আলহামদুলিল্লাহ এর মর্মার্থ

মুসলিম সমাজের বিশেষত্ব হচ্ছে- জীবনচক্রের সবচাইতে কঠিন সময়েও তারা আল্লাহ রব্বুল আলামীন এর প্রশংসা করতে পারেন। জীবনকে ঘিরে কোনো পেরেশানিতে রয়েছে, কোনো খুশির সংবাদ পেয়েছে কিংবা স্মৃতির জাবর কেটেছে; তাদের মুখনিঃসৃত প্রথম বাক্য হয়- আলহামদুলিল্লাহ
নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহর রহমত যে আমরা এমন গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত যারা ‘আলহামদুলিল্লাহ‘ বলার সৌভাগ্য পেয়েছি।সৌভাগ্য বলার কারণ, একটা মাত্র বাক্যের মাধ্যমে আপনার আমলের পাল্লা পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কখনো ভেবেছেন কি, কেনো ‘আলহামদুলিল্লাহ‘ এতোটা ফজিলত পূর্ণ বাক্য?

‘আলহামদুলিল্লাহ’ বাক্যটির মাধ্যমে একজন বান্দা ঘোষণা দিচ্ছে– আল্লাহ পাকের প্রতি সে কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞতা (শুধুমাত্র) আল্লাহর জন্য। আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি সে- প্রশংসা করছে, প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য। উপলব্ধি সাগরের কিছুটা গহীনে ডুব দিলে দেখা যায়, ‘কৃতজ্ঞতা’ এবং ‘প্রশংসা’ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।

মনে করুন, আপনি একটি সুন্দর বাড়ি দেখে প্রশংসা করলেন, এক্ষেত্রে কিন্তু আপনি বাড়িটিকে ধন্যবাদ দিতে যাবেন না। আবার আপনি হয়তো একজন খেলোয়াড় দেখলেন, যিনি একজন দক্ষ খেলোয়াড়। আপনি তার খেলা দেখে হয়তো প্রশংসা করবেন, কিন্তু আপনি ঐ খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ দিতে যাবেন না অথবা আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না। আবার মাঝে মাঝে উল্টোটাও ঘটে। কিছু মানুষের প্রতি আপনি কৃতজ্ঞ থাকেন যদিও আপনি কখনো তাদের প্রশংসা করবেন না।

এমনটাও ঘটতে পারে যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ পবিত্র কুরআনে রয়েছে‒ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা একজন মুসলিমকে সকল অবস্থাতেই তার বাবা-মার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে আদেশ করছেন, এমনকি বাবা-মা মুশরিক হলেও! যদি তারা আপনাকে শিরক করার জন্য জোর করেন, তারা চান আপনি ঈমান ত্যাগ করেন, তারপরেও আপনাকে উনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। আপনি তাদের শিরক এর প্রশংসা করবেন না , কিন্তু তারপরেও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন।

সুতরাং, জীবনের বাঁকে বাঁকে আপনি প্রশংসা পেতে পারেন কৃতজ্ঞতা ছাড়া, আবার কখনো কখনো কৃতজ্ঞতা পাবেন প্রশংসা ছাড়া। বিষয়টি আরো সহজ করে তুলে ধরবার জন্য আমি আপনাদের কাছে আরো একটি উদাহরণ দিবো। যেখান থেকে একজন ব্যক্তি যার মধ্যে কৃতজ্ঞতা আছে কিন্তু প্রশংসা নেই, বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।

আপনারা ফিরাউনের কথা জানেন। ফিরাউন পছন্দ করুক কিংবা না করুক সে মুসা (আলাইহিস সালাম)-কে তার প্রাসাদে বড় করেছে। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ের পর মুসা (আলাইহিস সালাম) ফিরাউনের কাছে ফিরে আসেন। এরপর ফিরাউন মুসা (আলাইহিস সালাম) কে মনে করিয়ে দিয়ে বলেছিল যে, তুমি কি এখানে অনেক বছর থাকোনি?
তুমি কি এখানে অনেক বছর পার করোনি?
আমি কি তোমাকে শৈশবকাল থেকে বড় করিনি?
ফিরাউন কথাগুলোর মাধ্যমে তার দয়ার কথা মুসা (আলাইহিস সালাম) কে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। স্বাভাবিকভাবে কেউ যখন আপনার উপকার করে, আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) স্বয়ং এই উপকারের কথা স্বীকার করেন এবং ফিরাউনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুসা (আলাইহিস সালাম) বলেন- হ্যা, তুমি আমার প্রতি দয়া করেছিলে।

আপনি যখন কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন ঠিক সাথে সাথেই আপনি তাকে ধন্যবাদ দিবেন। একই কাজ মুসা (আলাইহিস সালাম)-ও করেন; তিনি ফিরাউনকে ধন্যবাদ দেন। কিন্তু মুসা (আলাইহিস সালাম) তার জীবনদশায় কখনোই তার প্রশংসা করেন নি। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, আপনি কাউকে ধন্যবাদ দিতে পারেন প্রশংসা ছাড়া আর কাউকে প্রশংসা করতে পারেন কৃতজ্ঞতা ছাড়া।

