আসমাউল হুসনা – আল-মুইজ
আল-মুইজ (ُاَلْمُعِز)
অর্থ : সম্মান-দানকারী
আল্লাহ سُبْحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ আল-মুইজ, তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন; আর তিনি যাদের সম্মান দান করেন তাদের হেয় করার কেউ নেই। তিনি যাকে ইচ্ছা হেয় করেন; আর তিনি যাদের অবনমিত করেন তাদের সম্মান দেওয়ার কেউ নেই। আল-মুইজ তাঁর আনুগত ও প্রিয় বান্দাদের শক্তি ও সম্মান দানকারী। তিনি যাকে ইচ্ছা শক্তিশালী এবং মহিমান্বিত করেন; এবং তিনি তাঁর পছন্দের বান্দাদের জন্য সম্মানিত হওয়াকে সম্ভবপর করে তোলেন।
মুইজ শব্দটি এসেছে ع- ز -ز এর মূল থেকে, যার কয়েকটি অর্থ রয়েছে: পরাক্রমশালী, শক্তিশালী, উন্নত, মহৎ, সম্মানিত, মহিমান্বিত, খ্যাতিমান, অদম্য, অজেয়, প্রিয়, দুর্লভ এবং মূল্যবান।
এই মূলটি কুরআনে বিভিন্ন রূপে এসেছে, কয়েকটি উদাহরণ হল- فَعَزَّزۡنَا (তাই আমরা শক্তিশালী করেছিলাম); ٱلۡأَعَزُّ (অধিক সম্মানিত); فَبِعِزَّتِكَ (আপনার সম্মানের শপথ); وَتُعِزُّ (এবং আপনি সম্মান দান করেন)।
আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে ৮১টি নাম সুস্পষ্টভাবে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাকি ১৮টি নামের ব্যাপারে আলেমরা একমত হতে পারেননি। আল্লাহর আল-মুইজ নামটি ইবনে উসাইমিন, ইবনে হাযম এবং ইবনে আল-ওয়াজির আসমাউল হুসনার তালিকায় রাখেননি। তবে যে নাম গুলোর পূর্বে আলিফ লাম থাকে, সেই নামগুলোকে আল্লাহর নাম হিসাবেই ধরে নেওয়া হয়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহর এই নামটি সরাসরি না আসলেও, অনেক আয়াত এই নামের গুণাবলীকে ইঙ্গিত করে, যিনি ইজ্জা অর্থাৎ শক্তি, ক্ষমতা এবং সম্মান দিয়ে থাকেন। আল্লাহর নাম আল-আজিজ একই মূল থেকে এসেছে।
قُلِ ٱللَّهُمَّ مَٰلِكَ ٱلۡمُلۡكِ تُؤۡتِى ٱلۡمُلۡكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلۡمُلۡكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُۖ بِيَدِكَ ٱلۡخَيۡرُۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيرٌ
বল, ‘হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান’।1
.... نَرۡفَعُ دَرَجَٰتٍ مَّن نَّشَآءُۗ وَفَوۡقَ كُلِّ ذِى عِلۡمٍ عَلِيمٌ
.....আমি যাকে ইচ্ছা তার মর্যাদা উঁচু করে দেই এবং প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর রয়েছে একজন মহাজ্ঞানী।2
مَنۡ کَانَ یُرِیۡدُ الۡعِزَّۃَ فَلِلّٰهِ الۡعِزَّۃُ جَمِیۡعًا ؕ اِلَیۡهِ یَصۡعَدُ الۡکَلِمُ الطَّیِّبُ وَ الۡعَمَلُ الصَّالِحُ یَرۡفَعُهٗ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یَمۡکُرُوۡنَ السَّیِّاٰتِ لَهُمۡ عَذَابٌ شَدِیۡدٌ ؕ وَ مَکۡرُ اُولٰٓئِکَ هُوَ یَبُوۡرُ
কেউ সম্মান-সুখ্যাতি চাইলে (আল্লাহকে উপেক্ষা করে তা লাভ করা যাবে না), সে জেনে নিক যাবতীয় সম্মান-সুখ্যাতির অধিকারী হলেন আল্লাহ। তাঁরই দিকে উত্থিত হয় পবিত্র কথাগুলো আর সৎকাজ সেগুলোকে উচ্চে তুলে ধরে। যারা মন্দ কাজের চক্রান্ত করে তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। তাদের চক্রান্ত নিষ্ফল হবে।3
আল্লাহর এই নামটিকে নিজের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবেন?
তাঁর সম্মানিত হওয়ার জন্য আল-মুইজ সূরা হুজুরাতে নিজেই বলেছেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبًا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।4
এই বিখ্যাত আয়াতটি জাতিগত বৈষম্য এবং কুসংস্কারকে ইঙ্গিত করে। আমরা সকলেই এক নর ও নারী থেকে সৃষ্ট (আমাদের উৎপত্তি আদম ও হাওয়া থেকে)। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন অন্যান্য গোত্রের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য, যাতে আমরা একে অপরকে জানতে পারি। দৃশ্যমান পার্থক্য সত্ত্বেও, আমাদের উৎস কিন্তু একই।
বিদায় হজ্জের সময়ও রাসূল (সা:) একই কথা বলেছিলেন –
“হে লোকজন! সাবধান তোমাদের আল্লাহ একজন। কোন অনারবের ওপর কোন আরবের ও কোন আরবের ওপর কোন অনারবের কোন কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও কোন শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই আল্লাহভীতি ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহভীরু সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান।”5
কাজেই আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হওয়ার জন্য আমাদের তাকওয়া অর্জন করতে হবে।
এই পৃথিবীতে আল্লাহ আমাদেরকে ধন-সম্পদ দান করে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। কাজেই এর থেকে পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করতে হবে, এবং অভাবগ্রস্তদেরও দান করতে হবে।
মানুষের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে, এবং প্রত্যেককে তাদের যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না, এবং পাপাচারে লিপ্ত হওয়া যাবে না, কারণ এই কাজগুলো সামাজে বিপর্যয় ডেকে আনে।
وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَاۖ وَأَحۡسِن كَمَآ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِى ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ
আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’।6
হে আল্লাহ আল-মুইজ, আমরা জানি যে আপনিই সম্মান দানকারী, আপনি আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাতের সম্মান দান করুন। আপনার নামগুলো নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা ভাবনা করার তৌফিক দান করুন। আপনার দেওয়া অনুগ্রহ থেকে যেন আমরা অন্যদেরও দান করতে পারি, এবং আমাদের বিশ্বাসী ভাই-বোনদের সাথে সম্ভাব বজায় রাখতে পারে সেজন্য আপনি আমাদের সাহায্য করুন। আপনার সম্মানিত বান্দাদের সাথে আপনি আমাদেরকেও জান্নাতুল ফেরদৌসে মিলিত করুন।
আল্লাহুম্মা আমীন!
আল-মুইজ