প্রতিদিন আব্রারকে স্কুলে দিয়ে আসার সময় দেখি, পাশের বিল্ডিং এর বয়স্ক ভদ্রলোক আপন মনে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত, সারাদিন যেন ওখানেই পরে থাকেন, যাওয়া আসার মধ্যেই হাস্যজ্বল মানুষটার সাথে পরিচয়, কথায় কথায় জানতে পারি, তিনি সিরিয়া থেকে আগত, মুসলিম!
আমিও যে মুসলিম এটা জেনে সেই কি ভীষণ খুশি!
দৌড়ায়ে গিয়ে একটা টুকরি নিয়ে আসলেন, শত মানা সত্ত্বেও নিজ হাতে ১০/১২ পদের আইটেম বিভিন্ন কর্নার থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে জড়ো করলেন, কথা বলতে বোধহয় ভালোবাসেন, টুকরিটা হাতে ধরিয়ে গল্প জুড়ে দিলেন।
উনার দাদা ছিলেন টার্কিশ আর্মিতে, ১৯২৪ এর দিকে খিলাফা যখন ধ্বংস হয় তখন তার দাদা সিরিয়ায় পালিয়ে যান, কারণ এলাইসরা টার্কিশ সোলজার দেখলেই মেরে ফেলছিলো, তারপর থেকে শুরু করলেন আফসোস, বললেন কিভাবে আরবরা টার্কিশদের সাথে গাদ্দারি করে পুরো উম্মাহর ধ্বংস ডেকে করলো, ইতিহাসটা জানা ছিল তবুও থামালাম না, আলোচনা শেষে জাস্ট বললাম, জানেন?
এক্সাক্টলি এই কথাটাই ইন্সট্রাকশনে এসেছে, সূরা নিসার ১৪৪ নাম্বার আয়াতে এসেছে
“হে মুমিনগণ!
তোমরা মুমিনগণ ছাড়া অবিস্বাসীদেরকে আওলিয়া হিসেবে গ্রহণ করবে না”
অথচ এই ফান্ডামেন্টাল ইন্সট্রাকশনটাই তারা ভায়োলেট করেছিল, ইনফেক্ট এখনো করছে!
অনেকেই এই আয়াতটা মিস্ট্রেন্সলেট করে, ভাবে নন মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, বিষয়টা কিন্তু তা না, সঠিক কনটেক্সট আর অর্থ বুঝতে হবে,আগে পিছের আয়াত দেখলে বুঝায় যায় এটা যুদ্ধকালীন সময়ে নাজিল হয়েছিল, খুব সম্ভবত উহুদ যুদ্ধের পরপরই, আর শব্দটা হলো “আওলিয়া“
যার কারেক্ট অর্থ হলো এলাইস বা মিত্র, অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে এক বা একাধিক পার্টিকে স্ট্রেটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করাটাই হলো এই আওলিয়া, অর্থাৎ বলা হচ্ছে,
যখন যুদ্ধের আবহাওয়া তৈরি হয় তখন যেন মুসলিমরা মুসলিমদের ছাড়া অ্যালায়েন্স না বাঁধে, বিশেষ করে মুসলিমদের অ্যাগেইনস্ট অমুসলিমদের সাথে, এই অ্যালায়েন্স দিয়েই পশ্চিমারা কিন্তু এখন পুরো বিশ্ব শাসন করছে, ন্যাটো অ্যালায়েন্স বা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন অ্যালায়েন্স দিয়ে বিশ্ব শাসাচ্ছে, অর্থাৎ কারেক্ট ট্রান্সলেশন টি হলো
“হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন ছাড়া অবিস্বাসীদেরকে এলাইস হিসেবে গ্রহণ করবে না”
এখানে কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান কিংবা পারসন টু পার্সন বন্ধুত্বের কথা বলা হয়নি, বললে আওলিয়া শব্দটা ব্যবহার করতেন না, করতেন খলিল শব্দটা, যা তিনি এই একই সুরার ২০ আয়াত পূর্বে ব্যবহার করেছেন হজরত ইব্রাহিমের জন্য, কিংবা ব্যবহার করেছেন সূরা জুখরুফের ৬৭ নং আয়াতে।
তো যা বলছিলাম
“হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন ছাড়া অবিস্বাসীদের এলাইস হিসেবে গ্রহণ করো না”
এই আয়াতের নগ্ন উদাহরণ আমরা দেখতে পেয়েছিলাম সেই প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শেষে, এই টার্কিশ খিলাফত দূর করতে আরবরা ক্ষমতার লোভে মুসলিমদের বাদ দিয়ে তখন ব্রিটিশদের সাথে এলাই করেছিল, যার রেজাল্ট?
পুরা খিলাফত তছনছ হয়ে গিয়েছিলো, যার খেসারত আজ পর্যন্ত পুরো উম্মাহকে টানতে হচ্ছে, সেই অ্যালায়েন্স কিন্তু এখনো জারি আছে, তাইতো দেখবেন, আমেরিকা যখন ইরাক এটাকে করে, তারা চুপ, কারণ তারা এলাই, আমেরিকা যখন আফগানিস্তান এটাকে করলো, তখনো তারা চুপ, কারণ তারা এলাই, কিংবা এখন যখন, ইসরাইল ফিলিস্তিনে এটাকে করছে, তারা তাতেও চুপ, কারণ তারা যে এলাই।
যখন লেবাননে এটাক করছে, কিংবা সিরিয়া এটাক করে তখনও তারা চুপ, কারণ তারা এলাই, আর লেটেস্ট ইরান ইন্সিডেন্ট তো দেখতেই পাচ্ছি, আজ আবার দেখলাম আমেরিকাও এখন ইরান এটাকে করলো, আমি প্রিটি সিউর তারা এবারো চুপই থাকবে, কারণ এখনো যে তারা এলাই!
যাই হোক, আলোচনা শেষে সালাদের টুকরি হাতে বাসায় ফিরলাম, ফিরে ভাবছি কি দেওয়া যায়, খালি টুকরি তো আর ফেরত দেয়া যায়না, একটা আইডিয়া আসলো, বাসায় দেশি স্টাইলে বেগুন আর চিংড়ি ভাজি রাখা আছে, সেটাই নিয়ে রওনা দিলাম, তরকারি হাতে পেয়ে সে কি খুশি।
আবেগে আপ্লুত হয়ে বলতে থাকলো, থেঙ্ক ইউ সো মাচ!
এটার কোনো দরকার ছিল না, তবে এটাই কিন্তু ইসলামের সৌন্দর্য!
এমনটাই তো হওয়া উচিত, আমরা ব্রাদার্স!
আমাদের এক হতে হবে!
আমরা একে ওপরের সাহায্যে এগিয়ে আসবো!
তাই না?
নিশ্চই!
কিন্তু কেন তাহলে আমরা এক হতে পারছি না?
অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না!
বিষন্ন মনে শুধু বাড়ি ফিরলাম, ফিরে ভাবছি কি বলা যায়?
কেন?
আমরা কেন এক হতে পারছি না?