নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা অমায়িক ব্যবহার দিয়েছিলেন। উনার ব্যবহারে কোন মানুষ কষ্ট পেত না। এজন্য উনার চরম দুশমনরাও উনার সাথে মিশলে কি হয়ে যেত?
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও অমায়িক ব্যবহার। উনার খাদেম ছিলেন হযরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ১০ বছর নবীজির ইন্তেকালের পরে আনাস বিন মালেক,
আনাসবিন মালেক বলেন যে আমি রাসূের ১০ বছর খেদমত করছে। যখন প্রিয় নবীজি হিজরত করে মদিনায় যান,
মদিনার লোকেরা নবীজির খেদমতে এসে উনাকে হাদিয়া তহফা দিচ্ছিলেন। হাদিয়া দিলে মানুষ খুশি হয়। হাদিয়া দিলে বন্ধুত্ব বাড়ে।
এজন্য রাসূল (সা.) বলছে, তোমরা একে অপরকে হাদিয়া দাও। তোমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। তো সাহাবারা এসে হাদিয়া দিচ্ছিল। হযরত আনাস বিন মালেকের মায়ের নাম ছিল উম্মু সুলাইম রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা। তিনিও মুসলিম। কিন্তু তিনি গরীব ছিলেন। এখন উনি বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করে দেখলেন যে নবীজিকে দেয়ার মত কোন হাদিয়া উনার ঘরে নাই। কিন্তু হাদিয়া দিলে তো খুশি হয়। দোয়া পায়। কেউ কাউকে কিছু দিলে, আপনি যদি আমারে ১০০ টাকা দেন, ১০ টাকা দেন তাহলে আমি বলি না জাযাকাল্লাহ খায়রা। বাংলা অর্থ কি? আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দেক। বারাকাল্লাহ ফিক আল্লাহ তোমার মাঝে বরকত দেক, এ হাদিয়াটা না দিলে কিন্তু এ দোয়াটা আপনি এভাবে পাইতেন না, দিলে পাইতেন তো।
নবীজি থেকে বিভিন্নজন দোয়া নিচ্ছে হাদিয়া দিচ্ছে, হাদিয়া দেয়া কিন্তু সুন্নাহ, হাদিয়া নেয়াও কি সুন্নাহ। এগুলা মনে রাইখেন, দিয়েন মানুষে দিয়েন, আমরাও দেই মানুষকে আলহামদুলিল্লাহ।
আমরা বুঝি কার দোয়া দরকার, যেমন আপনারা আমাদেরকে দেন আমরাও খুজি যে কারে দিলে দোয়া করবে। তো নবীজিকে হযরত আনাস বিন মালেকের মা হাদিয়া দেয়ার মত ঘরে কিছু নাই। তিনি গরীব মহিলা। তাই তিনি উনার ছেলে আনাসের হাত ধরে বললেন, চল নবীজির বাড়ি যাব। আনাসের বয়স তখন মাত্র ১০।
ছোট্ট আনাসকে তিনি রাসূলের কাছে এনে বললেন, ইয়া রাসূল্লাহ, কতজন কত কিছু আপনাকে হাদিয়া দেয়। আমার তো দেয়ার মত কিছু নাই। আপনার খেদমতের জন্য আমি আমার ছেলে আনাসকে দিয়ে দিলাম।
উনি খাদেমুর রাসূল ছিলেন। তো নবীজি মদিনায় ১০ বছর ছিলেন। এ ১০ বছর হযরত আনাস খেদমত করছে। হযরত আনাস বলেন
فَمَا قَالَ لِي أُفٍّ وَلَا لِمَ صَنَعْتَ وَلَا أَلَّا صَنَعْتَ
এ ১০ বছর রাসূলের খেদমত করেছি। ১০ বছরে নবীজি আমার উপর বিরক্ত হইয়া কখনো উফশব্দ বলেন নাই। কত কাজের আদেশ করেছেন ছোট মানুষ করি নাই ভুলে গেছি, আবার করতে নিষেধ করছে ভুলে করে ফেলেছি। কিন্তু রাসূল কেন করেছো কেন করো নাই এ ১০ বছরে আমি আনাসকে প্রশ্নটাও করে নাই।
আমি মনে কষ্ট পেতে পারি, ব্যথা পেতে পারি, এজন্য আমাকে তিনি কেন করো নাই এই কথাটাও জিগাইতো না। কি মূল্যায়ন তিনি করতেন, সুবহানাল্লাহ।
