ফেরেশতাগণের নাম এবং তাঁদের প্রধান দায়িত্বসমূহ

ফেরেশতাগণ হলেন, আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত পুত-পবিত্র এবং সম্মানিত সৃষ্টি। তাঁরা কখনও আল্লাহর আদেশ অমান্য করেন না। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী তাঁদের মধ্যে যাঁদের নাম ও কাজ জানা যায়। সেগুলো হলো:
প্রধান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ
জিবরিল (আলাইহিস সালাম):
তার দায়িত্ব, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবি-রসুলগণের নিকট ওহি পৌঁছে দেওয়া। তাঁকে “রূহুল কুদস” (পবিত্র আত্মা) বা “রূহুল আমিন” (বিশ্বস্ত আত্মা)ও বলা হয়।
মিকাইল (আলাইহিস সালাম):
তিনি বৃষ্টি বর্ষণ এবং উদ্ভিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত
ইসরাফিল (আলাইহিস সালাম):
তিনি শিঙ্গায় (صور) ফুঁক দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত।
প্রথম ফুঁকে সব কিছু ধ্বংস হবে এবং দ্বিতীয় ফুঁকে সবাই জীবিত হয়ে উঠবে।
মালাকুল মউত (আলাইহিস সালাম):
তিনি রূহ কবজ (প্রাণ সংহার) করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
(দ্রষ্টব্য: কুরআন ও হাদিসে তাঁর নাম ‘আজরাঈল’ হিসেবে আসেনি। বরং ‘মালাকুল মউত’ বা মৃত্যুর ফেরেশতা হিসেবে এসেছে।)
আমল সংরক্ষণ ও হিসাব-নিকাশের ফেরেশতাগণ:
কিরামান কাতিবীন:
মানুষের ভালো ও মন্দ সকল আমল লিপিবদ্ধ কারী ফেরেশতা মণ্ডলী।
(ডান পাশের জন নেকি বা সৎ কাজ এবং বাম পাশের জন গুনাহ বা খারাপ কাজ লেখেন)।
হাফাযাহ (সংরক্ষক):
বান্দাকে তার ঘুম, জাগরণ ও সকল অবস্থায় রক্ষা করা।
মুনকার ও নাকির (আলাইহিমাস সালাম):
কবরে মৃত ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা ও তার ইমানের পরীক্ষা নেওয়া।
জান্নাত ও জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক
রিদওয়ান (আলাইহিস সালাম):
জান্নাতের রক্ষক বা প্রধান তত্ত্বাবধায়ক। (তবে এ নামটি অধিক বিশুদ্ধ মতে প্রমাণিত নয়)
মালিক (আলাইহিস সালাম):
জাহান্নামের রক্ষক বা প্রধান তত্ত্বাবধায়ক।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব:
আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণ:
আল্লাহ তাআলার আরশ বহন করার দায়িত্বে নিয়োজিত।
সাইয়াহুন (ভ্রমণকারী) ফেরেশতাগণ:
তাঁরা জিকির ও দ্বীনি মজলিসসমূহ খুঁজে বেড়ান এবং তাতে উপস্থিত হন।
দিন ও রাতে পর্যায়ক্রমে দুনিয়ার বুকে আগমনকারী ফেরেশতাগণ:
তারা দিনে ও রাতে মানুষের কাছে পালাক্রমে আসেন এবং তাদের আমল আল্লাহর কাছে নিয়ে যান।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ফেরেশতাদের ওপর যথাযথভাবে ইমান আনার তৌফিক দিন।
আমিন।
জান্নাতের রক্ষক ‘রিদওয়ান’ কি বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত?
জান্নাতের রক্ষকের (খাজিন) নাম, রিদওয়ান (رِضوانُ) বলে ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ। তবে আলেমদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই নামটি কুরআন এবং সহীহ সুন্নাহতে সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়নি।
জান্নাতের রক্ষক ‘রিদওয়ান’ সম্পর্কে আলেমদের অভিমত:
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: রিদওয়ান কি জান্নাতের রক্ষক? এবং তাঁর নাম কোথায় উল্লেখ হয়েছে?
তারা উত্তরে বলেন,
لمشهورُ عند العُلَماءِ: أنَّ اسمَ خازِنِ الجَنَّةِ رِضْوانُ، وجاء ذِكْرُه في بعضِ الأحاديثِ التي في ثبوتِها نَظَرٌ. واللهُ أعلَمُ
“আলেমদের মাঝে প্রসিদ্ধ হল, জান্নাতের রক্ষকের নাম রিদওয়ান। কিছু হাদিসে এটি উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু সেগুলো প্রমাণিত হওয়ার ব্যাপারে পর্যালোচনা করার অবকাশ আছে।। আল্লাহু আলাম-আল্লাহই ভালো জানেন।”
[ফাতাওয়ায়ে লাজনাহ দায়িমা, দ্বিতীয় পর্ব, ২/৩৫৩]
শাইখ ইবনে উসাইমিন ফতোয়া:
বিখ্যাত আলেম শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে বলেছেন:
أمَّا رِضْوانُ فمُوَكَّلٌ بالجنَّةِ، واسمُه هذا ليس ثابتًا ثبوتًا واضِحًا كثُبوتِ مالِكٍ خازِنِ النَّارِ، لكِنَّه مشهورٌ عند أهلِ العِلمِ بهذا الاسمِ. واللهُ أعلَمُ
“তবে রিদওয়ান জান্নাতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর তাঁর এই নামটি জাহান্নামের রক্ষক মালিকের নামের সুস্পষ্ট প্রমাণের মতো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়। তবে এই নামেই তিনি আলেমদের মধ্যে সুপরিচিত। । আল্লাহু আলাম-আল্লাহই ভালো জানেন।”
[মাজমূ’ ফাতাওয়া ওয়ার রাসাইল-শাইখ আল উসাইমিন, ৩/১৬১]
উভয় ফতোয়ার সারমর্ম হলো, ‘রিদওয়ান‘ নামটি আলেম সমাজে বহুল পরিচিত ও প্রসিদ্ধ হলেও জাহান্নামের রক্ষক ‘মালিকের’ নামের মতো এর সপক্ষে সহিহ দলিলের সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। বরং কিছু হাদিসে এর উল্লেখ পাওয়া যায় যার সত্যতার ভিত্তি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
আল্লাহু আলাম।