যখন আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি – এর অর্থ আমরা বলছি যে, “আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি তিনি যা কিছু করেন তার জন্য”। আল্লাহ পাক যা করেন তার চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। তাঁর প্রশংসা করার পর আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি যে তিনি যা করেছেন সেটার জন্য।

মসজিদে মুসল্লিদের কথা চিন্তা করা যাক! তন্মধ্যে অনেকে রয়েছেন যাদের জন্য হয়তো এয়ার কন্ডিশন যথেষ্ট নয় এবং আবহাওয়ায় তীব্রতায় ভাবছেন,’উফ যা গরম।’ কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে বান্দার মনে প্রথমে আসা উচিত ছিলো ‒ ‘আলহামদুলিল্লাহ আজ বেশ গরম।’ এর মানে কি আপনি জানেন?
এর অর্থ আল্লাহকে ধন্যবাদ গরমের জন্য, এবং আমি আল্লাহর প্রশংসা করি গরমের জন্য। এটি ভিন্ন ধারার চিন্তা যা আর দশ জনের মতন নয়।

কিছু মানুষ আছেন যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে, কিন্তু তাদের যা নেই তা হচ্ছে- “আলহামদুলিল্লাহ।” বলার সৌভাগ্য! আবার কিছু মুসলিম আছে যারা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ অর্থ বুঝে না। তাই মাঝে মধ্যে তারা বলে –”আমি বেতন বেশি পাই না, তবে যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ!” বাস্তবিক অর্থে, আপনি তখন আলহামদুলিল্লাহ বলছেন না। আপনি অভিযোগ করছেন আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্য দিয়ে। আবার হয়তো আপনি এবং আপনার পরিবার সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়- পরিবারের সবাই কেমন আছে? আর জবাবে যদি বলেন- এই আছে আরকি, আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে কিন্তু বিষয়টি ভিন্ন। কেনো না এই আলহামদুলিল্লাহ বলা কিন্তু সত্যিকারের আলহামদুলিল্লাহ না।

‘আলহামদুলিল্লাহ’ হচ্ছে আপনার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনি কৃতজ্ঞ। নেতিবাচক যা কিছু ঘটে যাচ্ছে, তার মাঝেও আপনি ভালো কিছু খুঁজে পাবেন। আপনি যদি গরম অনুভব করেন, অন্তত আপনি অসুস্থ তো বোধ করছেন না। আপনার আরো কিছু খারাপ হতে পারতো। আপনি জানেন বেতন কম পাচ্ছেন কিন্তু আপনার অন্তত চাকরিটা আছে। আপনার অনেক কিছইু ঠিক মতো চলছে।

আমরা সেই দলের মানুষ যারা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলি। যার ভাবার্থ, আমরা সবসময় কৃতজ্ঞ , আমরা সবসময় ইতিবাচক। আমরা যদি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বাক্যটা বুঝতাম, তাহলে আমরা কখনো হতাশ হতাম না, একজন মুসলিম কখনো হতাশ হতে পারে না।

বর্তমান সময়ে উম্মাহর মধ্যে কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা মুসলিমদের অবস্থার জন্য অভিযোগ করছে। যেমন ধরুন, আমরা মুসলিমদের অজ্ঞতার জন্য অভিযোগ করি অথবা মুসলিমদের মাঝে দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ করি। আমরা যা পারি তা কেবল, অভিযোগ, অভিযোগ আর শুধুমাত্র অভিযোগ। আমি আপনাদের বলছি তিনি আল্লাহ, যিনি আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করেন। আমাদের যা করতে হবে তা হলো, আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে। আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে, ইতিবাচক দলের মানুষ হতে হবে।

মূলঃ নোমান আলী খান

লিখেছেন

কারিশমা আনান

নারী আড়ালেই সুন্দর। যদি সে বইও প্রকাশ করে ফেলে তবুও আড়ালেই থাকুক।

জানানোর মতন, পরিচয় দেবার মতন কোনো পরিচয় নেই। আমি আল্লাহর এক সৃষ্টি, আমার নবী ﷺ এর উম্মতের একজন। এর বেশি পরিচয় নেই, দিতেও ইচ্ছুক না

লেখকের সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

নারী আড়ালেই সুন্দর। যদি সে বইও প্রকাশ করে ফেলে তবুও আড়ালেই থাকুক। জানানোর মতন, পরিচয় দেবার মতন কোনো পরিচয় নেই। আমি আল্লাহর এক সৃষ্টি, আমার নবী ﷺ এর উম্মতের একজন। এর বেশি পরিচয় নেই, দিতেও ইচ্ছুক না

Exit mobile version