তিনি এই মুহূর্তে আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন, এই সত্যটা যখন এবসর্ব করতে পারবেন, দেখবেন গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে, মনটা ভালো হয়ে যাচ্ছে!
সোঁ যখন দুয়া চাইবেন, প্রথমে আপনার অ্যাটেনশন উনার দিকে তাক করার চেষ্টা করুন, কারণ উনাকে অ্যাটেনশন দিলে তিনিও তখন আপনাকে অ্যাটেনশন দিবেন।

বার্নিং ডিসায়ার

এবার আসি দ্বিতীয় কনসেপ্টে,
“বার্নিং ডিসায়ার”, আমাদের হার্টে “বার্নিং ডিসায়ার” গুলোই হচ্ছে দুয়া, এই বার্নিং ডিসায়ার গুলো যখন এতটাই তীব্র হয়ে উঠে যে আমরা আর তা ভিতরে ধারণ করে রাখতে পারি না, তখন তা মুখ ফুটে শব্দ আকারে বের হয়ে যায় পরে, সেই তীব্রভাবে প্রকাশ পাওয়া চাওয়া গুলোই হচ্ছে দুয়া।
অথচ আজ আমরা সেই তীব্র ডিসায়ার পার্টটা বাদ দিয়ে কেবল শব্দগুলোতে নিয়ে ব্যাস্ত, বেশির ভাগ সময় তো সেই শব্দগুলোর অর্থও ঠিকভাবে জানি না, কেবল তোতা পাখির মত আওড়ে যাই, হৃদয়ে কোনো প্রভাব পরে না!
ঠিক মত যদি নাই চাই তে পারি আমরা, তাহলে তিনি দিবেনই বা কেন আমাদেরকে বলুন?

সোঁ যখন দুয়া চাইবো,
মেক সিউর করবো যা চাচ্ছি তা নিজের ভাষায় চাচ্ছি, মোর ইম্পর্টেন্ট যা চাচ্ছি তা মন থেকে চাচ্ছি!

ইনটেনশন

এবার আসি তৃতীয় কনসেপ্টে
“ইনটেনশন”!
রমজান মাসে নিশ্চই খেয়াল করেছেন যে, প্রফেশনাল ফকির গুলো যখন এসে হাত পেতে বায়না করতো, আপনি বুঝতেন তারা প্রফেশনাল, তবুও মানা করতে অনেক সময় লজ্জা পেতেন, এক দুইবার মানা করলে উল্টো আবার গিল্ট ফিল করা শুরু করতেন, একই কথা রাসূল জানান আমাদের রবের ব্যাপারে জানান বলেন যে,
আমরা যখন তাঁর কাছে দু হাত পেতে কিছু চাইতে থাকি, তা তিনি ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।

এখানে লক্ষণীয় ব্যাপার যেটা আমরা বুঝি না সেটা হলো, ফকির যখন এসে আপনার কাছে হাত পাতে, আমরা কিন্তু এটা খেয়াল করি না যে, সে হাত বুকের উপর পেতেছে না বুকের নিচে?
খেয়াল করি না যে, তার হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক আছে না গুটি শুঁটি করে জড়ানো অবস্থায় চাচ্ছে?
আমরা খেয়াল করি তার ইন্টেনশনে, তার চাওয়ার তীব্রতায় তার চাওয়ার আকুলতায়, তেমনি আমরা যখন দুয়াতে হাত তুলি তিনি খেয়াল করেন না, আমরা হাত একসাথে লাগিয়ে রাখছি না ফাক করে রাখছি, বুকের কাছে তুলে ধরেছি, না কি কোলের উপর ঝুলিয়ে রেখেছি, তিনি খেয়াল করেন আমরা যে কিছু পাওয়ার আশায় হাতখানা পেতে রেখেছি সেথায় তিনি খেয়াল করেন আমাদের ব্যাকুলতা!

