আসমাউল হুসনা – আল-ওয়ারিস
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নিজেকে আল-ওয়ারিস – উত্তরাধিকারী, স্বত্বাধিকারী – বলেছেন একটি উপলক্ষে। আল-ওয়ারিস হলেন তিনি, যিনি সকলের এবং সবকিছুর বিলুপ্তির পরেও থেকে যাবেন। তিনিই একমাত্র যার কাছে সবাই ফিরে আসবে; তিনি সমগ্র সৃষ্টির একমাত্র উত্তরাধিকারী ও মালিক!
ওয়ারিস و-رث এর মূল থেকে এসেছে, যা চারটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ উত্তরাধিকারী হওয়া, দ্বিতীয় অর্থ হল স্বত্বাধিকারী হওয়া, এবং তৃতীয় অর্থ হল কারো মৃত্যুর পরে কোন কিছুর মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী হওয়া।
এই মূলটি কুরআনে ৩৫ বার পাঁচটি উদ্ভূত আকারে এসেছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল نَرِثُ – নারিসু (“আমরা উত্তরাধিকারী হব”), مِيرَاثُ – মিরাথু (“স্বত্বাধিকার”) এবং ٱلۡوَٰرِثِينَ – আল ওয়ারিসিনা (“উত্তরাধিকারী”)।
ভাষাগতভাবে, ওয়ারাসা উত্তরাধিকারীকরণের ক্রিয়াকে বোঝায়, এবং ওয়ারিস হল যে ক্রিয়াটি করে অর্থাৎ উত্তরাধিকারী, এবং আল-মীরাস হল উত্তরাধিকার। যদিও এই পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী বলতে পার্থিব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বোঝায়, আল-ওয়ারিস হলেন সর্বোচ্চ উত্তরাধিকারী যার কাছে রয়েছে আসমান ও জমিনের উত্তরাধিকার।
আল-ওয়ারিস নিজেই বলেছেন-
وَإِنَّا لَنَحۡنُ نُحۡىِۦ وَنُمِيتُ وَنَحۡنُ ٱلۡوَٰرِثُونَ
আর নিশ্চয় আমি জীবিত করি ও মৃত্যু দেই এবং আমিই ওয়ারিস।(উত্তরাধিকারী)1
وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٌ
আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত।2
কুরআনে উত্তরাধিকার:
وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٍ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।3
বিশ্বাসী হিসেবে আমরা কুরআনে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত ইসলামিক বিধি-বিধানের দিকনির্দেশনা পাই। উত্তরাধিকারের বিধান কুরআনে সূরা আন-নিসা, আয়াত ১১ ও ১২ এবং ১৭৬ নং আয়াতে দেওয়া হয়েছে, এগুলোর শরণাপন্ন হওয়া ঈমানের অংশ।
আল্লাহর এই নামটিকে নিজের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবেন?
জেনে রাখুন আল ওয়ারিসের কাছেই আপনার প্রত্যাবর্তন। পার্থিব ভোগ সম্পদে নিজেকে নিমজ্জিত করবেন না, এবং এগুলো যেন তাঁর আনুগত্যের পথে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায়, যার কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে আপনাকে, আপনার সম্পদ আপনার আমল সবকিছুকেই। সম্পদ, বড় গাড়ি-বাড়ি, এবং পার্থিব মর্যাদায় সাফল্যের সন্ধান করবেন না, যদি এইসবের কারণে আল্লাহ আজ্জা ওয়াজালের সাথে আপনার সম্পর্ককে আপোষ করতে হয়, এমনকি যদি সমাজে সাফল্যের ধারণাও এটা হয়।
আপনার সন্তানদের প্রাত্যহিক জীবনের কর্মকাণ্ডে আল-ওয়ারিসকে প্রথমে রাখুন এবং নিজেকে প্রায়শই মনে করিয়ে দিন যে খুব শীঘ্রই আপনি তাঁর কাছে ফিরে যাবেন এবং এই পৃথিবীর কোনও সম্পত্তি আপনি সাথে করে নিতে পারবেন না।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন বলুন।
ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ
যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।4
শুধু কেউ মারা গেলেই নয়, বরং যখনই কোনো বিপর্যয় বা পরীক্ষা আপনাকে আঘাত করে, এমনকি কোনো বস্তুর ক্ষতি হলেও বলুন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন‘। সুন্নতকে পুনরুজ্জীবিত করুন এবং বিপদ আপদে এই জিকিরটি করুন!