হযরত আনাস বলেন যে একবার আমার মন চাইলো এই লোকটার সাথে আমি ১০টা বছর কাটায়া দিলাম কোনদিন খারাপ ব্যবহার করলো না, রাগ করতে দেখি না, মিসবিহেভ করে না, আজকে একটু আমি রাসূলকে খেপাবো, চেতায়া দেব, এজন্য আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিছি এমন এক ব্যবহার করব যেন আজকে রাগ করতে বাধ্য হয়, আর রাগ করলে লাগে কেমন সেটা একটু দেখি, বলে কি সেটা একটু শুনি। গোস্ত খাইতে খাইতে মাঝে মাঝে টু সুটকি খাইতেও তো মন চায় না তো সবসময় তো হাসি দেখলাম একটু রাগটাও দেখি।
না বলে আমি প্ল্যান করলাম যে আজকে একটু আমি উল্টাপাল্টা কথা বলব, হযরত আনাস বলছে সহীহ বুখারীতে এসেছে,
নবীজি ছিলেন সর্বোত্তম আদর্শ চরিত্রের দিক থেকে ব্যবহারের দিক থেকে মানুষের মাঝে নাম্বার ওয়ান। একদিন তিনি আমাকে বললেন যা না অমুক জায়গায় যাও, আমাকে এক জায়গায় যাওয়ার জন্য অর্ডার করলেন মুখের উপর বলে দিলাম আল্লাহর কসম পারবো না, যাব না, আর আমি অপেক্ষা করছিলাম একটা ধমক এখনই মারবে বা একটু রাগ দেখাবে, রাগ দেখাবে, কি বললি, কেন যাবি না, আমি অপেক্ষা করছিলাম যে রাগ করলে দেখি লাগে কেমন?
মুখের উপর বললাম আল্লাহর কসম যাবো না, তবে মনে মনে আছে যে অবশ্যই যাব রাসূল কইলে কি না যাইয়া পারি।
মনে আছে যে যাব, মুখে বলছি যাব না, আনাস বলে যে কেন যাব না রাসূল এই প্রশ্নটাও করেন নাই। রাগ দেখানো দূরের কথা কেন যাবে না এটা জিজ্ঞাসা করে নাই। তা আমি ফেল করলাম যে চেতাইতে পারলাম না, ক্ষেপাইতে পারলাম না, মেজাজটা দেখলাম না, তো নবীজি আমারে জিজ্ঞাসও করলেন না কেন যাব না, এখন আর কি করা আমি আবার ওখানে রওনা দিলাম যেখানে তিনি আমাকে পাঠাইছিলেন, বলছিলেন যাও, তো যাওয়ার পথে একটা বাজার পড়লো আমি বাজারের মাঝখান দিয়ে যাওয়ার পথে দেখি কতিপয় বাচ্চা,
তারা বাজারে খেলা করছে। তা আমিও তো কম বয়সী পোলাপান। তাই ভাবলাম যে একটু খেলা দেখে যাই। আমি খেলা দেখার জন্য ওখানে দাঁড়ালাম।
কিছুক্ষণ পরে দেখি,
পিছন থেকে কেউ যেন আমার পিঠে হাত দিয়েছে, আমার কাদের এ বরাবর হাত দিয়া ধরছে, আলত হাত নরম হাত, ছোয়া পেয়ে আমি পিছনের দিকে তাকালাম তাকাইয়া দেখি নবীজি সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আমার পিছনে দাঁড়াইয়া তিনি আমার পিঠে হাত দিলেন। তাকানোতে তিনি আমার দিকে হাসি দিলেন। ও প্রিয় আনাস এই সময় তো তোমার বাজারে থাকার কথা নয়। আমি বুঝতে পারছি যেখানে পাঠাইছিলাম মনে হয় তুমি সেখানে যাচ্ছ বুঝি।
আমি বুঝছি তুমি ওখানে যাচ্ছিলা, না। যাওয়ার পথে এখানে খাড়াইছো। তহলে বুঝা গেল হযরত আনাস ওখানে যাবে না বলার পর নবীজি নিজে রওনা দিছিল, আবার আনাস যে যাবে রাসূলকে তো আর বলে নাই মনে মনে আছে যাবে, তো নবীজি উনাকে দেখে হাসছিল, আচ্ছা আমাদের চাকর বাকর এ ধরনের আচরণ করলে আমরা হাসতাম তো।