এই ইনটেনশন নিয়ে ১৯৬৬ সালে ক্লেভ বেকষ্টার নামক এক রিটায়ার্ড সি আই এ অফিসার এবং লাই ডিটেক্টর এক্সপার্ট, একটি ইন্টারেস্টিং এক্সপেরিমেন্ট কন্ডাক্ট করেন, তিনি দেখতে পান,
যখনি তিনি গাছের সাথে লাই ডিটেক্টর লাগিয়ে গাছে একটি জ্বলন্ত কাঠি লাগাতে উদ্যত হচ্ছেন, তখনি তার লাই ডিটেক্টরটি শার্প ভাবে রেস্পন্ড করা স্টার্ট করছে, আগুন লাগানোর প্রয়োজন ছাড়াই, অর্থাৎ আগুন লাগানোর আগেই লাই ডিটেক্টর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে, তিনি যখন তার ফাইন্ডিং সাইন্টিফিক কমিউনিটিতে শেয়ার করেন, তা বেশ সারা ফেলে অনেকে আবার ক্রিটিসাইসও করে, তিনি তখন সবাইকে আমন্ত্রণ করেন সেম এক্সপেরিমেন্ট কন্ডাক্ট করার জন্য, অন্যান্য সাইন্টিস্টরা যখন এসে এই এক্সপেরিমেন্ট রিপিট করে, তাদের ক্ষেত্রে আর লাই ডিটেক্টরটি কোনো সারা শব্দ করে না, কাঠি জ্বালিয়ে গাছের আসে পাশে ঘুরায় তবুও ডিটেক্টর নিশ্চুপ।

তারা ক্লেভ বেকস্টারের কাছে এক্সপ্লানেশন জানতে চায়, ক্লেভ উলটো প্রশ্ন ছুড়েন, তোমরা কি একচুয়েলি আগুন লাগানোর ইন্টেন্ট করেছিলে?”
নাকি লাগানোর ভান করেছিলে, ভান ধরলে হবে না একচুলি ইন্টেন্ট করতে হবে, সোঁ নেক্সট টাইম হাত যখন উঠাবেন এমন ভাবে উঠাবেন, যেন আপনি হাত উঠানোর ভান করছেন না, একচুয়েলি হাত পেতে অপেক্ষা করছেন, যে তিনি কিছু একটা খুব শীঘ্রই দিবেন!

অ্যাটিচুড

এবার আসি চতুর্থ কনসেপ্টে
“অ্যাটিচুড”
আমরা ভুলে যাই যে উনার সাথে আমাদের সম্পর্ক কাস্টমার ভার্সেস সার্ভিস প্রোভাইডার সম্পর্ক না, সম্পর্ক হচ্ছে মাস্টার ভার্সেস স্লেইভ সম্পর্ক, এই টেন্ডেন্সি এসেছে আমাদের মডার্ন লাইফস্টাইল থেকে, আমরা তো ইদানীং সব কিছুই ইন্সট্যান্ট পেয়ে অভ্যস্ত, গ্রোসারীজ দরকার তো এপে অ্যাপ্লাই করি সাথে সাথে গ্রোসারীজ হাজির, ট্রান্সপোর্ট দরকার তো এপে অ্যাপ্লাই করি সাথে সাথে গাড়ি হাজির, খাওয়া দরকার তো এপে অ্যাপ্লাই করি সাথে সাথে খাওয়া হাজির, সার্ভিস ডিলে হলে ১ স্টার, থাম্বস ডাউন, আর সার্ভিস ভালো হলে ৫ স্টার এন্ড গুড রেকমেন্ডেশন, অবচেতন ভাবে এই সার্ভিস সেন্ট্রিক মনোভাব আমাদের দুয়ার ব্যাপারেও চলে এসেছে।

যখন দুয়া করি ভাবি যে সেটাও সাথে সাথে কেন এনসার্ড হচ্ছে না, আর আনসারড যদি না হয়, আমরা কমপ্লেইন করা স্টার্ট করি, ভুলে যাই যে, উনার কাছে আমরা কাস্টমার না, আমরা পণ্য কিনি বা না কিনি ১ স্টার দেই বা ৫ স্টার্ট দেই, এতে উনার কিছু যায় আসে না, সোঁ যা চাইতে হবে, একজন স্লেইভের মত হাম্বল হয়ে চাইতে হবে, বিনয়ী হয়ে চাইতে হবে!