আল-ওয়ারিসের মালিকানার কথা চিন্তা করুন। আপনার চারপাশে একবার দেখুন; আপনি যা দেখেন এবং যা দেখতে পান না, সবই আল্লাহর। তিনি আপনাকে আপনার সমস্ত সম্পত্তি দিয়েছেন – আপনার বাড়ি-গাড়ি, আপনার সন্তান, স্বাস্থ্য এবং এমনকি আপনার সময়।
আল-ওয়ারিস বলেছেন –
لِلَّهِ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا فِيهِنَّۚ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيرٌۢ
আসমানসমূহ ও যমীন এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তার রাজত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।5
কুরআন ও সুন্নায় উত্তরাধিকারের যে বিধান দেওয়া আছে তা অনুসরণ করুন। ইসলামে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধি-বিধান ও আইন কুরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং সুন্নতে প্রদর্শিত হয়েছে; যেকোন পরিস্থিতিতে এই বিধি-বিধান মেনে চলুন, তা আপনাকে পার্থিব সুবিধা এনে দিক বা না দিক। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আরও আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য তাদের নিজস্ব উত্তরাধিকারের নিয়ম অনুসরণ করে, এটি একটি গুরুতর পাপ এবং আল-ওয়ারিসের অবাধ্যতা। তাই সর্বদা তাঁর বিধিবিধান অনুসরণ করার জন্য তাঁর কাছেই প্রার্থনা করুন।
আল-ওয়ারিস এর কাছে প্রার্থনা করুন। রাসুল (ﷺ) এই দু’আটি পড়তেন –
اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِسَمْعِي، وَبَصَرِي، وَاجْعَلْهُمَا الْوَارِثَ مِنِّي، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ يَظْلِمُنِي، وَخُذْ مِنْهُ بِثَأْرِي
মোটামুটি উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা মাত্তি‘নি বিসাময়ি ওয়া বাসারি, ওয়াজআলহুমাল ওয়ারিসা মিন্নি, ওয়াংসুরনি আলা মান ইয়াজলিমুনি, ওয়া খুজ মিনহু বি-সা’রি।
অর্থ : হে আল্লাহ, তুমি আমাকে আমার চোখ ও কানের দ্বারা উপকৃত করো এবং এগুলোকে আমার মৃত্যু পর্যন্ত সুস্থ রাখো, আমার ওপর যে জুলুম করে, তার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো এবং তার থেকে আমার প্রতিশোধ গ্রহণ করো।6
আপনার প্রাত্যহিক জীবনে এই দু’আটি পড়ুন! কুরআনে আপনি এমন কিছু দু’আ পাবেন যেখানে ওয়ারিসিন (উত্তরাধিকারী) ব্যবহার করা হয়েছে –
وَٱجۡعَلۡنِى مِن وَرَثَةِ جَنَّةِ ٱلنَّعِيمِ
আর আপনি আমাকে সুখময় জান্নাতের ওয়ারিসদের (উত্তরাধিকারীদের) অন্তর্ভুক্ত করুন’।7
وَزَكَرِيَّآ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥ رَبِّ لَا تَذَرۡنِى فَرۡدًا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلۡوَٰرِثِينَ
আর স্মরণ কর যাকারিয়্যার কথা, যখন সে তার রবকে আহবান করে বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী’।8
হে আল্লাহ, আল-ওয়ারিস, আমরা জানি যে, আপনি আকাশ ও পৃথিবীর উত্তরাধিকারী। আমাদের পার্থিব সম্পত্তিকে আপনার সন্তুষ্টির পথে ব্যয় করতে সহায়তা করুন, আমাদেরকে পথনির্দেশনা দিন যেন আমরা প্রতি মুহূর্তে স্মরণে রাখতে পারি যে, আমাদেরকে আপনার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে, এবং এই জ্ঞানের উপর আমল করার তৌফিক আমাদের দান করুন। আপনার আইন মেনে চলতে আমাদের সাহায্য করুন এবং আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা সর্বোচ্চ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হবে,
আল্লাহুম্মা আমীন!
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
আল-ওয়ারিস