এ কথাগুলো শুনে আমরা কমফেয়ার করবো নবী চরিত্রের সাথে আমাদের চরিত্রের, কারণ নবী নবী সাল্লাল্লাহু সলাম তো আমাদের জন্য আদর্শ তো, উনার সাথে মিলাতে হবে তো, তো না মিললে চেষ্টা করতে হবে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম চাকর বাকরের সাথে কি ব্যবহার করতেন আর আমরা কি করি, আহারে একটু পয়সাওয়ালা হলে গাড়ির ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে একসাথে খায় না, এক টেবিলে খায় না, ও দূরে বসায় কয় তুমি ওখানে বস, বাড়ির কাজের মেয়েটাকে কখনো ডাইনিং টেবিলে একসাথে বসে খাইতে দেয় না।
এমন বাড়িওয়ালা আছে যারা ওই মেয়েটাকে দিয়ে মাছ কোটাইলো, মাছ ধোয়াইলো, মাছ রান্না করাইলো কিন্তু তাকে মাছের টুকরাটা আর দিল না। তাকে ঝোল দিল। দিল লেজটা দে কোন রকম। যে ডাইনিং টেবিল সে প্রতিদিন তিনবার মুছে সে ডাইনিং টেবিলে একদিনও খাইতে পারে নাই বসে, ও চেয়ার সে মুছে কিন্তু চেয়ারে বসতে সে পারেনি। এমন ভাবসাব আমাদের তৈরি হয় গাড়ি থেকে নামে না ড্রাইভার গাড়ি থেকে নাইমমা জানালা দরজা টান দিলে তারপরে ঠ্যাং দেয়, গাড়ির মাঝে বসে থাকে, ড্রাইভার খুলে দিলে নামবে আহ কি ভিআইপি তুমি, এগুলো বিনয়ী আচরণ নয়।
আল্লাহ তুমি আমাদের বিনয়ী বানায়া দাও বলেন, আমিন।
কিবির আমাদের শেষ করে দিয়েছে, অহংকার আমাদের ধংস করে দিয়েছে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস বিন মালেক বলেন যে উনার ব্যবহার শুনুন। আমি উনার খাদেম তো উনাকে আমি বেশি দেখেছি। কাছ থেকে দেখেছি।
আমি রাসূলের সাথে আছি চলছি কোথাও যাচ্ছি। হয়তো শীতকাল ছিল। তাই নবীজির গায়ে নাজরান নামক এলাকার বানানো একটা চাদর ছিল। ওই চাদরটা রাসূল গায়ে দিয়েছেন গালিজুল হাশিয়া। যেটার পার একটু শক্ত মোটা। চাদরের সাইডটা ছিল শক্ত। নবীজি এটা গায়ে তিনি হাটছেন হঠাৎ করে পিছন দিয়ে এক বেদুঈন এসে নবীজির চাদর ধরে এমন জোরে টান মারছে, পিছন দিয়ে আইসা কথা নাই বার্তা নাই, চাদর ধরা মারছে একটান, রাসূুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লামের কাধের দিকে আমি তাকিয়ে দেখি ও টানের কারণে উনার কাধের মাঝে লাল দাগ পড়ে গেছে, সুন্দর মানুষ ছিলেন তো একবার রক্ত জমে যাওয়ার অবস্থা, লাল হয়ে গেছে, এমন জোরে সে টান মারছে, টান মাইরা রাসূুল্লাহর কাধের মাঝে লাল দাগ ফালায়া দিয়া এবার সে বেদুঈন বলতেছে ও মোহাম্মদ আমি শুনেছি তোমার কাছে গনিমতের মাল আছে, যাকাতের মাল আছে, আমি গরীব মানুষ আমারে কিছু মাল দেও, মানে ভিক্ষা চাইতেছে, চাওয়ার স্টাইল এটা।
নবীজি চাদর ধরা টাইনা দাগ ফালা ভিক্ষা টাকা নবীজি কিছু বলেন নাই, বরং তিনি তার দিকে তাকালেন, আনাস বলেন যে রাসূল তার দিকে ফিরে তিনি হাসি দিলেন, তিনি বুঝাইলেন যে আরে বেকুব এইভাবে টাকা চায়, কিন্তু তিনি এ কথাটাও বলেন নাই। তিনি হাসি দিলেন।
তারপরে যিনি বাইতুল মালে দায়িত্বশীল, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্ব পালন করে নবীজি তাকে ডেকে বললেন যে ওকে কিছু টাকা দিয়ে দাও। দেখেন এটাই নিয়ম। আল্লাহ বলছেন তোমার সাথে যদি কেউ লাগে তাহলে তুমি, উত্তমভাবে সেটার মোকাবেলা করো। কারো সাথে তর্ক বিতর্ক যদি হয়, সে যা বলে তুমি তা বলো না, তুমি উত্তমটা দিয়ে সেটা প্রতিহত করো, একজন আপনাকে বকা দিল, ঠিক আপনিও বকা দিলেন। তাহলে বুঝা গেল তার কাছে যা আছে আপনার কাছেও তাই আছে।