আমাদের প্রতিটা দুয়া কবুল হচ্ছে

পঞ্চম কনসেপ্ট
“আমাদের প্রতিটা দুয়া কবুল হচ্ছে!”
আল্লাহর রাসূল বলেন,
“কোনো মুসলমান যখন আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করে, যদি তার মধ্যে পাপ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কিছু না থাকে, তাহলে আল্লাহ তিন ভাবে দুয়ার জবাব দেন:
হয় তিনি তার দোয়া দ্রুত কবুল করে দেন, নয়তো তা আখিরাতের জন্য জমা রাখেন, নয়তো এর সমপরিমাণ কোনো বিপদ তাকে থেকে সরিয়ে দেন।”

সোঁ যেটা বুঝলাম
আমাদের প্রতিটা দুয়া কন্সিডারেশনে নেয়া হয়, উনি ডেলিভারি তখনি করবেন যখন অ্যাপ্রোপ্রিয়েট, তখনি করবেন যখন আমাদের জন্য এবং সবার জন্য বেস্ট পসিবল রেজাল্ট দিবে!
যেমন হজরত ইউসুফের ঘটনাই যদি দেখেন, ইউসুফ আ. যখন হারিয়ে যান, তার বাবা হজরত ইয়াকুব তখন একজন একটিভ নবি, ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখ নষ্ট করে ফেললেন, তবুও কিন্তু সাথে সাথে ছেলেকে পেলেন না, তার দুয়া সাথে সাথে কবুল হয়নি হয়েছিল কবে?

যখন ইউসুফ আ. পূর্ণ বয়স্ক হয়েছিলেন তখন কেন?
কারণ আল্লাহ উনার মাধ্যমে মিশরের মানুষকে রক্ষা করেন, তিনি এক বাবার কষ্ট উপেক্ষা করে, লক্ষ লক্ষ বাবার কষ্ট লাঘব করেন, তাই আবারো বলছি, উনার কাছে পুরো ছবি আছে, আর আমাদের কাছে আছে শুধু একটা পিক্সেল।
দুয়া করতে থাকেন, কারণ তা কোনো না কোনো ভাবে কবুল হচ্ছেই, এই বিশ্বাসটা এই ভরসাটা এই কনভিকশনটা অন্তত রাখতে হবে!

গ্রেটিচুড

ফাইনাল কনসেপ্ট হচ্ছে
“গ্রেটিচুড”
বনি ইসরাইল যখন ফেরাউনের হাত থেকে বেঁচে সমুদ্র পার করে ওপারে গিয়ে পৌঁছালো, কিছুক্ষণ পরেই একটা প্রচণ্ড অনিশ্চয়তা তাদেরকে হিট করলো, “কি খাবে?”
“কই থাকবে!” নানান চিন্তা
ওই সময় একটা চাপা রাগ সবার মধ্যে দেখা দিলো, সবার ভিতর একটা চাপা ক্ষোভ যে
“মার খাচ্ছিলাম তো ঠিক আছে, বেঁচে তো অন্তত ছিলাম!”
“এখন কি হবে?”
“না খেয়ে মরবো?”
আর ঠিক ওই সময় আল্লাহ হজরত মুসাকে সবার উদ্দেশ্যে একটা স্পিচ দিতে বললেন, স্পিচের শুরুটা করতে বললেন এভাবে
“তাদেরকে মনে করিয়ে দাও তাদের স্রষ্টার নিয়ামত গুলো”
তারপর তিনি এক এক করে নিয়ামত গুলো বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন
“অতএব তোমরা একটু গ্রেটফুল হউ”
খেয়াল করে দেখুন তিনি কিন্তু বলেন নি,
“তোমরা একটু ধৈর্য ধারণ করো”
বললেন “তোমরা গ্রেটিচুড আদায় করো”
কারণ তিনি জানেন,
“আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারবো না ,
যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তার প্রতি গ্রেটিচুড ফিল করছি”
সাইকোলোজিকালি এটা একটা বিশাল লেসন, সাকসেস গুরুরা বলেন, গ্রেটিচুড শুধুমাত্র একটি ভালো অভ্যাসই নয় এটি সফলতার মূল চাবিকাঠি।
গ্রেটিচুড হচ্ছে এমপ্লিচুড, যে যত বেশি গ্রেটিচুড প্র্যাকটিস করবে সে তত বেশি উপরে উঠবে!
এই বিষয়ে আল্লাহ বলেন
“যদি তোমরা গ্রেটিচুড হও, তবে আমি অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই তোমাদের আরো বাড়িয়ে দেব…” (সূরা ইব্রাহীম ১৪:৭)

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।
[সূরা ইব্রাহীম:৭]

কিসে বাড়িয়ে দিবেন সেটা কিন্তু লিমিট রাখেননি, জাস্ট বলেছেন বাড়িয়ে দিবেন, যার যা প্রয়োজন সেই অনুপাতে তিনি বাড়াতে থাকবেন!

এই বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটার এক অধ্যাপক ড রবার্ট এমন্স যিনি কিনা কয়েক দশক ধরে এই গ্রেটিচুড নিয়ে কাজ করে আসছেন বেশ কয়টা পেপার পাবলিশ করেন, তিনি তার স্টাডিসে দেখান যে, গ্রেটিচুড হ্যাপিনেস বাড়ায়, গ্রেটিচুড রিলেশনশিপ মজবুত করে এবং গ্রেটিচুড কাজের ইফিসিয়েন্সি বাড়ায়, যারা গ্রেটিচুড প্র্যাকটিস করে তাদের মানসিক চাপ কম থাকে, যারা গ্রেটিচুড প্র্যাকটিস তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং যারা গ্রেটিচুড প্র্যাকটিস তারা কঠিন সময়েও স্থিতিশীল থাকে।
তিনি দেখান, গ্রেটিচুড মস্তিষ্কের কাজের ধরন পরিবর্তন করে, পজিটিভ চিন্তা ও ভালো ডিসিশন নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়।
তিনি বলেন, সাকসেস শুধু মেধা ও পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে না, মাইন্ডসেটের উপরেও নির্ভর করে, গ্রেটিচুড এই মাইনসেট চেঞ্জ হতে হেল্প করে, গ্রেটিচুড আমাদের ঘাটতির দিকে নয়, সম্ভাবনার দিকে নজর দিতে শেখায়।

সোঁ নেক্সট টাইম যখন দুয়া চাইবেন মাথায় রাখবেন, কমপ্লেইনিং অবস্থায় না গ্রেটিফায়িং অবস্থায় দুয়া চাইবেন!

শেষ অনেক কথা বলে ফেললাম, যদি সামারি করি তাহলে যা হয়, দুয়াতে কি সবর চাইবো?
এবসোলিউটলি, সবর চাইবো সাথে সলিউশনও চাইবো, চাইবো শুধু শব্দ দ্বারা নয়, চাইবো বার্নিং ডিসায়ার দ্বারা, চাইবো অ্যাটেনশন দ্বারা, চাইবো ইনটেনশন দ্বারা, চাইবো বিনয় দ্বারা, চাইবো কনভিকশন দ্বারা এবং চাইবো গ্রেটিচুড দ্বারা!
বারাকাল্লাহ!

লিখেছেন

Picture of সামিউল হক

সামিউল হক

জ্ঞানীদের বাণী হলো বিশ্বাসীদের হারানো সম্পদ, তা সে যেখানেই খুজে পাক"[তিরমিজি ২৬৮৭]
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি

Visit all other posts by this author
জ্ঞানীদের বাণী হলো বিশ্বাসীদের হারানো সম্পদ, তা সে যেখানেই খুজে পাক”[তিরমিজি ২৬৮৭]
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture